ফাইল চিত্র।
অপ্রয়োজনীয় খরচে রাশ টানছে রাজ্য সরকার। তাই স্বাস্থ্যসাথীর অপব্যবহার রোধেও বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। সোমবার নবান্নে স্বাস্থ্য বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্যসাথীর অপব্যবহারে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিলেন। বেসরকারি হাসপাতালগুলিকেও কার্যত সতর্ক করেছে রাজ্য। পাশাপাশি, অ্যান্টিবায়োটিকের দামের বোঝা থেকে সাধারণ রোগীদের মুক্তি দিতে সুনির্দিষ্ট নীতির পক্ষেও সওয়াল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে মমতা বলেন, “এক জায়গায় এক চিকিৎসক এক দিনে ২০টা অপারেশন করেছেন! এটা হতে পারে? কখনও হতে পারে না। এগুলো নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষের টাকার মূল্য দিতে হবে না? যারা অপব্যবহার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা উচিত।” তাঁর স্পষ্ট নির্দেশ, সরকারি নির্দেশ অমান্য করলে বেসরকারি হাসপাতালের ‘ক্ষমতা’ না দেখে পদক্ষেপ করতে হবে স্বাস্থ্য ভবনকে। তিনি বলেন, “কোনও লবি কাজ করবে না। যে যত বড়ই হোক।”
স্বাস্থ্যকর্তারাও বৈঠকে জানান, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে সরকারি নির্দেশ অমান্য করায় এখনও পর্যন্ত ১৫-২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীরও স্পষ্ট নির্দেশ, চিকিৎসা বা স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে মানুষের সমস্যা হলে জবাবদিহি করতে হবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালকে। দরকারে লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম স্বাস্থ্যসাথী প্রত্যাখ্যান করলে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হবে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি সর্বত্র স্বাভাবিক হয়নি বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ। তাঁদের কথায়, “অনেক বেসরকারি হাসপাতাল বা নার্সিংহোম এখনও স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করছে। বিলে গরমিল করছে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরেও এসেছে।” মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, জেলায় জেলায় নিয়মিত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে স্বাস্থ্যকর্তাদের। স্বাস্থ্যকর্তারা তাঁকে জানান, ইতিমধ্যেই ১০-১২টা হাসপাতাল শাস্তি পেয়েছে স্বাস্থ্যসাথী প্রত্যাখ্যান করায়। মমতার বার্তা, “ন্যূনতম মানবিকতা না থাকলে এই কাজে আসা উচিত নয়।”
বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের পূর্বাঞ্চলীয় সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেন, “জেলা স্তরে ছোট ছোট নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আমরাও শুনছি। এই প্রকল্পের অপব্যবহার রুখতে সরকারকেও সজাগ থাকতে হবে।” ‘প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটালস অ্যাসোসিয়েশন’-এর চেয়ারম্যান শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, “যাঁরা অপব্যবহার করছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। তবে স্বাস্থ্যসাথীর সমস্যাগুলিরও দ্রুত নিষ্পত্তি প্রয়োজন।” রাজ্যের দাবি, স্বাস্থ্যসাথীতে ২.৪০ কোটি পরিবারের প্রায় ৮.৪৩ কোটি মানুষ নথিভুক্ত হয়েছেন। প্রায় আড়াই হাজার হাসপাতালে পরিষেবা মিলছে। ৪৩ লক্ষ মানুষকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। চালু হয়েছে অনলাইন সুবিধা। নিউরো, অঙ্কোলজি, কার্ডিয়ো চিকিৎসার খরচের পরিমার্জন হয়েছে। ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে এই খাতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা খরচ হবে।
অন্য দিকে, অ্যান্টিবায়োটিকের যে ব্র্যান্ড মানুষের আয়ত্তে থাকবে, সেটাই লেখা উচিত বলে এ দিন জানান মমতা। বৈঠকে প্রস্তাব ওঠে, রোগীর ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে চিকিৎসা বাবদ খরচ উল্লেখ করা হোক। সহমত হন মুখ্যমন্ত্রী। তখন এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁরা কার্ডিয়োলজি ও ক্যানসারের ক্ষেত্রে তা করেন। মুখ্যমন্ত্রী সব বিভাগে চালুর নির্দেশ দেন। হাসপাতালগুলির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও জানতে চান মমতা। তাঁর নির্দেশ, ডাক্তারদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ করতে হবে। মহকুমা স্তরেও সিসি ক্যামেরা বসানোর কথা বলেন তিনি। তাঁর নির্দেশ, পরিকাঠামোর কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে।
রোগীর চাপে একাধিক জেলা হাসপাতাল পরিকাঠামো বাড়ানোর অনুরোধ করেছে। কিন্তু হেরিটেজ ভবন হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে তা ভাঙায় সমস্যা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, “রেল ভবন, পার্লামেন্ট ভবন উড়িয়ে যদি নতুন ভবন হয়, তা হলে পুরনো হাসপাতাল নিয়ে কিছু করা যায় না কেন? হেরিটেজ কমিশন তো আমাদেরই।”