নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
মাঝেরহাট সেতু কেন ভেঙে পড়ল, রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বাধীন কমিটি তার কারণ অনুসন্ধান করছে। সেই তদন্ত শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত জোকা-বি বা দী বাগ মেট্রো প্রকল্পের কাজ বন্ধ থাকবে বলে বৃহস্পতিবার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এতে মেট্রোর কাজ আরও বিলম্বিত হবে বলে আশঙ্কা করছেন প্রকল্পের কিছু আধিকারিক। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এও মেনে নিয়েছেন, রাজ্যের অনেক সেতুর হালও খুবই খারাপ।
ওই সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, অনেক সেতুরই আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে গিয়েছে। কোনটা কবে তৈরি হয়েছিল, আয়ুষ্কাল কত দিন, সে সব অবিলম্বে খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা হচ্ছে। ২০টি ব্রিজের আয়ুষ্কাল বা কর্মক্ষম থাকার মেয়াদ শেষ বলে তিনি জানতে পেরেছেন, বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সাঁতরাগাছি সেতু, উল্টোডাঙা সেতু, ঢাকুরিয়া সেতু, শিয়ালদহ সেতু-সহ বেশ কয়েকটি সেতুর নামও তিনি জানিয়েছেন। সাঁতরাগাছি সেতুতে অবিলম্বে ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানিয়েছেন, সাঁতরাগাছি সেতু দিয়ে এখন মূলত যাত্রিবাহী গাড়ি চলবে। ভারী গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে তো ব্রিজগুলো বাঁচাতে হবে। এতগুলো একসঙ্গে দু্র্বল হয়ে গিয়েছে শুনছি। গত ১০০ বছর কেউ খোঁজ রাখেনি। এখন সব ক’টা একসঙ্গে খারাপ হলে তো মুশকিল।’’ ব্রিজ ভাঙলে তা নতুন করে তৈরি করার বা মেরামত করার জন্য টাকার অভাব হবে না মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন। কিন্তু এত সেতু একসঙ্গে নষ্ট হলে সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থায় বড়সড় সমস্যা হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ বার থেকে ভারী গাড়ির উপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চলেছে পুলিশ।
নবান্ন সূত্রের খবর, সেতু বিপর্যয়ের পরে মেট্রো-কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি লিখিত বিবৃতি দিয়ে যে-ভাবে দায় ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছেন, তাতেই ক্ষোভ বেড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর প্রশ্ন, তদন্ত শেষের আগেই মেট্রো কী ভাবে জানাল যে, সেতুভঙ্গে তাদের কোনও দায় নেই? মেট্রোর স্তম্ভের ভিত নির্মাণের সময়ে তৈরি হওয়া কম্পনের দিকে আঙুল তুলে মুখ্যমন্ত্রী জানান, অন্য যে-সব সেতুর কাছে মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলছে, সেখানেও সেতুগুলির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।
রেল, মেট্রো, বন্দর, সেনার মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা রাজ্য প্রশাসনকে তাদের এলাকায় ঢুকতে দেয় না বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, সেতু বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে রাজ্যের সঙ্গে ওই সব সংস্থার একযোগে কাজ করা দরকার। তদন্তের স্বার্থে ওই সব সংস্থার কর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা হবে।
মেট্রো সূত্রের খবর, সাত বছর ধরে জমি-সমস্যায় বারবার বিলম্বিত হয়েছে জোকা মেট্রো প্রকল্পের কাজ। বিভিন্ন সংস্থার অনুমতি সংগ্রহেও প্রচুর সময় নষ্ট হয়েছে। জোকা-এসপ্লানেড ১৬.৫ কিলোমিটার মেট্রো-পথের মধ্যে মোমিনপুর থেকে এসপ্লানেড পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটারের কাজ শুরু করা যায়নি। জমি-জটিলতা কেটে যাওয়ার পরে গত কয়েক বছরে জোকা থেকে তারাতলা পর্যন্ত নয় কিলোমিটার মেট্রো-পথের কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। ২০২০ সালের শেষে ওই পথে মেট্রো চালু হওয়ার কথা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়ায় ওই মেট্রো প্রকল্পের কাজ ফের থমকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হল বলে মনে করছেন মেট্রোর আধিকারিকেরা।
মেট্রো-কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, মেট্রো প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে পর্যালোচনার জন্য রাজ্য স্তরে প্রশাসনিক কমিটি রয়েছে। সেখানে যাবতীয় আলোচনা হয়। কমিটির বৈঠকে রাজ্যের তরফে নির্মাণকাজ নিয়ে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। নির্মাণকাজ চালানোর অনুমতিটাও তো প্রশাসনেরই দেওয়া। সেতু রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্ত দফতরও আপত্তি তোলেনি। তাই একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযোগ করার মধ্যে রাজনীতির বাধ্যবাধকতা দেখছেন মেট্রো-কর্তারা।
মুখ্যমন্ত্রীকে ‘গণৎকার’ বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, মেট্রোর কাজের জন্য দুর্ঘটনা ঘটেনি। অথচ মুখ্যমন্ত্রী মেট্রোর কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেন! অন্যদের দোষ দেওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত, নিজেদের গাফিলতি স্বীকার করে নেওয়া।
আরও পড়ুন: গাফিলতি কেন, প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর
(শহরের প্রতি মুহূর্তের সেরা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের কলকাতা বিভাগ।)