এ ভাবেই দখল হয়ে গিয়েছে নিকাশি নালা। নিজস্ব চিত্র।
বর্ষা চলে আসবে আর ক’দিন পরেই। অতীতের জলবন্দি দশার কথা মাথায় রেখে এ বার উপনগরীর নিকাশি ব্যবস্থার হাল খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে বিধাননগর পুরসভা। আর সেই পরিদর্শনে নেমেই মাথায় হাত পুর আধিকারিকদের। তাঁরা জানাচ্ছেন, কেষ্টপুর, বাগুইআটি-সহ বিধাননগরের বিস্তীর্ণ এলাকায় স্থানীয় নিকাশি নালাগুলি দখল হয়ে গিয়েছে। নিকাশি নালা কিংবা নর্দমার উপরেই পাকা দোকানঘর তৈরি হয়ে গিয়েছে প্রায় সর্বত্র। পরিস্থিতি এমনই যে, একটু ভারী বৃষ্টি হলেই রাস্তার জমা জল নর্দমা দিয়ে বেরোতে পারবে না। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পরেই নড়েচড়ে বসেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। জবরদখলকারী ওই ব্যবসায়ীদের অন্যত্র সরে যেতে নোটিস পাঠানো হবে বলে পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে।
গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, একটু ভারী বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে বাগুইআটি, কেষ্টপুর, জ্যাংড়া, চিনার পার্ক-সহ রাজারহাট-গোপালপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা। কোনও কোনও এলাকা থেকে জল নামতে দু’-তিন দিন বা তার বেশিও লেগে যাচ্ছে। এর জন্য বিধাননগর পুর এলাকার ভিতর দিয়ে বহমান নিকাশি খালগুলির নাব্যতা কমে যাওয়া যেমন দায়ী, তেমনই দায়ী এলাকার নালা-নর্দমাগুলির জল-বহন ক্ষমতা কমে যাওয়াও। এ বারের পুরভোটের আগে তৃণমূলের ইস্তাহারে রাজারহাট অঞ্চলের নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নের উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তাই বর্ষার আগে নিকাশির সংস্কারে কোমর বেঁধে নামছে পুরসভা।
পুর আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, দু’বার এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। এবং সেই পরিদর্শনের সময়ে দেখা গিয়েছে, বহু জায়গাতেই নর্দমার উপরে দোকানঘর তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আনাজ থেকে খাবার, ব্যবসা চলছে রমরমিয়ে। পুরকর্তারা গিয়ে দেখেন, ওই সমস্ত এলাকায় পূর্ত দফতরের জমি এবং পুরসভার নর্দমা, সবই দখল হয়ে গিয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, প্রায় তিন বছর আগেও এক বার এই ধরনের পরিদর্শন হয়েছিল। সে বারও নিকাশি নালা দখল করে থাকা দোকানদারদের নোটিস দেওয়া হয়েছিল সরে যেতে। কিন্তু তার পরে তাঁদের উচ্ছেদ করতে আরও কোনও চেষ্টা করা হয়নি বলে অভিযোগ। মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীর অবশ্য দাবি, ‘‘আমরা প্রতি বছরই নিকাশির হাল খতিয়ে দেখে সংস্কারের কাজ করি। এ বারও সেই কাজ হবে।’’ জবরদখলকারীদের সরানো নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি তিনি।
এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘শুধু নর্দমার উপরে দোকান তৈরিই নয়, আনাজ, মাছ কিংবা খাবারের ব্যবসায়ীদের অনেকেই নর্দমায় নিয়মিত ভাবে আবর্জনা ফেলছেন। তাতেও নর্দমা বুজে যাচ্ছে। এ বার নোটিস পাওয়ার পরেও ওই দোকানিরা না সরলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। কারণ, রাজারহাটের নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়নের কাজে ঢিলেমি চাইছেন না পুর কর্তৃপক্ষ।’’
বিধাননগর পুরসভার নিকাশি বিভাগের মেয়র পারিষদ দেবরাজ চক্রবর্তী বললেন, ‘‘সেচ দফতর খাল সংস্কারের কাজ করছে ঠিকই, কিন্তু খালে যে পথে নিকাশির জল পৌঁছয়, সেই ব্যবস্থাটা আগে ঠিক রাখা দরকার। তাই সেগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, তা জানতেই এলাকা-ভিত্তিক ভাবে নিকাশি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নর্দমার উপরিভাগ ঢেকে দিয়ে যে সব দোকান হয়েছে, সেগুলি সরাতে মালিকদের নোটিসও দেওয়া হবে।’’