প্রতীকী ছবি।
আজ, সোমবার মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। অতিমারি পরিস্থিতিতে প্রায় দু’বছর পরে এ বারই অফলাইন পদ্ধতিতে পূর্ণাঙ্গ মাধ্যমিক পরীক্ষা হতে চলেছে। দেখা গিয়েছে, চলতি বছরে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। অথচ তাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য অন্যান্য বছরের মতো এ বার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে কোনও বিশেষ তৎপরতা নজরে পড়েনি বলে অভিযোগ। এমনিতেই চলতি বছরে সরকারি, বেসরকারি বাস এবং অন্যান্য গণপরিবহণ স্বাভাবিক থাকা নিয়ে সংশয় দেখা গিয়েছে। যদিও পর্ষদ-কর্তাদের একাংশের দাবি, পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। তবে সেটা কী ভাবে, তা নিয়ে স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
রাজ্য পরিবহণ নিগম সূত্রের খবর, অন্যান্য বার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে বাস পরিষেবা বাড়ানোর আর্জি জানিয়ে প্রায় মাসখানেক আগে চিঠি দেওয়া হয়। এ বার সেই চিঠি রবিবার পর্যন্ত এসে পৌঁছয়নি বলেই খবর। বেসরকারি বাসমালিক সংগঠন সূত্রেও জানানো হয়েছে, চলতি বছরে নানা কারণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আলাদা করে তাঁদের নিয়ে কোনও বৈঠক হয়নি। তবে কলকাতা সংলগ্ন কয়েকটি জেলায় আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকের দফতর থেকে বেসরকারি বাসমালিক সংগঠনের কাছে অতিরিক্ত বাস রাস্তায় নামানোর আবেদন জানিয়ে চিঠি এসেছে।
সেই মতো বাস নামানোর সাধ্য মতো চেষ্টা হচ্ছে বলে বাসমালিক সংগঠন সূত্রের খবর।
তবে ‘সিটি সাবার্বান বাস সার্ভিস’-এর সাধারণ সম্পাদক টিটু সাহা বলছেন, ‘‘অতিমারি পরিস্থিতিতে বেসরকারি বাস অনেক আগে থেকেই সঙ্কটে। নতুন জরিমানার বিধি মড়ার উপরে খাঁড়ার ঘায়ের মতো এসেছে। পরিষেবা স্বাভাবিক করতে সরকারের দিক থেকে আর্থিক এবং প্রশাসনিক সহায়তার প্রয়োজন ছিল। তা না হওয়ায় পরিষেবা আগের মতো স্বাভাবিক জায়গায় পৌঁছতে পারছে না।’’
কম-বেশি সব রুটেই ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাসের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত শংসাপত্র বা ফিটনেস সার্টিফিকেটের মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। ফলে জরিমানার আশঙ্কায় ওই সব বাস রাস্তায় নামতে পারছে না বলেও অভিযোগ। সি এফ (সার্টিফিকেট অব ফিটনেস ) পাওয়ার ক্ষেত্রে সরকার জরিমানা মকুব করার সিদ্ধান্ত এখনও ঘোষণা না করায় অনেকেই সমস্যায় পড়েছেন বলে দাবি। ‘বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু এবং ‘মিনিবাস অপারেটর্স কো অর্ডিনেশন কমিটি’র পক্ষ থেকে স্বপন ঘোষ জানাচ্ছেন, ফিটনেস সার্টিফিকেট নিয়ে ছাড়ের ঘোষণা এখনও হয়নি। বহু গাড়ি ওই সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করতেও পারেনি। ফলে জরিমানার আশঙ্কায় প্রায় হাজারখানেক গাড়ি বসে থাকায় পরিষেবায় ঘাটতি থাকবেই। বেসরকারি বাসের পাশাপাশি স্কুলবাস এবং স্কুলগাড়ির ক্ষেত্রেও একই সমস্যা রয়েছে বলে অভিযোগ। ফলে প্রত্যাশার তুলনায় রাস্তায় বাসের সংখ্যা কম থাকার আশঙ্কা রয়েছে।
শহরে বইমেলার প্রয়োজনে বাড়তি সরকারি বাসের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। সকালে অফিসের সময় অন্যান্য দিনের মতোই পরিষেবা থাকবে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। তবে বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত বাস দেওয়ার যে বিশেষ পরিকল্পনা অন্যান্য বছর নেওয়া হয়, এ বার তেমন কিছু করা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। মূলত পর্ষদের থেকে কোনও চিঠি না আসায় এ নিয়ে পৃথক পরিকল্পনা হয়নি।
একই অবস্থা ট্রেনের ক্ষেত্রেও। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক একলব্য চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, তাঁদের কাছে পর্ষদের তরফে ট্রেন বাড়ানোর আবেদন জানিয়ে কোনও চিঠি আসেনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অন্যান্য বছর যেমন চিঠি দেওয়া হয়, এ বার পর্ষদের থেকে সেই চিঠি পাইনি। তবে পরীক্ষার্থীদের কথা ভেবে হাওড়া এবং শিয়ালদহ শাখার গ্যালপিং ট্রেনকে সব স্টেশনে দাঁড়াতে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে।’’
যদিও পর্ষদের এক কর্তার দাবি, পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করার জন্য পরিবহণ দফতর থেকে শুরু করে যে যে বিভাগের সঙ্গে কথা বলা দরকার, তাদের সঙ্গে একাধিক বার কথা বলা হয়েছে।