প্রতীকী ছবি
সাত বছর ধরে তিনি দেখাশোনা করতেন বৃদ্ধ মানুষটির। প্রায় বাড়ির লোকের মতোই হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু ওই বৃদ্ধের মৃত্যুর পরে দেখা গেল, তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা! আর সেই টাকা চুরি করেছেন ওই পরিচারিকা। তা-ও বৃদ্ধেরই এটিএম কার্ড হাতিয়ে। শেষরক্ষা অবশ্য হয়নি। বৃদ্ধের ছেলের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ওই পরিচারিকা ও তাঁর দুই জামাইকে। উদ্ধার হয়েছে এটিএম কার্ড এবং কিছু টাকা।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত পয়লা জুন যাদবপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন অনুরাগ আগরওয়াল নামে এক ব্যক্তি। তিনি জানান, প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের একটি আবাসনে তাঁর বাবা সত্যনারায়ণ আগরওয়াল একা থাকতেন। তাঁরা থাকেন কিছুটা দূরে অন্য ফ্ল্যাটে। সত্যনারায়ণবাবুর দেখাশোনা করতেন রীতা রায় নামে ওই পরিচারিকা। জানুয়ারি মাসে মারা যান বৃদ্ধ। এর পরে মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে অনুরাগ খেয়াল করেন, তাঁর বাবার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট থেকে দফায় দফায় প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ তদন্তে নেমে সত্যনারায়ণবাবুর ব্যাঙ্কের তথ্য নিতে গিয়ে জানতে পারে, হুগলির গুপ্তিপাড়া এবং নদিয়ার করিমপুর থেকে ওই টাকা তোলা হয়েছে।
এর পরেই লালবাজারের ওয়াচ সেকশনের গোয়েন্দারা কিছু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ হাতে পান। সেখানে দেখা যায়, নদিয়ার করিমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট এবং হুগলির গুপ্তিপাড়ার বিভিন্ন এটিএম থেকে মাস্ক এবং টুপি পরা কেউ ওই টাকা তুলছেন। আরও জানা যায়, ২০ মার্চ থেকে ৩০ মে-র মধ্যে টাকা তোলা হয়েছে। গোয়েন্দারা এর পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে ওই জায়গাগুলিতে পৌঁছে স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে অভিযুক্তদের হদিস পাওয়ার চেষ্টা করেন। সেই সূত্র ধরেই জানা যায়, নদিয়ার বিভিন্ন এটিএম থেকে টাকা তুলেছেন রঞ্জিত মল্লিক নামে এক যুবক। অন্য দিকে গুপ্তিপাড়ার এটিএমগুলি থেকে টাকা তুলেছেন সৌমিত্র সরকার নামে এক ব্যক্তি। ওই দু’জনকে গ্রেফতার করে জেরা করতেই তাঁরা দোষ স্বীকার করেন। আরও জানান, তাঁরা এটিএম কার্ডটি পেয়েছিলেন রীতার কাছ থেকে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, রঞ্জিত এবং সৌমিত্র সম্পর্কে ভায়রাভাই।
এর পরে পুলিশ রীতাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জেরায় রীতা জানান, সত্যনারায়ণবাবুর মৃত্যুর পরে তিনি তাঁর এটিএম কার্ডটি সরিয়ে ফেলেন এবং এক জামাইকে সেটি দিয়ে দেন। তার পরে দুই জামাই মিলে বিভিন্ন সময়ে নিজেদের বাড়ির কাছে এটিএম থেকে টাকা তোলেন। কিন্তু তাঁরা পিন জানলেন কোথা থেকে? রীতা পুলিশকে জানিয়েছেন, সত্যনারায়ণবাবু তাঁর মোবাইলে পিন সেভ করে রেখেছিলেন। সেই মোবাইল ঘেঁটে তিনি ওই নম্বরটি বলে দেন জামাইকে।