Maniktala Assembly by Elections 2024

ভোটারের দেখা নেই, ফাঁকা বুথেও পাহারায় রইল বাইক-বাহিনী

মানিকতলার যে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের কথা হচ্ছে, জানা গেল, সেখানে মোট ভোটার ৮৫০। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে ভোট দিতে এসেছেন মাত্র ৮০ জন

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৪ ০৬:২৪
Share:

শুনশানঃ ভোটকেন্দ্রের প্রবেশপথে পাহাড়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে দেখা মিলল না ভোটারদের। মানিকতলা উপনির্বাচনে অধিকাংশ ভোটগ্রহন কেন্দ্রেই দেখা গেল এই দৃশ্য। বুধবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ভোটকেন্দ্রের প্রবেশপথে নেই কোনও কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান। ভিতরে পাখার নীচে বসে তাঁরা মোবাইলে ভিডিয়ো দেখছেন। দরজায় কলকাতা পুলিশের যে কর্মী এত ক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনিও বিরক্তির সুরে চেয়ারে বসে বললেন, ‘‘কার জন্য পাহারা দেব? এখানে ভোটার কোথায়?’’

Advertisement

মানিকতলার যে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের কথা হচ্ছে, জানা গেল, সেখানে মোট ভোটার ৮৫০। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত সেখানে ভোট দিতে এসেছেন মাত্র ৮০ জন!

ভোটারের দেখা নেই। অথচ সেই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরেই বার বার ঘুরে যাচ্ছে বাইক বাহিনী। কয়েকটি বাইক ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের বাইরে দাঁড় করিয়ে আবার তাতে বসেই কয়েক জনকে গল্পে মেতে থাকতে দেখা গেল। আপনারা কারা? প্রশ্ন শুনে এক যুবক বললেন, ‘‘ভোট লুট যাতে না হয়, তাই পাহারা দিচ্ছি। আমাদের দাদা বলে দিয়েছেন।’’ কোন দাদা? আপনারা কি ভোটার? ভোটার হলে ভোটটা দিয়ে দিন, এখানে তো ভোটই পড়ছে না! এই সব মন্তব্যের আর উত্তর মিলল না।

Advertisement

বুধবার, বিধানসভা উপনির্বাচনের দিন মানিকতলার একাধিক ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের সামনে চোখে পড়ল এমনই দৃশ্য। সেখানে ভোটারের দেখা নেই। অথচ ‘ভাল ভোট করানো’র নামে লোকজনের জটলা। দিনের শেষে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সব মিলিয়ে ভোট পড়ল মাত্র ৫১.৩৯ শতাংশ। রাজ্যে এ দিনই অন্য যে তিনটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে ভোটদানের নিরিখে যা সবচেয়ে কম।

দিনের শুরু থেকেই অবশ্য মানিকতলায় ঘুরে বোঝা যাচ্ছিল না যে, সেখানে ভোট চলছে। কাজের দিন হওয়ায় রীতিমতো ব্যস্ততা সর্বত্র। সিপিএম প্রার্থী রাজীব মজুমদার সকাল থেকে বেরিয়ে পড়লেও তৃণমূল ও বিজেপির প্রার্থীরা বেরোলেন বেলা ১২টার পরে। তৃণমূল প্রার্থী সুপ্তি পাণ্ডে বললেন, ‘‘এত দেরিতে বেরোচ্ছি, কারণ মানুষ আমার সঙ্গেই আছেন সেটা জানি।’’ এর পরে মেয়ে শ্রেয়াকে নিয়ে তিনি যান হেদুয়ার কাছে একটি স্কুলে ভোট দিতে। তবে সেখানে সুপ্তি পৌঁছনোর আগেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এক ভুয়ো ভোটার। অন্যের সচিত্র পরিচয়পত্র নিয়ে ভোট দিতে আসায় প্রশ্নের মুখে পড়ে ছুটে পালাতেও দেখা যায় তাঁকে। যা নিয়ে সুপ্তির মন্তব্য, ‘‘এগুলো বিক্ষিপ্ত ঘটনা। ভোট শান্তিপূর্ণই হচ্ছে।’’

বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে মানিকতলা এলাকায় ঘুরতে শুরু করলে অবশ্য বদলে যায় ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোটের ছবিটা। ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে রামকৃষ্ণ সমাধি রোডে কল্যাণকে তাড়া করে ‘চোর চোর’ স্লোগান দেওয়া শুরু হয়। ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে পৌঁছলে ‘গো-ব্যাক’ স্লোগান ওঠে।

এ নিয়ে কল্যাণের দাবি, ‘‘৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি শচীন সিংহ ১০০ জন লোক নিয়ে ঢুকে ছাপ্পা ভোট করাচ্ছেন। আমার দিকে ইট, পাথর, রড, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসা হয়েছে। আমি একাধিক বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানাব। আইনের দ্বারস্থ হব।’’ সাংবাদিক বৈঠক করে ছাপ্পা ভোটের দাবি করেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ এবং তাপস রায়ও। শচীনের দাবি, ‘‘মানিকতলার ভোটারই নই, ওই এলাকায় গিয়েছিলাম ব্যক্তিগত কাজে।’’ ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ করেছেন রাজীবও।

তবে মানিকতলার উপনির্বাচনে রাজ্যের শাসকদলের মাথা ব্যথা বহুতল আবাসনের ভোট। গত লোকসভা ভোটের ফলের নিরিখে দেখা গিয়েছিল, বহুতলের ভোটারদের বড় অংশ মুখ ফিরিয়েছে তৃণমূলের দিক থেকে।এ দিন চোখে পড়ল, এমন বহুতল পাড়াতেই ‘বুথ পাহারা’ দেওয়ার বাড়তি তৎপরতা। কিন্তু তাতে কাজ হল কি? ভোট না দিয়ে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ারপথে, বহুতলের এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘যাঁকেই ভোট দিই, বড় কোনও পরিবর্তন হবে কি? তার চেয়ে কাজের দিনে কাজে যাওয়াই ভাল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement