—নিজস্ব চিত্র।
আবারও থানা থেকে ডেঙ্গির মশার লার্ভা পাওয়া গেল। শনিবার বিধাননগর (দক্ষিণ) থানা থেকে ডেঙ্গির মশার লার্ভা পেল বিধাননগর পুর নিগম। পুর এলাকা আলাদা হলেও একই বিধাননগর কমিশনারেটের অধীনে এই নিয়ে পরপর দু’টি ঘটনা ঘটল। গত মাসে ওই কমিশনারেটেরই লেকটাউন থানা এলাকা থেকে ডেঙ্গির মশার লার্ভা পাওয়া যায়। শনিবারের ঘটনায় তাই দেখা যাচ্ছে যে, শুধু সাধারণ নাগরিকদের ঘর-বাড়িই নয়, ডেঙ্গির মশার আঁতুড় ঘর রয়েছে সরকারি জায়গাতেও।
এ দিন বিধাননগর পুর নিগমের স্বাস্থ্য বিভাগের মেয়র পারিষদ প্রণয় রায় পুরকর্মীদের নিয়ে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানা, থানার পাশের একটি নির্মীয়মাণ আবাসন এবং সল্টলেকের বিধান আবাসনে হানা দেন। তিনটি জায়গার মধ্যে বিধাননগর (দক্ষিণ) থানা থেকে লার্ভা পাওয়া গিয়েছে বলে জানান মেয়র পারিষদ প্রণয়বাবু।
তিনি জানান, ওই থানাটি কার্যত মশার আঁতুড় ঘরে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘লার্ভা অল্প পাওয়া গিয়েছে। তবে লার্ভা থেকে পূর্ণাঙ্গ মশা তৈরির জন্য যে পরিবেশের প্রয়োজন, তার সবটাই মজুত
রয়েছে সেখানে।’’
বিধাননগর (দক্ষিণ) থানায় দীর্ঘদিন ধরেই একটি পরিত্যক্ত কুয়ো রয়েছে। থানা চত্বরে পরিত্যক্ত গাড়ি, টায়ার-সহ বিভিন্ন জায়গায় জল জমা দেখতে পান পুরকর্মীরা। ওই থানারই কয়েক জন পুলিশকর্মী ইতিমধ্যেই অজানা জ্বরে আক্রান্ত বলেই জানতে পেরেছে পুর নিগম।
পরিস্থিতি দেখে তৎক্ষনাৎ ওই সব জায়গায় ধোঁয়া আর মশার তেল দেওয়া হয়। মেয়র পারিষদ বলেন, ‘‘পুলিশকে বলা হয়েছে, অবিলম্বে ওই কুয়োটি বুঁজিয়ে ফেলতে।
একই সঙ্গে ওই সব পরিত্যক্ত
গাড়ি, টায়ারের ভিতরের জল পরিষ্কার করতে।’’
কেন এই অবস্থা? থানার ভিতরের ডেঙ্গির মশা তো শুধু পুলিশকে নয়, থানায় আসা সাধারণ নাগরিকদেরও কামড়াবে। তবে কি সরকারি স্তরে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনার প্রচার পুলিশ পর্যন্ত এসেই পৌঁছোচ্ছে না?
বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান তথা মুখপাত্র সন্তোষ পাণ্ডের দাবি, ‘‘পুলিশ সচেতন। বিভিন্ন থানার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাফাইয়ের কাজও চলছে। পুরনিগমের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই সব কাজ হচ্ছে।’’
এ দিন অবশ্য থানার পাশের একটি বেসরকারি নির্মীয়মাণ আবাসন আর সল্টলেকের বিধান আবাসনেও যান পুরকর্মীরা। বেসরকারি ওই আবাসনে জমা জল দেখা গেলেও সেখানে অবশ্য মশার লার্ভা মেলেনি। মেয়র পারিষদ প্রণয়বাবু জানান, বিধান আবাসন থেকে তাঁরা খবর পেয়েছিলেন যে, আবাসন চত্বরে কিছু নির্মাণকাজ চলছে। সেখানে জল জমে আছে। তাই সেখানেও পুরকর্মীরা গিয়ে মশার তেল আর ধোঁয়া দিয়ে এসেছেন। সেখানে আর যাতে জল না জমে, তার জন্য সকলকে সতর্ক করা হয়েছে।
এ দিন বেঙ্গল কেমিক্যালস এবং কাছেই একটি বেসরকারি হাসপাতাল চত্বরেও ডেঙ্গির মশার লার্ভা মিলেছে। কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস জানান, এ দিন সকালে বেঙ্গল কেমিক্যালসের ভিতরে যান পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা। সেখানে গিয়ে ঘোড়ার আস্তাবলে খাবারের পাত্রে ডেঙ্গি মশার লার্ভা সংগ্রহ করেন তাঁরা। এ ছাড়াও বেঙ্গল কেমিক্যালসের ভিতরে আগাছার ভিতর বন্ধু মশা (টক্সোরিঙ্কাইটিস)-র কিছু লার্ভা সংগ্রহ করা হয়। পুরকর্তাদের দাবি, আগেই বেঙ্গল কেমিক্যালসের ভিতরে নিকাশি নালায় গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে। ওই মাছ ছাড়ায় মশার প্রার্দুভাব ৯০ শতাংশ কমেছে বলে দাবি করেন দেবাশিসবাবু। একই সঙ্গে এ দিন কাছেই একটি বেসরকারি হাসপাতালের নির্মীয়মাণ বিল্ডিংয়ে পড়ে থাকা মার্বেলের ফাঁকে জল জমে কয়েকটি এডিস ইজিপ্টাই-এর লার্ভার সন্ধান পান পুর স্বাস্থ্যকর্তারা। একই সঙ্গে হাসপাতালের নিকাশি নালায় বেশ কয়েকটি কিউলেক্স মশার লার্ভাও মিলেছে।