দুর্ঘটনাগ্রস্ত একটি স্কুলবাস। ফাইল চিত্র
চিৎপুরে গত নভেম্বর মাসে এক স্কুলবাস দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছিল হেদুয়ার একটি বেসরকারি স্কুলের সাত জন পড়ুয়া। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, যাত্রী পরিবহণের প্রয়োজনীয় শংসাপত্র ছাড়াই দিব্যি পড়ুয়াদের নিয়ে যাতায়াত করছিল বাসটি। অকেজো ব্রেক এবং পুরনো চাকাই ওই দুর্ঘটনার কারণ বলে অভিযোগ।
শুধু হেদুয়ার ওই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলই নয়, অভিযোগ, কলকাতা শহরের বহু নামী স্কুলেই দেখা যাচ্ছে একই ছবি। পড়ুয়াদের নিরাপত্তাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে অনুমোদন বা শংসাপত্র ছাড়াই চলছে স্কুলবাস। এই প্রবণতা ঠেকাতেই এ বার কঠোর হচ্ছে পরিবহণ দফতর। নথিপত্র খতিয়ে দেখে তারা জেনেছে, গাড়ির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র ছাড়াই কলকাতা, সল্টলেক এবং নিউ টাউনের ১৫৩টি স্কুলের ৮৩৭টি বাস দিব্যি রাস্তায় পড়ুয়াদের নিয়ে ছুটছে। সেগুলির মধ্যে ১০-১২ বছরের পুরনো বাসও রয়েছে। সেগুলির বেশির ভাগেরই স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র বা সার্টিফিকেট অব ফিটনেসের মেয়াদ বহু দিন আগে ফুরিয়েছে।
নিয়ম ভাঙার তালিকায় একাধিক নামীস্কুলও রয়েছে বলে অভিযোগ। প্রতিটি স্কুলের কর্তৃপক্ষকেই কড়া ভাষায় চিঠি পাঠিয়ে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রয়োজনীয় শংসাপত্র সংগ্রহের কাজ সেরে ফেলতে বলেছে পরিবহণ দফতর। যে সমস্ত স্কুল ওই নির্দেশ মানবে না, তাদের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরোনোর পরে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর। পরিদর্শকেরা ওই সব স্কুলে আচমকা হানা দিয়ে বাসের কাগজপত্র আটক করতে পারেন বলে খবর। স্কুল কর্তৃপক্ষ ওই সব বাস যাতে রাস্তায় নামাতে না পারেন, সেই মর্মে নির্দেশও জারি করা হতে পারে।
সম্প্রতি জোকার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ন’টি বাসের সব ক’টির ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাগজপত্রের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। ওই স্কুল কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে বাসগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে প্রয়োজনীয় শংসাপত্র নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিউ টাউন ও বাইপাসের একাধিক জায়গায় শাখা রয়েছে, এমন একটি ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুলের ক্ষেত্রেও অনেকগুলি বাসে অনিয়ম ধরা পড়েছে বলে অভিযোগ। ওই স্কুলকেও দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, বেশির ভাগ স্কুলের ক্ষেত্রেই কোনও বেসরকারি সংস্থা বাস চালানোর দায়িত্ব পালন করে। অনেক ক্ষেত্রেই তারা প্রয়োজনীয় সতর্কতা মানে না। এই প্রবণতা ঠেকাতে স্কুলগুলিকেও সতর্ক করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশি নজরদারিও বাড়ানো হচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘পডু়য়ারাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও আপস নয়। খারাপ ব্রেক বা রিসোল করা টায়ার নিয়ে স্কুলবাস চালানো যাবে না।’’ কলকাতায় ১৫ বছরেরও বেশি পুরনো ৩২৭টি স্কুলবাসের বিরুদ্ধে দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ ছিল। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া ওই সব বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রে খবর।