সিঁটিয়ে তিভিষা। —নিজস্ব চিত্র।
হাসিখুশি তিভিষাকে চিনতে পারছেন না পরিজনেরাই। মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পরে কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টা। কিন্তু এখনও বছর চোদ্দোর তিভিষার আতঙ্ক কাটেনি। মাঝে এক বারই সে শুধু বলছে, ‘‘মনে হচ্ছিল যেন পাহাড়ের ঢাল বেয়ে গর্তে পড়ে গেলাম। কী ভাবে বেঁচে গেলাম ভাবতেই পারছি না।’’
গত কাল মাঝেরহাট ব্রিজ ভেঙে পড়ার সময় যে ক’টি গাড়ি নীচে পড়ে গিয়েছিল তার মধ্যে একটিতে ছিল তিভিষা জাসানি। বেহালার চৌরাস্তার বাসিন্দা তিভিষা ভবানীপুরের একটি টিউটোরিয়াল হোম থেকে পড়া শেষে গাড়ি করে বাড়ি ফিরছিল। তিভিষার বাবা হেমাঙ্গ জাসানি বলেন, ‘‘মেয়ে বেঁচে গেলেও কিছুতেই স্বাভাবিক হতে পারছে না। আজ স্কুলে যেতে পারেনি। কবে যেতে পারবে কে জানে? সকলে বোঝাচ্ছে। কিন্তু ওর যেন কিছুই কানে ঢুকছে না। মাঝেমধ্যেই আতঙ্কে মাকে জড়িয়ে ধরছে।’’
নিউ আলিপুরের অকসর স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী তিভিষার ডান কাঁধে ও বাঁ পা-এ চোট লেগেছে। কাল রাতেই এক্স-রে করা হয়েছে।
আরও খবর: এক বছর অবহেলায় আটকে মাঝেরহাটের ৩ কোটির সংস্কার
হেমাঙ্গ বলেন, ‘‘চোট মারাত্মক না হলেও মেয়ে এমন চুপ করে গিয়েছে সেটাই খুব চিন্তার। অন্য দিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে বোনের সঙ্গে কত রকম মজা করে। এক রাতে মেয়েটা যেন পুরো পাল্টে গিয়েছে।’’ হেমাঙ্গ জানান, মঙ্গলবার বাড়ি ফিরে ফের টিভিতে সেতু ভাঙার খবর দেখতেই তিভিষার চোখেমুখে আতঙ্ক ফিরে আসে। তার পর থেকে বাড়িতে খবরের চ্যানেল বন্ধ রাখা হয়েছে। লুকিয়ে রাখা হয়েছে খবরের কাগজও।
আরও খবর: হাঁটতে গিয়েও গর্তে পড়তে পারি, মন্ত্রী বিঁধলেন বিরোধীদের
তিভিষার মা হেতাল জানান, সকালে তিভিষার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ফোন করেছিলেন। তাঁকে তিভিষা জিজ্ঞেস করে, ‘‘স্কুলে যেতে না পারলে কী হবে?’’ প্রধান শিক্ষিকা তাকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, ‘‘আগে সুস্থ হও, তার পরে স্কুলে আসবে।’’ তাতে কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে মেয়ে। হেমাঙ্গ বলেন, ‘‘মেয়েটা কয়েক বার শুধু জানতে চেয়েছে ড্রাইভারকাকু কেমন আছেন?’’
তিভিষার ড্রাইভারকাকু অসীম মণ্ডলের চিবুকে ও হাতে চোট লেগেছে। ঘটনার সময় দু’জনেই গাড়ি-সহ গড়িয়ে পড়েন। স্থানীয়েরাই তাঁদের উদ্ধার করেন। অসীমবাবু জানান, তাঁদের গাড়ির আগেই ছিল মিনিবাস। গড়িয়ে পড়ার সময় মিনিবাসে ধাক্কা লাগার আগে হ্যান্ড ব্রেক দিয়ে কোনও ভাবে গাড়িটিকে থামিয়ে দেন তিনি।
ঘটনার সময়ে ব্যবসার কাজে বি বা দী বাগে গিয়েছিলেন হেমাঙ্গবাবু। তিনি বলেন, ‘‘ফোনে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে উর্ধ্বশ্বাসে দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছই। অনেক খুঁজে শেষে একটি রেসকিউ ক্যাম্পে মেয়েকে দেখতে পাই। ঘটনার পর থেকে গোটা পরিবারই আতঙ্কে ভুগছে। এর পর থেকে কী ভাবে মেয়েকে একা টিউশন পড়তে বা অন্য কোথাও পাঠাব বুঝতে পারছি না।’’