পুকুরে জমে আবর্জনা। বৃহস্পতিবার, বেহালার পর্ণশ্রীতে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
এক বছর আগেও বেহালায় নিজের ওয়ার্ডে ডেঙ্গি প্রতিরোধে ব্লিচিং পাউডার ছড়াতে দেখা গিয়েছিল মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে। সজাগ ছিলেন ওয়ার্ডের পরিচ্ছন্নতা নিয়েও। কিন্তু গত নভেম্বরে পর্ণশ্রীর বাড়ি ছেড়েছেন তিনি। তা নিয়ে যতই জলঘোলা হোক, এলাকার মানুষের তেমন ক্ষোভ চোখে পড়েনি এতদিন। বৃহস্পতিবার জ্বরে আক্রান্ত এক বাসিন্দার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ধৈর্যের বাধ ভাঙল কলকাতা পুরসভার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের। বহু বাসিন্দারই আক্ষেপ, মেয়র চলে যাওয়ার পর থেকে ঠিক ভাবে দেখভালই হয় না এলাকার।
স্থানীয়দের বক্তব্য, আগে সব সময়েই সাফ থাকত বেহালা পর্ণশ্রীর মহারানি ইন্দিরাদেবী রোড চত্বর। কিন্তু রাস্তায় ব্লিচিং পাউডার ছ়়ড়ানো কিংবা পুকুর সংস্কারের কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। আবর্জনার স্তূপে ভরে গিয়েছে রাস্তা। ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের জিনিসে জল জমে আছে। এর মধ্যেই বাড়ছে জ্বরের প্রকোপ। এ দিন যেই প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে, তাঁর রক্ত পরীক্ষায় এনএস ১ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল। অভিযোগ, তার পরেও এলাকায় কাউন্সিলরের দেখা পাওয়া যায়নি। মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখাও করেননি তিনি। এখন তাই ওই পাড়ার অভিযোগ, স্বয়ং মেয়রই কাউন্সিলর হওয়ায় তাদের বিপদ বাড়ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় একাধিক পুকুর আছে। কিন্তু সেগুলি সংস্কার হয় না। মশানিধনে তেল এবং ব্লিচিং পাউডার ছড়ানোর কাজও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ। ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভার নির্দেশ আছে, জল জমছে কি না, তা বাড়ির ছাদে উঠে পর্যবেক্ষণ করবেন পুরকর্মীরা। কোনও বাড়িতে কেউ ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হলে সেখানে গিয়ে মশানিধনের ধোঁয়াও দিতে হবে তাঁদের। পথে নামতে হবে কাউন্সিলরকেও।
আরও পড়ুন: এ বার মেয়রের ওয়ার্ডেই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু!
কিন্তু ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এ সব কিছুই তাঁরা দেখেননি। এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘এ পাড়ায় মেয়রকে শেষ কবে দেখেছি, মনে নেই। পুরসভা কোনও কাজই করে না। অভিযোগ কোথায় জানাব, তা-ও জানি না।’’ আর এক বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘কাউন্সিলরকে দরকার হলে আর এক জনের মাধ্যমে নথি পাঠাতে হয়। এত ক্ষমতাবান মানুষের ওয়ার্ডের বাসিন্দা হয়েই বুঝি ভোগান্তি বাড়ছে। অন্য জায়গায় তো বাসিন্দারা সরাসরিই কাউন্সিলরের সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগ পান।’’
মৃত প্রৌঢ়ের পরিবারের আরও একাধিক সদস্য ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই পরিবারের অভিযোগ, বাড়িতে গিয়ে মশা মারার ব্যবস্থা তো দূর অস্ত্, পুরসভার তরফে বাড়ি পরিদর্শনেও কেউ যাননি।
কিন্তু পুরসভার ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, গত মার্চ মাস থেকে সপ্তাহে দু’দিন করে ওয়ার্ডে ঘোরার কথা কাউন্সিলরের। কিন্তু অভিযোগ, কাউন্সিলরকে দেখাই যায়নি সেই কাজে। কাউন্সিলর তথা মেয়র শোভনবাবু অবশ্য নিজের ওয়ার্ডের অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। মুখে কুলুপ এঁটেছে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরও।