শিরোধার্য: উল্টোডাঙা উড়ালপুলের নীচে অস্থায়ী ঠিকানাতেই দিনযাপন। বুধবার। ছবি: শৌভিক দে
মাঝেরহাট সেতু ভাঙার পরে দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই তার থেকে অনেক দূরের একটি এলাকার বাসিন্দাদের। কারণ তাঁদের মাথার উপরেও রয়েছে উড়ালপুল। যে উড়ালপুলের একাংশ ভেঙে পড়েছিল পাঁচ বছর আগে। বাসিন্দাদের দাবি, এই অস্থায়ী ঠিকানা করে দিয়েছে খোদ স্থানীয় প্রশাসনই। কিন্তু মঙ্গলবারের পরে আতঙ্কে দিন কাটছে উড়ালপুলের তলায় বসবাসকারী ৯০টি পরিবারের। ঘটনাস্থল উল্টোডাঙা।
২০১৩ সালের ৩ মার্চ ভোরে কেষ্টপুর খালের উপরে উল্টোডাঙা উড়ালপুলের ৪০ মিটারের একটি অংশ ভেঙে পড়ে আহত হয়েছিলেন দু’জন। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে প্রায় ১৫ কোটি টাকা খরচ করে ওই ভাঙা অংশ ফের জোড়া হয়। ২০১৪ সালের পুজোর আগে ভিআইপি রোড থেকে বাইপাস অভিমুখে নতুন করে যান চলাচল শুরু হয় ওই উড়ালপুলে। তবে ওই উড়ালপুলে ভারী যান চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করেছে প্রশাসন।
তা হলে আতঙ্ক কেন? গাড়ি চালক থেকে স্থানীয়দের কথায়, গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি উড়ালপুলে দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাই আর ভরসা নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, গত দেড় বছরে এক বার একাংশে মেরামতির সময় ছাড়া কাউকে চোখে পড়েনি। যদিও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, পোস্তায় উড়ালপুল দুর্ঘটনার পরে এই উড়ালপুলেরও স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে।
আরও খবর: অনেক দিনের ‘ক্লান্তি’ অসহ্য হতেই মাঝেরহাটে এই বিপর্যয়!
উড়ালপুল দুর্ঘটনার আতঙ্ক এখনও ভুলতে পারেননি স্থানীয় বাসিন্দারা। আনন্দ দাস নামে এক যুবক বলেন, ‘‘ভোরে খালের ধারে যাচ্ছিলাম। আচমকা বিকট শব্দ, মনে হল ভূমিকম্প হচ্ছে।ভয়ে বাড়ির দিকে পালাই। একটু পরে বেরিয়ে দেখি চতুর্দিক ধোঁয়াধুলো। উড়ালপুল ভেঙে পড়েছে।’’ আর এক প্রত্যক্ষদর্শী তথা বিধাননগর পুরসভার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্মল দত্তের কথায়, ‘‘ভেঙে পড়ার পরে স্থানীয় যুবকেরা উড়ালপুলের দু’টি মুখে গাছ, ইট দিয়ে রাস্তা আটকে দিয়েছিল। না হলে কত গাড়ি যে নীচে পড়ে যেত ভাবলেই শিউরে উঠি।’’
আরও খবর: এক বছর অবহেলায় আটকে মাঝেরহাটের ৩ কোটির সংস্কার
উড়ালপুলের নীচেই ঝুপড়ি বাবলু দাসের। তিনি জানান, মুরারিপুকুরে পুনর্বাসন দেবে রাজ্য সরকার। তাই অস্থায়ী ভাবে গত দেড় বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন তাঁরা। সুমিত্রা হালদার নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সংসার। জানি না কপালে কী আছে।’’
স্থানীয়দের দাবি, ভিআইপি রোড থেকে ই এম বাইপাসের মধ্যে সংযোগকারী এই পুরনো উড়ালপুলটির নীচে কোথাও ফাটল দেখা যাচ্ছে, কোথাও আবার জল চুঁইয়ে পড়ে। সেখানে স্থানীয়েরাই সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন বলে দাবিও করেছেন।
স্থানীয় কাউন্সিলর শান্তিরঞ্জন কুণ্ডু বলেন, ‘‘ওই উড়ালপুলের নিয়মিত দেখভাল করে কেএমডিএ। তবে পুনর্বাসনের কাজ কিছু বাকি। দ্রুত বসবাসকারীদের সরানো হবে।’’
যদিও উড়ালপুলের রক্ষণাবেক্ষণ কত দিন অন্তর হয়, শেষ কবে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে, এ সব প্রশ্ন নিয়ে ফোন করা হলে কেএমডিএ-র চিফ ইঞ্জিনিয়ার (ট্র্যাফিক অ্যান্ড ট্রান্সপোর্ট) আশিস সেন বলেন, ‘‘কিছু বলতে পারব না, এ বিষয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলুন।’’
পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসএমএসে জানান, উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ইতিমধ্যেই হয়ে গিয়েছে।