স্প্রে করা হচ্ছে জমে থাকা আবর্জনায়। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
কোনও এলাকায় মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়লেই, বাসিন্দাদের সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে প্রশাসন। সচেতনতা বাড়াতে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে প্রচারেরও আয়োজন হয়। কিন্তু প্রশাসনই কতটা সচেতন? বুধবার বিধাননগর পুরসভার কর্মীরা মশার উত্স খোঁজা ও নিয়ন্ত্রণের অভিযান চালানোর সময় খোদ স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে এই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ পাঁচ নম্বর সেক্টরে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের মূল ভবন চত্বরেই মিলেছে মশার লার্ভা। বিষয়টি জানাজানি হতেই সুর বদলে গেল অভিযানকারীদের। তবে তাঁদের দাবি, বেশি নয়। দু’-একটি জায়গায় লার্ভা মিলেছে। পুরসভা সূত্রে খবর, মিলেছে এডিস মশার লার্ভাও।
তবে এটা শুধু স্বাস্থ্য দফতরেরই ছবি নয়। হুঁশ যে বহু জায়গাতেই ফেরেনি, তার আরও প্রমাণ মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি বিধাননগর দক্ষিণ থানায় অভিযানে গিয়েও একই ছবি দেখতে পেলেন বিধাননগর পুর-প্রতিনিধিরা। যদিও সেখানেই উদাহরণ তৈরি করতে পেরেছে সল্টলেকের বেশ কিছু স্কুল। এ দিন একটি স্কুলে গিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন পুরসভার প্রতিনিধিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, মশা নিয়ন্ত্রণের সব রকম প্রস্তুতি নিয়েছে ওই স্কুল। এক প্রতিনিধির কথায়, ‘‘বসতবাড়ি থেকে দোকান-বাজার, অফিসেও যদি এমন সচেতনতা দেখা যেত, তবে ডেঙ্গি প্রতিরোধে অনেকটাই সফল হওয়া যেত।’’
এ দিন সকালে বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) প্রণয় রায়ের নেতৃত্বে একটি দল স্বাস্থ্য ভবনে যায়। সেখানে আবর্জনার স্তূপে জমে থাকা জলে লার্ভার সন্ধান পান পুরকর্মীরা। স্বাস্থ্য ভবন চত্বরের আরও কিছু জায়গার অপরিচ্ছন্ন ছবিটা স্পষ্ট ধরা পড়ে অভিযানে। পড়ে থাকা টায়ারের মধ্যে জমা জলেও লার্ভার সন্ধান মিলেছে।
স্বাস্থ্য ভবনের পতঙ্গবাহিত রোগ প্রতিরোধ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক কমলকৃষ্ণ পতি বলেন, ‘‘ডাক্তারদের কাজ রোগ নির্ণয় এবং তা প্রতিরোধ করা। স্বাস্থ্য ভবন চত্বরে লার্ভা ও আবর্জনা পরিষ্কারের দায়িত্ব পুরসভার। তারা সেই কাজ ঠিক মতো করেনি বলেই এই অবস্থা।’’ পুরসভার তরফে জানানো হয়, খুব তাড়াতাড়িই পরিষ্কার করা হবে। পরে আবার মেয়র পারিষদ প্রণয় রায় বলেন, ‘‘দু’একটি জায়গায় লার্ভা মিলেছে। সেগুলি ধ্বংস করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য ভবনের অবস্থা নিয়ে যে ভাবে বলা হচ্ছে, ছবিটা ততটা খারাপ নয়।’’
এর পরে গন্তব্যস্থল বিধাননগর দক্ষিণ থানা। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বের ওই থানা এলাকায় বেশ কয়েক বছর ধরেই ঝোপজঙ্গলে, বাজেয়াপ্ত করা বহু গাড়িতে জমে থাকা জলে লার্ভা মিলেছে। এ বারেও ছবিটা বদলায়নি। গত বছরগুলিতেও একাধিক পুলিশ কর্তা সহ বেশ কয়েক জন কর্মী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ দিনও অভিযানে পুরকর্মীরা একই ছবি দেখতে পেলেন। একাধিক জায়গায় মিলেছে মশার লার্ভা। পুলিশের একাংশের বক্তব্য, ফের মশা বেড়েছে। থানা চত্বরে লার্ভা ধ্বংস করে ফগিং করা হয়েছে। বিধাননগরের এক শীর্ষ পুলিশ কর্তা জানান, দুটি থানায় নিকাশির হাল খারাপ। সেগুলি মেরামত প্রক্রিয়া
শুরু হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মশাবাহিত রোগ বাড়লেই বাসিন্দাদের সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেটা অনেক ক্ষেত্রে ঠিক। তবে প্রশাসনের একাংশও সচেতন নন। বিধাননগরে ২ ও ৩ নম্বর সেক্টরের ধার দিয়ে বয়ে চলা ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলে যত দিন না জলপ্রবাহ বাড়ছে, তত দিন মশার দাপট কমবে না বলেই দাবি বাসিন্দাদের।
এ প্রসঙ্গে প্রণয় রায় বলেন, ‘‘জুন মাসের পর থেকে ছবি বদলেছে। সরকারি-বেসরকারি সর্বত্র অভিযান চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোরও চেষ্টা চলছে। ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেলে জলপ্রবাহ বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা হবে।’’