Cleaning Staff Crisis

কলকাতার বিভিন্ন সরকারি স্কুলে সাফাইকর্মী নামমাত্র, অপরিষ্কার শৌচালয়ে ছড়াচ্ছে নানা রোগ

অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের মেয়েরা প্রায়ই জানায়, স্কুলের শৌচালয়ের কী ভয়াবহ অবস্থা! অভিযোগ জানালে শৌচালয় পরিষ্কার করানো হয় ঠিকই, কিন্তু কিছু দিন পরেই ফের একই পরিস্থিতি তৈরি হয়।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৭:৩২
Share:

বিভিন্ন সরকারি স্কুলে সাফাইকর্মীর পদ না থাকায় অপরিচ্ছন্ন শৌচাগারেই বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। প্রতীকী ছবি।

শিক্ষকের অভাবে পঠনপাঠন যে ঠিক মতো হয় না, সে অভিযোগ ছিলই। এ বার অভিযোগ, শহরের বিভিন্ন সরকারি স্কুলে সাফাইকর্মীর পদ না থাকায় অপরিচ্ছন্ন শৌচাগারেই বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। যার ফলে পড়ুয়ারা, বিশেষত ছাত্রীরা নানা ধরনের সংক্রমণে আক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। সম্প্রতি বেথুন স্কুলে অভিভাবকদের সঙ্গে শিক্ষকদের একটি বৈঠকের পরে কয়েক জন অভিভাবক স্কুলের নোংরা শৌচালয় ও সাফাইকর্মী না থাকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের অভিযোগ, স্কুলের শৌচালয় ঠিক মতো পরিষ্কার না হওয়ায় কয়েক জন ছাত্রী মূত্রনালির সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছে।

Advertisement

শুধু বেথুন নয়, শহরের বেশির ভাগ সরকারি স্কুলেরই কম-বেশি একই অবস্থা বলে জানাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষিকারা। যেমন, সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলের পড়ুয়াদের অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের মেয়েরা প্রায়ই জানায়, স্কুলের শৌচালয়ের কী ভয়াবহ অবস্থা! অভিযোগ জানালে শৌচালয় পরিষ্কার করানো হয় ঠিকই, কিন্তু কিছু দিন পরেই ফের একই পরিস্থিতি তৈরি হয়। বেথুন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা শবরী ভট্টাচার্য বললেন, ‘‘আমাদের স্কুলের এক প্রাক্তন ছাত্রী নিজের খরচে স্কুলে এক জন সাফাইকর্মী রেখেছেন। তিনি নিয়মিত স্কুলের শৌচালয় পরিষ্কার করেন। আমাদের স্কুলে দু’জন সাফাইকর্মীর পদ ছিল। এক জন অবসর নিয়েছেন। অন্য জন আছেন। এত বড় স্কুলে আরও সাফাইকর্মী দরকার।’’

সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা পাপিয়া নাগ জানালেন, তাঁদের স্কুলে একসঙ্গে প্রাক্ প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস চলে। পাঁচ বছর বয়স থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের মেয়েরা সেখানে পড়ে। সরকার এখন সাফাইকর্মীর জন্য আলাদা টাকা বরাদ্দ করে না। তবে স্কুল নিজস্ব উদ্যোগে ও খরচে আংশিক সময়ের সাফাইকর্মী রেখেছে। অন্য বেশ কিছু স্কুলের প্রধান শিক্ষিকারা জানালেন, স্কুল নিজস্ব উদ্যোগে সাফাইকর্মী রাখলে তাঁর বেতন তো দিতে হবে স্কুলকেই। তাঁদের প্রশ্ন, সে টাকা আসবে কী ভাবে? যে সব স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা কম, সেখানে সাফাইকর্মী রাখার মতো আর্থিক সংস্থানও থাকে না।

Advertisement

স্কুলের শৌচালয় পরিষ্কার রাখাটা ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যের পক্ষে অবশ্য প্রয়োজনীয় বলেই মনে করেন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক শ্যামল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘নোংরা শৌচালয় থেকে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (ইউটিআই) হয়। এ ছাড়া, মেয়েদের যোনিপথেও সংক্রমণ হতে পারে। তাদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যবিধি মানতে গেলেও শৌচাগার পরিষ্কার থাকা জরুরি। ফিনাইল দিয়ে নিয়মিত সাফাই করলেই কিন্তু শৌচালয় পরিষ্কার থাকে। এটুকু কেন স্কুল করবে না?’’ শিশুরোগ চিকিৎসক দ্বৈপায়ন ঘটক বলেন, ‘‘অনেকে স্কুলে শৌচালয়ে যায়ই না, সেটি নোংরা থাকে বলে। এটা কিন্তু ছোটদের স্বাস্থ্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। নোংরা শৌচালয়ে কোনও কিছুতে হাত দিয়ে, পরে সেই হাত মুখে দিলে পেটের নানা রোগ হতে পারে। তবে অনেক বেসরকারি স্কুলেও শৌচালয় নোংরা থাকে বলে জানতে পেরেছি।’’

শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘স্কুলে সাফাইকর্মীর পদে বহু বছর আগে নিয়োগ হলেও এখন আর ওই পদে নিয়োগ হচ্ছে না। অনেক স্কুল নিজেরাই বেতন দিয়ে সাফাইকর্মীর ব্যবস্থা করে নিচ্ছে। তবে, ফের সাফাইকর্মী নিয়োগ নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement