কলকাতার একটি বাজিবাজার। ফাইল চিত্র
যাঁর লাইসেন্স আছে, তিনিই বাজিই বিক্রি করতে পারবেন। শীর্ষ আদালত মঙ্গলবার এমনই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ফলে কালীপুজো ও দীপাবলির আগে স্বীকৃত বাজিবাজারে ক্রেতাদের ভিড় বাড়বে কি না, তা নিয়ে চলছে জল্পনা। শীর্য আদালত বাজি পোড়ানোর সময়ও বেঁধে দিয়েছে। তাই বাজি বিক্রির পরিমাণ কমবে কি না, সেই হিসেবও কষছেন অনেকে।
কালীপুজোর আগে কলকাতা ও শহরতলি মিলিয়ে মোট পাঁচ-ছ’টি স্বীকৃত বাজিবাজার বসে। সেখানে বাজির দাম তুলনায় বেশি এবং ক্রেতাদের বাজি কেনার বিলও দেওয়া হয়। কিন্তু লাইসেন্সহীন বাজির দোকানের সংখ্যাই বেশি। তা ছাড়া ওই সব দোকান থেকে নিষিদ্ধ শব্দবাজি অনেক সময়েই পাওয়া যায়। ফলে ক্রেতাদের একটা বড় অংশ স্বীকৃত বাজারের চেয়ে লাইসেন্সহীন ব্যবসায়ীদের থেকেই বাজি কেনেন। তা ছাড়া অনলাইনেও বাজি বিক্রি চালু হয়েছিল। এ বছর তার উপরেও নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে।
এই সব নির্দেশকে কিন্তু স্বাগতই জানাচ্ছেন লাইসেন্সধারী বাজি ব্যবসায়ীরা। পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্নার কথায়, ‘‘এই নির্দেশ সুদূরপ্রসারী। এতে বেআইনি বাজি কারখানা বন্ধ হবে। পরোক্ষে আইনি বাজি শিল্পের উন্নতি হবে।’’
শুভঙ্করবাবুদের সংগঠন টালা পার্কে বাজি বাজারের আয়োজন করে। ওই সংগঠনের দাবি, শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ফলে ব্যবসায় টিঁকে থাকতে লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ীরা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবেশবান্ধব ও উন্নত মানের বাজি তৈরির দিকেও মন দেবেন। তাঁদের সংগঠন উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে সচেতনতা প্রসারে হোর্ডিং দেবে বলে জানান শুভঙ্করবাবু।
শীর্ষ আদালতের রায়কে স্বাগত জানালেও চলতি বছরেই কতটা এই নির্দেশ বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে অনেক ব্যবসায়ীর সন্দেহ রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, ইতিমধ্যেই লাইসেন্সহীন বাজারগুলিতে এই রাজ্য এবং শিবকাশী থেকে প্রচুর বাজি মজুত করা হয়েছে। ফলে বড় বাজার, ক্যানিং স্ট্রিট এজরা স্ট্রিটের মতই সর্বত্রই ফুটপাথে বাজি বিক্রি পুরোপুরি বন্ধ হবে না। ফলে এই বছর থেকে সুফল পাওয়া যাবে বলেই ব্যবসায়ীদের অনেকে মনে করছেন। তবে ব্যবসায়ীদের আশা প্রশাসন এই বছর থেকে শীর্য আদালতের রায় বাস্তবায়িত করতে কড়াকড়ি করবে। ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠন আজ, বৃহস্পতিবার থেকেই শীর্ষ আদালতের রায়ের ভিত্তিতে বাজি নিয়ে সচেতনতার প্রসারেও নামছে।
শহিদ মিনার ময়দানে বাজি বাজারের আয়োজন করে সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতি। তাদের চেয়ারম্যান বাবলা রায় বলছেন, সুপ্রিম কোর্ট বাজি পো়ড়ানোর সময় বেঁধে দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাতে সামগ্রিক বিক্রি ৫ থেকে ১০ শতাংশ কমতে পারে। তিনিও মনে করেন, প্রশাসনিক কড়াক়ড়ি বেশি না হলে এ বছর অনেকেই রাত ১০টার পরে বাজি পোড়াবেন। শুভঙ্করবাবুও মনে করেন, বাজি পোড়ানোর সময় নির্দিষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাথাপিছু কেনাকাটার পরিমাণ কমবে। এক বাজি ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আগে যিনি এক ব্যাগ বাজি কিনতেন, তিনি এ বার আধ ব্যাগ বাজি কিনতে পারেন। তাই ক্রেতার সংখ্যা বৃদ্ধি মানেই বিক্রি বৃদ্ধি, এ কথা এখনই বলা যায় না।’’
তবে আশা ছাড়ছেন না অনেকে। কারও কারও ভাবনায়, পরিমাণে কম কিনলেও নতুন ধরনের দামি বাজি ক্রেতা টানতে পারে।
তবে সবই জল্পনা। শেষমেশ কী হবে তা বলবে দীপাবলীর রাত!