দু’টি শব্দের সূত্রে মিলল বাড়ির খোঁজ

দেওয়ালে ঝোলানো একটি বোর্ড। মুখে কিছু না বলে ওই বোর্ডে বাবার নামের সঙ্গে চৌসা এবং সহর্ষ শব্দ দু’টি লিখেছিলেন এক ভবঘুরে।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ০২:১৫
Share:

ফেরা: পরিবারের সঙ্গে রণজিৎ। নিজস্ব চিত্র

দেওয়ালে ঝোলানো একটি বোর্ড। মুখে কিছু না বলে ওই বোর্ডে বাবার নামের সঙ্গে চৌসা এবং সহর্ষ শব্দ দু’টি লিখেছিলেন এক ভবঘুরে। তার সূত্র ধরেই সাড়ে তিন বছর আগে বিহারের মাধেপুরা থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ওই মনোরোগীকে পরিবারের হাতে ফিরিয়ে দিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের নাম রণজিৎ মেহেরা। প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বিহারের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার বিহারের মাধেপুরা থেকে কলকাতায় আসেন রণজিতের বাবা কালেশ্বর মেহেরা এবং আরও দু’জন। হেস্টিংস থানায় ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা রণজিৎকে তাঁর বাবার হাতে তুলে দেন। রাতেই ছেলেকে নিয়ে বিহারে ফিরে যান কালেশ্বর।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং পুলিশ সূত্রের খবর, গত অক্টোবর মাসে অবিন্যস্ত চুল, ছেঁড়া মলিন পোশাক, মুখ ভর্তি দাড়ি— এমন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছিল রণজিৎকে। ভবঘুরে অবস্থায় হেস্টিংস এলাকায় তাঁকে খুঁজে পেয়েছিলেন ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার ডে কেয়ার সেন্টারের প্রতিনিধিরা। হেস্টিংস থানা চত্বরে থাকা ডে কেয়ার সেন্টারটি চলে কলকাতা পুলিশের সহযোগিতায়। যাঁদের মানসিক সমস্যা রয়েছে এবং যাঁরা ভবঘুরে, তাঁদের ওই সেন্টারে রেখে দু’বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন সেখানকার কর্মীরা। পাশাপাশি চলে কাউন্সেলিং।

Advertisement

সেন্টারের কর্মীরা জানিয়েছেন, উদ্ধারের পরে সেখানেই চলত রণজিতের দেখভাল। লাগাতার তাঁর কাউন্সেলিং করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিরা। প্রথম দিকে নিজের নাম ছাড়া কিছুই বলতেন না ওই যুবক। বাড়ির কথা বারবার জিজ্ঞাসা করায় জানুয়ারি মাসে এক বার সেন্টার ছেড়ে চলে যান। ফেব্রুয়ারিতে আবার ফিরে আসেন। তখন অবশ্য তাঁর অনেক ভদ্রস্থ চেহারা। ফেরার পরে সেন্টারের কয়েক জনের সঙ্গে ভাব জমান রণজিৎ। তবে নিজের কথা তেমন বলতেন না।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধিদের দাবি, ঘটনার মোড় ঘুরে যায় সপ্তাহ দুই আগে। সে সময়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলেন ডে কেয়ারে থাকা এক যুবক। তাঁকে কয়েক দিন দেখতে না পেয়ে সেন্টারের ইন-চার্জ সুপর্ণা ভট্টাচার্যের কাছে রণজিৎ জানতে চান, ওই যুবক কোথায়। সুপর্ণার কথায়, ‘‘আমরা ওঁকে বলি, ছেলেটি বাড়ি চলে গিয়েছে। তখন রণজিৎ বলেন, ‘হামকো ভি ঘর ভেজ দিজিয়ে।’ আমরা তখন ওঁর ঠিকানা জিজ্ঞাসা করি। কিন্তু রণজিৎ কিছু বলতে পারছিলেন না। শেষে একটি বোর্ডে চৌসা এবং সহর্ষ শব্দ দু’টি লেখেন। পরে লেখেন বাবার নাম।’’ কিন্তু ইন্টারনেট ঘেঁটে সেন্টারের প্রতিনিধিরা দেখেন, বিহারের ওই দু’টি জায়গার মধ্যে দূরত্ব অনেক। ফলে ফের সমস্যা হয়। তখন তাঁরা যোগাযোগ করেন ওই দু’জায়গার পুলিশের সঙ্গে।

সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে চৌসা ও সহর্ষ থেকে কোনও সাড়া মেলেনি। শেষে গত সপ্তাহে হেস্টিংস থানার তরফে ওই দুই থানায় যোগাযোগ করা হয়। পাঠানো হয় রণজিতের ছবিও। সোমবার ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে চৌসা থানা। ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা বলানো হয় রণজিতের। তাঁর পরিবার জানিয়েছে, চিকিৎসা চলাকালীন ২০১৬ সালে নিখোঁজ হয়ে যান রণজিৎ। তার পর থেকে খোঁজ মেলেনি দুই সন্তানের বাবা ওই যুবকের।

বৃহস্পতিবার ছেলেকে ফিরে পেয়ে চোখের জল ফেলেছেন কালেশ্বর-সহ বাকিরা। তবে চুপচাপই ছিলেন রণজিৎ। বাসে ওঠার আগে ডে কেয়ার সেন্টারের ইন-চার্জের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে শুধু বলেছেন, ‘‘আমি যাচ্ছি।’’ দূরে তখন দাঁড়িয়ে পুলিশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement