হাতে হাত: বসন্ত উৎসবে নৃত্য পরিবেশন মানসিক রোগীদের। রবিবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কারও হাত সর্বক্ষণ কেঁপে চলেছে। কারও চোখ স্থির হয়ে রয়েছে এক দিকে। বেশির ভাগই স্কিৎজ়োফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। এমন মহিলাও রয়েছেন, যাঁকে তাড়িয়ে দিয়ে ছেলের ফের বিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন শাশুড়ি। কোলের ছেলেকে নিয়েবাবার কাছে গিয়ে জুটেছে লাঞ্ছনা। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে সেই মেয়েকে বেধড়ক মারধর করেছেন বাবাও। ফলে এক সময়ে সেই আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে এসে উদ্ভ্রান্তের মতো তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে শহরের রাস্তায় রাস্তায়। অবশেষে এক সময়ে হারিয়ে ফেলেছেন মানসিক ভারসাম্য!
মানসিক রোগে ভুগছেন, এমন মানুষদের নিয়েই রবিবার বিকেলে এক বসন্ত উৎসবের আয়োজন করেছিল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এ দিন ছিল তাদের ১৫তম বার্ষিক অনুষ্ঠান। হো চি মিন সরণির এক প্রেক্ষাগৃহে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত আমেরিকার কনসাল জেনারেল মেলিন্ডা পাভেক, চলচ্চিত্র এবং বিনোদন জগতের বেশ কিছু বিশিষ্টজন, কয়েকজন পুরপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। তাঁদের সামনেই সেখানে অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন ওই সংস্থার হোমে আশ্রয় পাওয়া মানসিক রোগীরা। দেখানো হয় মানসিক সমস্যায় ভোগাগৃহহীনদের নিয়ে একটি তথ্যচিত্রও। অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা তথা ‘ঈশ্বর সংকল্প’ সংস্থার সেক্রেটারি সর্বাণী দাস রায় বলেন, "এটা শুধু নিছক অনুষ্ঠান নয়, মানসিক রোগীদের কী ভাবে সমাজের মূল স্রোতে ফেরানো যায়, তা নিয়ে যে নিরলস কাজ চলছে, তারই একটি নিদর্শন।"
সংস্থার আর এক সদস্য লাবণী রায় জানান, ২০০৭ সালে শুরু হওয়া এই সংস্থার লক্ষ্য ভবঘুরে, মানসিক ভারসাম্যহীনদের কাছে পৌঁছে তাঁদের চিকিৎসা এবং উন্নত জীবনযাপনের ব্যবস্থা করা। লাবণী জানান, তাঁদের একটি প্রকল্প সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা কুড়িয়েছে। ২০১০ সালে চেতলায় সরকারি সাহায্যে প্রথম মহিলাদের জন্য শেল্টার হোম তৈরি করে এই সংস্থা। ২০১২ থেকে কলকাতা পুরসভার সাহায্যে শহরের আটটি ওয়ার্ডেআর্বান মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রামও শুরু হয়। রাস্তায় থাকা মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাদের উপরেই হেনস্থা বেশি হয়। রাতে তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার ভাবনা থেকেই হোমের শুরু। ২০১৫ সালে ভবানীপুরেও ছেলেদের শেল্টার হোম তৈরি করা হয় সরকারি সাহায্যে। লাবণী বলেন, ‘‘এত বছরে প্রচুর মানুষকে সুস্থ করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু সকলের ফেরার মতো পরিস্থিতি থাকে না। সুস্থ হওয়ার পরে তাঁরা কী করবেন, সেই ভাবনা থেকে ২০১৬ সালে ভাঙড়ের উত্তর কাশীপুরে নয়াগ্রাম প্রকল্পের সূচনা করি। সেখানকার হোমে থেকে অনেকে চাষ, আনাজ ফলানোর কাজ করেন। বাকিটা আমরা দেখি।যাঁরা চাষবাস করতে পারেন না, তাঁদের জন্য বিকল্প হিসাবে চেতলায় একটা ক্যাফেও তৈরি করা হয়েছে। পাশে দাঁড়ালে এঁরাওযে সমাজেফিরতে পারেন, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে পারেন—এই বার্তাটাই দিতে চাই।"