শুক্রবার লালবাজার থেকে সাংবাদিক বৈঠকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল শুক্রবার আরজি করের ঘটনা নিয়ে কথা বলতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। শুরুতেই তিনি দু’টি ভিডিয়ো দেখান। আন্দোলনের মধ্যে কখন কী ভাবে হামলা হল, সেই ছবি ধরা পড়েছে ভিডিয়োতে। ১.২৮ মিনিট এবং ১.০৮ মিনিটের দু’টি ভিডিয়োতে দেখা যায়, কী ভাবে হাজারো মানুষ হাসপাতালে ঢুকছেন। এক দিক থেকে ধোঁয়া ছাড়া হয়েছিল।
সিপি জানান, স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কোনও জমায়েত হলে, তা নিয়ন্ত্রণ করা তুলনামূলক কঠিন হয়। কারণ, সেখানে কোনও নেতা থাকে না। সারা শহর জুড়ে সে দিন নানা রকম জমায়েত হয়েছিল। সর্বত্র নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতে হয়েছিল পুলিশকে। কিন্তু আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে শহরজোড়া এই জমায়েত শান্তিপূর্ণ হবে বলেই মনে করেছিল পুলিশ। সিপি জানান, আন্দোলন যে হিংস্র হয়ে উঠবে, তা পুলিশ আন্দাজ করতে পারেনি। তাঁর কথায়, ‘‘একে আমাদের ব্যর্থতা বললে বলতে পারেন।’’ আরজি করে ডিসিপি পর্যায়ের পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছিল বলে জানান তিনি। কিন্তু পুলিশ আক্রান্ত হয়। ডিসিপি আহত হলে সাময়িক ভাবে পুলিশ ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল। সামাল দিতে তাই সময় লেগেছে।
আরজি করের ঘটনা নিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে সমাজমাধ্যমে। নানা তত্ত্ব উঠে আসছে। সেগুলি যে যেমন করে পারছেন, বিশ্লেষণ করছেন। প্রমাণ ছাড়া কোনও ধরনের গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেছেন সিপি। তিনি জানান, কখনও বলা হচ্ছে গণধর্ষণ হয়েছে, ১৫০ গ্রাম বীর্য পাওয়া গিয়েছে। কখনও আবার কোনও মহাপাত্র পদবিধারীকে বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের পদবির সঙ্গে জুড়ে দোষী হিসাবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সিপি বলেন, ‘‘আমাদের প্রমাণ দরকার। প্রমাণ ছাড়া কাউকে আমরা ধরতে পারি না। আমাদের কাউকে বাঁচানোর নেই। প্রমাণের অপেক্ষায় রয়েছি। দয়া করে গুজব ছড়াবেন না।’’
আরজি করের তদন্ত এখন সিবিআইয়ের হাতে। তাই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার প্রতি ভরসা রাখতে বলেছেন বিনীত। তারাও প্রমাণ-সহ কাজ করবেন এবং রহস্যের কিনারা করবেন। এমনটাই বিশ্বাস সিপি-র।
বুধবার রাতে আরজি করে হামলার ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, জানালেন পুলিশ কমিশনার।
সাংবাদিক বৈঠকে এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মৃতার পরিবারকে পুলিশ ফোন করেনি। আত্মহত্যার কথাও পুলিশ বলেনি। এটা নিয়ে অযথা গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’’
‘‘আরজি করের সামনে আন্দোলন যে আচমকা হিংসাত্মক হয়ে উঠবে, ভাবতে পারিনি। আমাদের ভাবনায় ভুল ছিল।’’ ভুল মেনে নিলেন পুলিশ কমিশনার।
হামলার মুহূর্তের ব্যাখ্যা দিয়ে সিপি বলেন, ‘‘ডিসিপির মাথা ফাটায় আমাদের ফোর্স ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছিল, সামলে নিতে সময় লাগে। আমাদের উপর হামলা চালানো হয়। একে আমাদের ব্যর্থতা বললে বলুন।’’
মৃতার ময়নাতদন্তের ভিডিয়ো দেওয়া হয়েছে সিবিআইকে, জানান সিপি। বলেন, ‘‘স্বচ্ছতার জন্য আর কী করতে হবে, আমার জানা নেই।’’
সিপি বলেন, ‘‘বুধবার রাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত আমরা করেছিলাম। ডিসি পর্যায়ের আধিকারিক ছিলেন। তা-ও ব্যারিকেড ভাঙা হয়েছে। ডিসিপি আহত হয়েছেন, পুলিশের আরও অনেকে আহত হয়েছেন।’’
সিপি জানান, মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেনি পুলিশ।
সিপি বলেন, ‘‘প্রথম দিন থেকে বলছি, আমাদের কিছু লুকোনোর নেই। গুজব ছড়াবেন না। প্রমাণ ছাড়া আমরা কাউকে গ্রেফতার করতে পারি না। আমরা প্রমাণ খুঁজছি। কাউকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি না।’’
গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেছেন সিপি। বলেছেন, ‘‘নানা ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। নানা ভাবে তার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। কেউ বলছেন গণধর্ষণ হয়েছে। কেউ বলছেন, ১৫০ গ্রাম বীর্য পাওয়া গেছে। কোথা থেকে এল এই তথ্য? এতে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে।’’
সিপি বলেন, ‘‘এই ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। আমাদের উপর আপনাদের ভরসা নেই। অন্তত ওদের উপর ভরসা রাখুন। তথ্যপ্রমাণ-সহ ওরা নিশ্চয়ই সুরাহা করবে। মানুষের কাছে অনুরোধ, এত গুজব ছড়াবেন না। আমরা প্রথম থেকেই স্বচ্ছ ভাবে কাজ করেছি।’’
ভিডিয়ো দেখিয়ে সিপি বলেন, ‘‘যখন স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে জমায়েত হয়, নেতা থাকে না, নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। সে দিন সারা শহরে জমায়েত ছিল। অনেক পুলিশ মোতায়েন করতে হয়েছিল। আরজি করে ডিসিপি ছিলেন। ফেসবুকে ছবি, ভিডিয়ো পোস্ট করা হয়েছে।’’
ভিডিয়ো দেখিয়ে সিপি জানান, ডিসি (নর্থ)-কে দেখা গিয়েছে আরজি কর চত্বরে।
যে ভিডিয়ো দেখাচ্ছেন সিপি, তাতে পিল পিল করে বহু মানুষকে হাসপাতালে ঢুকতে দেখা গিয়েছে।
আরজি করে হামলার মুহূর্তের ভিডিয়ো দেখানো হচ্ছে। কোন সময়ে কখন কী ভাবে এবং কারা হামলা চালাল, সেই ভিডিয়ো দেখাচ্ছেন সিপি।