পারিবারিক: প্রতাপাদিত্য রোডে কলকাতা দক্ষিণের তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের সঙ্গে ছেলে নির্বাণ রায়। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ
প্রচারের সময় শেষ। নির্বাচন কমিশন নিজেই সেই সময়টা আরও এক দিন কমিয়ে এনেছে। এই পরিস্থিতিতে শেষ মুহূর্তের ভোট প্রচারে কাট-ছাঁট করতে হওয়ার চেয়েও দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী মালা রায়ের মন খারাপ অন্য কারণে। তিনি বলেন, ‘‘আর দু’টো দিন! তার পরেই নির্বাণ ফিরে যাবে। মিস করব!’’ কথাগুলো বলার সময়ে তিনি যেন ভোট-প্রার্থী নন, স্রেফ এক জন মা!
নির্বাণ রায়। চাকরি সূত্রে থাকেন বেঙ্গালুরুতে। মা মালা রায়ের প্রচারের জন্য অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে এসেছেন শহরে। থাকছেন মালার সব ক’টি প্রচারেই। রাজনীতিতে পুরনো মুখ মালাও সময়ে সময়ে পরামর্শ নিচ্ছেন ছেলের থেকে। মালা বলেন, ‘‘নির্বাণ এ প্রজন্মের ছেলে। ও আসায় আমার প্রচারে খুব সুবিধে হয়েছে। কিন্তু ভোটটা মিটে গেলেই ফিরে যাবে বলছে।’’ রাজনীতিতে আসার ইচ্ছে নেই? প্রশ্ন শুনে কিছুটা ইতস্তত নির্বাণ। পাশে বসা মায়েরও হাসিমুখে প্রশ্ন, ‘‘বলো, কী করবে!’’ খানিক ভেবেচিন্তে নির্বাণ হেসে বললেন, ‘‘ভোটের পরে আপাতত বেঙ্গালুরুতেই ফিরে যাব। হাতে খুব কম সময়।’’
ভোটের দিন-ক্ষণ ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই প্রচারে নেমে পড়েছিল সব ক’টি রাজনৈতিক দল। ভোট যত এগিয়েছে, ততই হাতের সময় কমে আসা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। সেই চিন্তা আরও কয়েক ধাপ বাড়িয়ে নির্বাচন কমিশন বুধবারই জানিয়ে দেয় বৃহস্পতিবার রাত ১০টার পরে আর প্রচার করা যাবে না। অর্থাৎ, শেষ দিনের কর্মসূচি বাতিল করতে হয়েছে সকলকেই। যাদবপুর কেন্দ্রের বাম প্রার্থী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য যেমন জানালেন, শেষ মুহূর্তে কয়েকটি প্রচার বাতিল করেছেন তিনি। তবে নির্বাচন কমিশনকে দোষ দিতে নারাজ বিকাশরঞ্জনের কথায়, ‘‘এই রকম কড়া পদক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। রাজ্যে যা হচ্ছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়।’’ তিনি জানান, প্রচারের দিনগুলোয় ভোর ছ’টায় উঠলেও এ দিন তিনি ঘুমিয়েছেন ৮টা পর্যন্ত। তাঁর কথায়, ‘‘একটু বেশি ঘুমিয়ে মন্দ লাগল না!’’ এর মধ্যেই ঠিক করেছেন, রবিবার ভোটের দিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ে ভাঙড়ের ঝামেলাপ্রবণ এলাকায় যাবেন তিনি।
পারিবারিক: এ জে সি বসু রোডে মেয়ে সম্পৃক্তার সঙ্গে আড্ডায় উত্তর কলকাতার বাম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ। শুক্রবার। ছবি: সুমন বল্লভ
ভোটের দিনের পরিকল্পনা সেরেছেন উত্তর কলকাতার তৃণমূল প্রার্থী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সকাল সকাল তিনি বসেছিলেন ডায়েরি-পেন নিয়ে। কোথায় কী ভাবে পৌঁছবেন, সেই পরিকল্পনার পাশাপাশি বুথ কর্মীদের সঙ্গেও দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেছেন সুদীপ। তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন নজিরবিহীন পদক্ষেপ করেছে। তবে ভোটে তার প্রভাব পড়বে না।’’ সুদীপের স্ত্রী তৃণমূলনেত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ মত ঠিক করে নিয়েছেন।’’
উত্তর কলকাতার বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিংহ অবশ্য বললেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন ঠিকই করেছে। এতে ভোটের দিনের প্রস্তুতির জন্য একটু বাড়তি সময় পাওয়া যাবে। নির্বাচন কমিশনেরও সুবিধে, আমাদেরও।’’ এ কথা বলেই সুষ্ঠু ভোটের দাবি জানাতে নির্বাচন কমিশনে ছুটেছেন তিনি।
দু’দিন আগেই প্রচার শেষ হয়ে যাওয়ায় এ দিন দলীয় কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা সেরে কাটিয়েছেন উত্তর কলকাতার বাম প্রার্থী কনীনিকা বসু ঘোষ। দিনভর বৈঠকের মধ্যেই কনীনিকার সঙ্গে ছিলেন তাঁর কন্যা সম্পৃক্তা। আশুতোষ কলেজের প্রাক্তনী সম্পৃক্তাও এ বার মায়ের হয়ে সমানে প্রচার চালিয়েছেন। ভোট মিটলে কি মাকে একটু বেশি করে বাড়িতে পাওয়া যাবে? মেয়ের অবশ্য উত্তর, ‘‘আমি এসএফআই কর্মী। মাকে রাজনীতিতেই দেখতে ভাল লাগে।’’