আমার পাড়া

আন্তরিকতা আজও অটুট

একটি নাতিপ্রশস্ত রাস্তা যার দু’দিকে সার দিয়ে বাড়ি। পরিচিত কিছু মুখ, স্মরণীয় নানা ঘটনা আর নিশ্চিন্ত এক নিরাপত্তা। এই নিয়েই আমার পাড়ার ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় স্ট্রিট। এক দিকে সিঁথির মোড়, অন্য দিকে ডানলপের মোড়।

Advertisement

সন্দীপকুমার দাঁ

ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় স্ট্রিট শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ১৫:০০
Share:

‘হোম সুইট হোম!’ পাড়া বলতেই প্রথমে এটাই তো মনে আসে। একটি নাতিপ্রশস্ত রাস্তা যার দু’দিকে সার দিয়ে বাড়ি। পরিচিত কিছু মুখ, স্মরণীয় নানা ঘটনা আর নিশ্চিন্ত এক নিরাপত্তা। এই নিয়েই আমার পাড়ার ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায় স্ট্রিট। এক দিকে সিঁথির মোড়, অন্য দিকে ডানলপের মোড়। বিটি রোড থেকে শুরু হয়ে পাড়াটা এক দিকে ন’পাড়া, অন্য দিকে বনহুগলির দিকে গিয়েছে।

Advertisement

এ পাড়াটা মোটেই আকর্ষণীয় নয়। তবু প্রথম দেখাতেই ভাল লেগে গিয়েছিল এর নির্ঝঞ্ঝাট, শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য। প্রতিবেশীরাও মিশুকে। এখানে চাঁদার জুলুম, দলাদলি, রাজনৈতিক চাপ কিংবা কোনও উটকো ঝামেলা নেই। এখানে এসে পেয়েছি কিছু সহৃদয়, পড়শিকে।

বাড়ির পাশাপাশি এখানে ফ্ল্যাটের সংখ্যাও এখানে কিন্তু কম নয়। তবু এখানকার জীবনযাত্রাকে গ্রাস করেনি আত্মকেন্দ্রিকতা। উত্তর কলকাতার পাড়া সংস্কৃতি এখনও পূর্ণমাত্রায় রয়েছে এখানে। একে-অপরের সঙ্গে যোগাযোগটা আজও পুরো দমে।

Advertisement

বিটি রোডের ধার ঘেঁষা পাড়া বলেই এখানে ঘুম ভাঙে যানবাহনের তীব্র আওয়াজে। আগে পাড়ার দুর্গামণ্ডপে আড্ডা দিতে দেখা যেত পাড়ার অনেককেই। এখন অবশ্য অবসর কমেছে, ফলে আড্ডার চলও কমে গিয়েছে। সময়ের প্রভাবে এখন আর চোখে পড়ে না কোনও রক। রবিবার কিংবা ছুটির দিনে কিছু দোকানের সামনে আর রাস্তায় পরিচিতদের আড্ডা দিতে দেখা যায়। নানা ব্যাপারে পাড়ার ছেলেদের উৎসাহের অভাব নেই। প্রয়োজনে বিপদ-আপদে কিংবা সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁদের পাশে পাওয়া যায়।

পাড়ার স্থায়ী দুর্গামণ্ডপে খুব একটা জাঁকজমক না হলেও আন্তরিক ভাবে পুজো হয়। পাড়ার মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখে ভাল লাগে। মাইক বাজলেও তার শব্দ কখনও অসহনীয় হয়ে ওঠে না। পাড়ার বিজয়া সম্মিলনীতে ছোটরা নাটক, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে। পাড়ার কালীপুজোর চাঁদার টাকা থেকে হয় রক্তদান শিবির। ইদানীং জগদ্ধাত্রী পুজোও হচ্ছে। রবীন্দ্র-নজরুলজয়ন্তীর পাশপাশি বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, হেল্‌থ ক্যাম্প, নাট্য উৎসব কিংবা ২৩ জানুয়ারি আর ১৫ অগস্টের ট্যুর্নামেন্ট এ পাড়ায় ভরপুর বাঙালিয়ানা ধরে রেখেছে।

পাড়ার ফুচকার দোকানের আকর্ষণও কম নয়। সন্ধ্যায় স্বাদ বদলাতে ভিড় করেন সেখানে অনেকেই। সকাল-বিকেলে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে মেলে অানাজ, ফল, মাছ— সব। এই এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভাল। অন্যান্য পাড়ার মতোই এখানেও দিনে দিনে বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। পাড়ার রাস্তাটা খুব একটা চওড়া না হওয়ায় এক দিকে গাড়ি পার্ক করা থাকলে খুবই সমস্যা হয়। তবে কিছু খামতি মানিয়ে নেওয়ার আর এক নামই তো পাড়া।

লেখক শিক্ষক

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement