এক ফ্রেমে: নিউ মার্কেটে রাজনৈতিক প্রতীক আঁকা শাড়ি। নিজস্ব চিত্র
বুথে ঢুকে পছন্দের দলের প্রতীক খুঁজে বোতাম টিপতে হয় ভোটারদের।
এখানে অবশ্য তেমনটা নয়। ভিতরে ঢুকলেই দেখা যাবে ভোটে দাঁড়ানো সব দলের প্রতীক, এমনকি নেতা-নেত্রীদের ছবিও। চাইলে বাড়িও নিয়ে যাওয়া যাবে। তবে তার জন্য খরচ করতে হবে হাজার-বারোশো টাকা।
এটা অবশ্য কোনও বুথের ছবি নয়। লোকসভা ভোটের তারিখ ঘোষণা হতেই নিউ মার্কেটের একটি দোকানে জায়গা করে নিয়েছে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের প্রতীক আঁকা শাড়ি। রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নরেন্দ্র মোদী, প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর ছবিওয়ালা শাড়িও। রাজনীতির ছোঁয়া লাগা এই সমস্ত শাড়ি ভালই বিকোচ্ছে বলে দাবি দোকানের মালিক নবীন ইসরানির। বললেন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপি মিলিয়ে এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু শাড়ি বিক্রি হয়েছে। তবে কোন দলের ক’টা, তা বলব না।’’
স্নাতক হওয়ার পরেই নিউ মার্কেটে শাড়ির দোকান খুলেছিলেন নবীন। জানালেন, শুধু রাজনৈতিক দলের প্রতীক আঁকা শাড়িই নয়, সিনেমা কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নকশাও শাড়িতে ফুটিয়ে তোলেন তিনি। নিজেই আঁকেন সেই নকশা। ‘‘এই ধরনের শাড়ি তৈরি করি শখ থেকে,’’ বললেন নবীন। তিনি জানান, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের একেবারে শেষ দিকে একটি রাজনৈতিক দলের প্রতীক আঁকা শাড়ি তৈরি করেছিলেন। কিন্তু সময় কম থাকায় সেগুলি তেমন বিক্রি হয়নি। তাই এ বার ভোট ঘোষণা হতেই দোকান সাজিয়েছেন চারটি রাজনৈতিক দলের শাড়িতে। নবীন বললেন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপি-র প্রতীক আঁকা শাড়ি তৈরির পরে ভাবলাম, সিপিএম এবং কংগ্রেসকেও রাখা উচিত। সম্মান দিতে ওদেরটাও বানালাম।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
শাড়িগুলি মূলত ‘ক্রেপ’ ও ‘মিক্সড সিল্ক’ দিয়ে তৈরি হচ্ছে। গুজরাত থেকে ক্রেপ আর মুম্বই থেকে মিক্সড সিল্ক আনিয়ে তার উপরে আঁকা হয় নকশা। যেমন, কচি কলাপাতা রঙের শাড়িতে কলকাতার দৃশ্যের সঙ্গে আঁকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। আবার হাল্কা হলুদের উপরে আঁকা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ছবি। গাঢ় খয়েরি শাড়ির উপরে আঁকা কাস্তে হাতুড়ি, সাদা-কালো শাড়িতে হাত চিহ্ন ও প্রিয়ঙ্কা গাঁধীর ছবি। এ ছাড়াও রয়েছে নানা রঙের শাড়ি। নবীন জানালেন, দলীয় প্রতীক ও নেতা-নেত্রীদের প্রতি সম্মান জানাতে শাড়ির নীচের দিকে কোনও ছবি বা প্রতীক রাখা হয়নি।
সাধারণ ক্রেতারা কি এই সমস্ত শাড়ি কিনছেন?
শো-কেসে সাজানো শাড়ির ছবি তুলতে ব্যস্ত সোমদীপা দাস বললেন, ‘‘ছবি তুলে বন্ধুদের দেখাব। এক দলের শাড়ি পরলে তো আর এক দল রাগ করবে। আমার পছন্দ প্রকাশ্যে আনব কেন?’’ অনেকে আবার ওই শাড়ি গায়ে জড়িয়ে দেখছেন, কেমন লাগে দেখতে। ধর্মতলা চত্বরে সরকারি অফিসে কাজ করা দুই বান্ধবী ঢুকেছিলেন ওই দোকানে। দু’জনেরই নাম প্রিয়াঙ্কা। তাঁদের এক জন প্রিয়াঙ্কা বাগচী নরেন্দ্র মোদী ও সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের শাড়ি গায়ে ফেলে দেখছিলেন। বন্ধু প্রিয়াঙ্কা বসু আবার কলকাতা শহর ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি আঁকা শাড়ি গায়ে জড়ালেন।
কিন্তু এটা নির্বাচনী বিধিতে আটকাবে না? নির্বাচন কমিশন সূত্রের খবর, বিধি অনুযায়ী শাড়ি যেখানে ছাপা হচ্ছে, তাদের কমিশনের অনুমতি নিয়ে রাখতে হয়। সাধারণত, ছাপাখানাগুলি দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে কিছু ছাপার জন্য অনুমতি নিয়ে রাখে।
কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ অবশ্য এমন ফ্যাশনে বিশ্বাসী নন। তাঁর কথায়, ‘‘এমন শাড়ি পরার অর্থ কী, জানি না। তবে কোনও দলের যদি নির্দেশ থাকে, তাঁদের দলীয় প্রতীক বা ছবি দেওয়া শাড়ি পরতেই হবে, সেটা আলাদা বিষয়।’’ সেনাবাহিনীর বিষয়টি রাজনীতিতে না আনাই উচিত বলে মনে করেন হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এমন শাড়ি জনসংযোগের একটা মাধ্যম। পদ্মের প্রতীক আঁকা শাড়ি মানুষ পরতেই পারেন। তবে আমার কমলা রং ও সুতির শাড়িই বেশি পছন্দ।’’
বিষয়টিকে প্রচার ও ব্যবসার অভিনব কৌশল বলেই মনে করছেন কলকাতা দক্ষিণ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী মিতা চক্রবর্তী। তবে তিনি বলেন, ‘‘এগুলি প্রচারের আকর্ষণীয় মাধ্যম হলেও এ সবের ঊর্ধ্বে উঠে যাওয়া যায়, যদি মানুষের মধ্যে গিয়ে তাঁদের সমস্যা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি আমাদের দল কী ভাল করতে পারে, তা নিয়ে কথা বলা হয়।’’ আর বীরভূমের তৃণমূল প্রার্থী শতাব্দী রায়ের কথায়, ‘‘কেউ মিষ্টিতে, কেউ শাড়িতে এমন করছেন। এটা ব্যবসার কৌশল। তবে এর মধ্যেও ব্যবসায়ীদের একটা ভালবাসা প্রকাশ পায়, যা থেকে তাঁরা এটা তৈরি করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এমন অসংখ্য সমর্থক রয়েছেন, যাঁরা এই শাড়ি পরতে পছন্দ করবেন।’’