সেতু ভাঙায় বদলে গিয়েছে আমাদের জীবনের ছন্দ

ঘুমনোর সময়টুকু বাদ দিলে সারা দিনই আতঙ্কের চক্রব্যূহে কাটাচ্ছি! শুধু আমি নই, আমার মতো হাজার হাজার বেহালাবাসীরই এক অবস্থা!

Advertisement

সৈকত মল্লিক (বেহালার বাসিন্দা)

শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩৪
Share:

মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে মাত্র দুটো সকাল পেয়েছি। ঘুমনোর সময়টুকু বাদ দিলে সারা দিনই আতঙ্কের চক্রব্যূহে কাটাচ্ছি! শুধু আমি নই, আমার মতো হাজার হাজার বেহালাবাসীরই এক অবস্থা!

Advertisement

বেহালা চৌরাস্তার কাছে নতুন পাড়ায় সপরিবার থাকি। অফিস শিবপুরে। সকাল আটটার মধ্যে অফিসে ঢুকে পড়তে হয়। তাই বাড়ি থেকে পৌনে সাতটার মধ্যে বেরিয়ে পড়ি। বাস ধরে সোজা চলে আসি হেস্টিংসে। সেখান থেকে অফিসের বাস পেয়ে যাই। এ জন্য রয়েছে দুটো রুট। একটি ব্রেস ব্রিজ দিয়ে হাইড রোড হয়ে খিদিরপুর। সেখান থেকে হেস্টিংসের পুলিশ ট্রেনিং স্কুল (পিটিএস)। অন্য রুটটি হল, তারাতলা থেকে নিউ আলিপুর দিয়ে দুর্গাপুর ব্রিজ হয়ে চিড়িয়াখানা। সেখান থেকে পিটিএস পাঁচ মিনিটের হাঁটাপথ। দ্বিতীয় রুটটাই বেশির ভাগ মানুষের পছন্দ। কারণ, হাইড রোড বড় বড় গর্তে ভরা। যা-ই হোক, সব মিলিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে অফিসে ঢুকে যাই। এত দিন এটাই ছিল রুটিন।

বুধবার, অর্থাৎ সেতু ভেঙে পড়ার পরের দিন একটু বেশি সময় হাতে নিয়েই বেরিয়েছিলাম। ব্রেস ব্রিজ-হাই়ড রোড রুট দিয়ে বাসটা খুব দ্রুত চালিয়েছিলেন চালক। তা-ও অফিসে একটু দেরিতেই ঢুকেছিলাম। তাই বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টা নাগাদ বাড়ি থেকে বেরোই। তবে এ দিন আর কালকের রুটে বাস চলেনি। হাইড রোডে প্রবল যানজট দেখে চালক মাঝেরহাটের একটি স্কুলের পাশ দিয়ে দুর্গাপুর সেতু হয়ে কম্যান্ড হাসপাতালের পাশ দিয়ে বেরোলেন।

Advertisement

স্কুল-কলেজ এবং অফিসযাত্রীদের যাতায়াতের পাশাপাশি আরও অনেক বড় একটা সমস্যা রয়েছে। বাড়িতে যদি কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন, সে ক্ষেত্রে কোনও হাসপাতালে রোগীকে কোন পথে নিয়ে যাওয়া হবে? যানজটের কারণে রাস্তায় যা সময় লাগছে, তাতে তো রোগীর প্রাণসংশয় হবে! এ তো কয়েকটা দিনের কষ্ট নয়। সেতু ভাঙার ফলে কত দিন ধরে এই ভোগান্তির শিকার হতে হবে, জানা নেই। তাই এ দিকটা মনে হয়, প্রশাসনের অবশ্যই ভাবা উচিত। যদিও এ কথা বলতেই হবে, পুলিশ যথেষ্ট ভাল কাজ করছে।

আরও পড়ুন: রেলিং থেকে পথ, জরাজীর্ণ সবই

বৃহস্পতিবার অফিস থেকে বেরোতে আটটা হয়ে গেল। তার পর থেকে এক মুহূর্ত স্বস্তি নেই। ক্লান্ত শরীরে আর দৌড়ঝাঁপ ভাল লাগছে না। সেপ্টেম্বরের পাঁচ তারিখ থেকে সকালটা কেমন যন্ত্রের মতো হয়ে গিয়েছে। চোখ খুলে বিছানা থেকে নামার আগেই কয়েকটা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। কোন বাস পাব? সেই বাস কোন রুট দিয়ে যাবে? আগে অফিসের কোনও কাজ বাড়িতে নিয়ে এসে করার কথা ভাবতাম, পরিবারের সঙ্গে একটু বেশি সময় কাটানোর লোভে। এখন সে উপায় নেই। ঘরে ফেরার সময়েরই ঠিক নেই! পরিবারের সঙ্গে গল্পেও কেমন রাস্তার যানজট-বাসরুট আর কাল কী হবে, কী হবে না-র আতঙ্ক ঢুকে গিয়েছে।

একটা সেতু ভেঙে বদলে দিয়েছে এতগুলো মানুষের জীবনের ছন্দ।

(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement