সল্টলেক

অপরাধ বাড়ার দায় বাসিন্দাদেরও

এএইচ ব্লকের একটি বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে ভাড়া থাকতেন কয়েক জন যুবক। শনিবার সেই বাড়িতেই এক কিশোরীর শ্লীলতাহানি ঘটে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় গ্রেফতারও হয়েছেন এক যুবক।

Advertisement

কাজল গুপ্ত

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৬ ০০:০৮
Share:

এএইচ ব্লকের একটি বাড়িতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে ভাড়া থাকতেন কয়েক জন যুবক। শনিবার সেই বাড়িতেই এক কিশোরীর শ্লীলতাহানি ঘটে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় গ্রেফতারও হয়েছেন এক যুবক।

Advertisement

এমন ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। সল্টলেকে বিভিন্ন গেস্ট হাউস, পেয়িং গেস্ট রাখা হয় এমন বাড়ির একাংশের ক্ষেত্রে এ ধরনের একাধিক ঘটনা ঘটছে। তবে শনিবারের ঘটনার পরে ফের প্রশ্ন উঠেছে বাসিন্দাদের সচেতনতা নিয়ে।

পুলিশ ও পুরপ্রশাসনের অভিযোগ, বার বার বাসিন্দাদের আবেদন জানানো হচ্ছে যে, বাড়ি ভাড়া দিলে অথবা পেয়িং গেস্ট রাখলে পুরপ্রশাসন বা পুলিশকে সেই তথ্য দিতে হবে। কিন্তু অভিযোগ, বাসিন্দাদের একাংশ সেই আবেদনে সাড়াই দিচ্ছেন না।

Advertisement

অথচ কয়েক বছর আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সল্টলেকের গেস্ট হাউসে, পেয়িং গেস্ট হিসেবে বা বাড়ি ভাড়া নিয়ে যে সব বহিরাগতেরা রয়েছেন তাঁদের বিষয়ে ডেটাবেস তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই অনুয়ায়ী ডেটাবেস তৈরির কাজ আগেই শুরু করেছে পুরপ্রশাসন এবং পুলিশ। সে ক্ষেত্রে কত সংখ্যক বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে প্রাথমিক তথ্য এসেছে প্রশাসনের কাছে। কিন্তু সম্পূর্ণ তথ্য মিলছে না বলেই দাবি প্রশাসনের।

সল্টলেক এবং পাঁচ নম্বর সেক্টরে তথ্যপ্রযুক্তি তালুক এবং বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে ভিন্‌ রাজ্য বা জেলার লোকজন কাজ করেন। সেই সূত্রে সল্টলেক এলাকায় বাড়ি ভাড়া দেওয়া বা পেয়িং গেস্ট হিসেবে অথবা মেস হিসেবে ভাড়া দেওয়ার চল বেড়েছে। শনিবার যে ব্লকে ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার খোদ বিধাননগর পুরনিগমের ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা ৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান অনিতা মণ্ডল বলেন, ‘‘ভাড়াটেদের তথ্য প্রশাসনকে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাসিন্দাদের আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তবে পুরপ্রশাসনেও বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করব।’’ শুধু এএইচ ব্লকের ঘটনাই নয়, একাধিক ব্লকে যেখানে পেয়িং গেস্ট রাখা হয়, সেখানে অনেক ক্ষেত্রে চুরি, কটূক্তি-সহ নানা অসামাজিক কাজের অভিযোগ আসে।

কিন্তু কেন একাংশের বাসিন্দারা তথ্য গোপন করছেন? এএইচ ব্লকের এক বাসিন্দা তরুণ ঘোষ। তাঁর বাড়িতেও পেয়িং গেস্ট রয়েছে। তিনি অবশ্য সেই তথ্য পুরপ্রশাসন এবং পুলিশকে দিয়েছেন। কিন্তু বাসিন্দাদের একাংশের গাফিলতি নিয়ে জানালেন, সম্পত্তি কর বাড়বে বলে অনেকে ভাড়াটের তথ্য গোপন করেন। কিন্তু তার পিছনেও কারণ আছে। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মীরা বছরভর ভাড়া থাকেন এমনটা নয়। অনেক সময়ে ৩-৬ মাস থাকার পরে চলে যান তাঁরা। সে ক্ষেত্রে বছরের অনেক সময়ে বাড়ি ফাঁকাই থেকে যায়। অথচ পুরসভাকে জানালে সারা বছরের জন্যই বাড়বে সম্পত্তিকর। সে কারণেও অনেকে জানাতে চান না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘যাঁরা ভাড়া নিতে আসছেন, তাঁরা তথ্য দিতে রাজি হচ্ছেন না। বরং তথ্য দেওয়ার কথা বললে তাঁরা বাড়ি ভাড়া নিতে চান না।’’

বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘বাড়ি ভাড়া দিলে প্রশাসনকে জানাতেই হবে। কর যাতে না বাড়ে সে কথা ভেবে সম্ভাব্য বিপদ নিয়ে ভাবছেন না অনেকেই। সচেতনতা বাড়াতে জোর দিতে হবে।’’

বিধাননগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেবাশিস ধর বলেন, ‘‘সচেতনতা বাড়াতে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে। নিয়মিত ব্লক কমিটি কিংবা অ্যাসোসিয়েশনগুলিকে নিয়ে বৈঠকও করা হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও বাসিন্দাদের একাংশ তথ্য সরবরাহে সহযোগিতা করছেন না।’’ কিন্তু কোনও বাসিন্দা তথ্য না জানালে পুলিশের পক্ষেও আবেদন জানানো ছাড়া জোর করার আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পথ নেই বলেই মনে করছেন পুলিশ প্রশাসনের একাংশ। বরং পুরপ্রশাসনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ করতে পারে বলেই তাঁদের অভিমত।

বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত বলেন, ‘‘অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে ডেটাবেস তৈরির কাজ হয়েছে। কিন্তু অনেকেই গেস্টহাউস বা পেয়িং গেস্ট রাখার বিষয়টি গোপন করছেন। সেই বিষয়ে পদক্ষেপ করার পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী বিধি জারি থাকায় এখনই তা কার্যকরা করা যাবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement