নন্দরাম মার্কেট থেকে বাগরি মার্কেট। কলকাতায় বিভিন্ন সময়ে বারে বারে বিধ্বংসী আগুনে পুড়েছে একের পর এক বাজার, পুরনো মার্কেট কমপ্লেক্স। প্রতিবারই আগুন নেভার পর তদন্ত হয়েছে। সামনে এসেছে, পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা ছাড়া, ঘিঞ্জি বাজারে ব্যবসা করার তত্ত্ব। সামনে এসেছে কী ভাবে জতুগৃহ হয়ে থাকে এই বাজারগুলো।
প্রতি ক্ষেত্রেই দমকলের অভিযোগ থাকে, বাজারে ঢোকার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় কাজ করার সমস্যার কথা। বাগরির আগুনও এর ব্যতিক্রম নয়। এ বারেও আগুন নেভার পর তদন্ত হবে। তারপরেও কি আদৌ বদলাবে পরিস্থিতি? এক নজরে দেখে নেওয়া যাক শেষ ১০ বছরে শহরের বাজারে আগুন লাগার খতিয়ান।
১২ জানুয়ারি ২০০৮। বড়বাজার উড়ালপুলের গায়ে ১৩তলা নন্দরাম মার্কেটে আগুন লাগে। টানা চার দিন ধরে আগুন জ্বলেছিল। প্রায় চার হাজার দোকান ভস্মীভূত হয়। আগুন নেভার পরে ওই বহুতলের একটা অংশ বিপজ্জনক বলে ঘোষণা করেছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু ব্যবসায়ীদের বাধায় সেই বিপজ্জনক অংশ এখনও ভাঙা সম্ভব হয়নি।
২২ মার্চ ২০১২। উত্তর কলকাতার হাতিবাগান বাজারে আগুন। রাতে আড়াইটে নাগাদ আগুন লাগে। বাজারে প্রায় এক হাজার দোকান ছিল। তার একটা বড় অংশই পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কোনও হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ওই আগুন নেভাতে ছ’ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছিল দমকলকর্মীদের। ব্যবহার করা হয়েছিল ৩২টি ইঞ্জিন।
২৭ ফেব্রয়ারি ২০১৩। ভোর পৌনে চারটে নাগাদ বিধ্বংসী আগুন লাগে শিয়ালদহের সূর্য সেন মার্কেটে। পাঁচ তলা বাজারের মধ্যে আটকে পড়েছিলেন অনেকে। তাঁদের মধ্যে প্রচণ্ড ধোঁয়া এবং অপ্রশস্ত-ঘিঞ্জি রাস্তার জন্য ব্যহত হয় দমকলের উদ্ধার কাজ। ১৯ জনের মৃত্যু হয় এই ঘটনায়।
১৮ মে ২০১৫। ১৪৪ বছরের পুরনো নিউমার্কেটে একাধিক বার আগুন লেগেছে। সাম্প্রতিকতম বড় আগুন ছিল এটা। নিউমার্কেটের পুরনো অংশ অর্থাৎ হগ মার্কেটে আগুন লাগে। দমকলের ২০টি ইঞ্জিন আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দমকলের অভিযোগ ছিল, ঘিঞ্জি এলাকা তাঁদের কাজে বাধা তৈরি করেছিল। কোনও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি ওই আগুনে।
২২ জানুয়ারি ২০১৮। দমদম ক্যান্টনমেন্টে গোরাবাজারে আগুন। রাত দেড়টা নাগাদ আগুন লাগে। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় দু’জনের। দমকলের ২০টি ইঞ্জিনের সাহায্যে আগুন নেভানো হয়। গোটা বাজারে প্রায় ৫০০ দোকান ছিল। তার মধ্যে প্রায় দেড়শটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। বাজারের মধ্যেই ছিল একটি ব্যাঙ্ক। আগুনে ছাই হয়ে যায় ব্যাঙ্কের নথিও।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮। মধ্যরাতে আগুন লাগে ক্যানিং স্ট্রিটের বাগরি মার্কেটে। ১২ ঘণ্টা পরেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন। এ ক্ষেত্রেও সামনে আসে ঘিঞ্জি রাস্তা, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকার প্রসঙ্গ। প্রাণহানী না ঘটলেও ক্ষতি হয় বহু কোটি টাকার।