স্নেহা (বাঁ দিকে) ও অনুষ্কা। নিজস্ব চিত্র।
রোল নম্বর এগারোর সঙ্গে মুখোমুখি কখনও দেখা হয়নি তাঁর। মতিঝিল গার্লস হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণির সি সেকশনের ক্লাস টিচার পায়েল হাজরা ভেবেছিলেন, স্কুল আবার খোলার পরে রোল নম্বর এগারোর সঙ্গে দেখা হলেই হোমওয়ার্ক নিয়ে তার প্রশংসা করবেন তিনি। কিন্তু সেই দেখা আর কোনও দিনও হবে না। কারণ, সেই রোল নম্বর ছিল স্নেহা বণিকের। জমা জলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে যার জীবন চিরতরে শেষ হয়ে গিয়েছে।
প্রিয় ছাত্রীর মৃত্যু কিছুতেই মানতে পারছেন না পায়েল। বললেন, ‘‘হোয়াটসঅ্যাপে হোমওয়ার্ক পাঠাতে কখনও দেরি করত না স্নেহা। অনেককেই তাড়া দিতে হয়। ওকে দিতে হত না। খুবই মনোযোগী ছাত্রী ছিল।’’
স্নেহা যখন পঞ্চম শ্রেণিতে, তখন থেকেই করোনার জন্য বন্ধ স্কুল। তাই মুখোমুখি দেখা হয়নি। পায়েল বললেন, ‘‘এর পরে সকলের সঙ্গে দেখা হলেও স্নেহার সঙ্গে আর হবে না।’’ ওই স্কুলের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সুলগ্না চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘মনে হচ্ছে যেন
নিজের সন্তানকে হারালাম। বাতিস্তম্ভগুলির রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো হয় না কেন?’’
দমদমের অরবিন্দ বিদ্যামন্দিরে ইংরেজি মাধ্যম বিভাগের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী অনুষ্কা নন্দীর সুন্দর হাতের লেখার কথা খুব মনে পড়ছে প্রধান শিক্ষক অসীমকুমার নন্দের। তিনি বলেন, ‘‘যে দিন ওই ঘটনা ঘটল, তার এক দিন আগেই ওর বাবা স্কুলে এসে মিড-ডে মিলের সামগ্রী নিয়ে যান, আর অনুষ্কার অ্যাক্টিভিটি টাস্ক জমা দিয়ে যান। পড়াশোনায় খুব ভাল ছিল মেয়েটা।’’
পড়ুয়াদের খোঁজ নিতে মাসকয়েক আগে তাদের বাড়িতে গিয়েছিলেন শিক্ষকেরা। অসীমবাবু বলেন, ‘‘তখন অনুষ্কার বাড়িও গিয়েছিলাম। বলেছিলাম, স্কুল আবার খুলবে। দেখা হবে। সেটাই যে শেষ দেখা, তা কি আর জানতাম!’’