প্রাথমিকভাবে গোটা ঘটনাটি দুর্ঘটনা মনে হলেও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। ইনসেটে মৃত মহিলা গৌতমী বড়ুয়া। — নিজস্ব চিত্র।
সরশুনার ফ্ল্যাটে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হল বছর চব্বিশের এক তরুণীর। মঙ্গলবার ভোরবেলা ১০০ ডায়ালে ফোন পেয়ে ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ওই তরুণীকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার করে সরশুনা থানার পুলিশ। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় বিদ্যাসাগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে। সেখানেভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ ওই মহিলার মৃত্যু হয়। ঘটনাচক্রে সোমবারই ছিল তাঁর মায়ের মৃত্যু দিন।
পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত মহিলার নাম গৌতমী বড়ুয়া। তিনি সরশুনার সরকার হাট লেনে রণিত অ্যাপার্টমেন্টের একতলার ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। এ দিন ভোর পৌনে চারটের সময় যখন তাঁকে উদ্ধার করা হয় তখন গোটা ফ্ল্যাট ধোঁয়ায় ঢাকা ছিল।সরশুনা থানার পুলিশ এবং গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকরা ওই ঘরে গৌতমীর বিছানা পোড়া অবস্থায় দেখতে পান। তবে গৌতমীর দেহে পুড়ে যাওয়ার বড় কোনও চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের ধারণা, বদ্ধ ঘরে আগুন থেকে তৈরি হওয়া কার্বন মনোক্সাইড থেকেই দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন গৌতমী। চিকিৎসকদেক ইঙ্গিত, গৌতমী মত্ত ছিলেন। তদন্তকারীরা তাঁর ঘরে পোড়া সিগারেটের টুকরো এবং মদ্যপানের প্রমাণ পেয়েছেন বলে তদন্তকারীদের সূত্রে খবর।
তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, রণিত অ্যাপার্টমেন্টের জমিটি গৌতমীর মায়ের পারিবারিক সম্পত্তি। সেই সূত্রেই একতলার ওই ফ্ল্যাটটি পান গৌতমীর মা। ২০১৬ সালে মারা যান গৌতমীর মা। তারপর থেকে একাই থাকতেন তিনি। ওই অ্যাপার্টমেন্টেই তিনতলায় থাকেন গৌতমীর মামা-মামী। এ দিন তাঁর মামী শম্পা দে বলেন,‘‘দোতলায় আমার যে জা থাকেন, ভোরবেলা তিনি আমাকে খবর দেন। তিনি জানান, একতলা থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। আমরা নীচে নেমে দেখি গৌতমীর ফ্ল্যাটের দরজার তলা দিয়ে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। দরজা বন্ধ ছিল।আমরা দরজায় ধাক্কা দিই। বার বার ডাকার পরও কোনও সাড়া না পেয়ে পুলিশকে ফোন করি।”
আরও পড়ুন-লুঠপাট করে সব নিয়ে গেলেও গ্যাস বুকিংয়ের জন্য সিম ও ২ হাজার টাকা দিয়ে গেল দুষ্কৃতীরা
গৌতমী বড়ুয়ার আধার কার্ড
রিমিতা দে ওই বাড়ির দোতলায় থাকেন। তিনিই প্রথম দেখতে পান, ওই ঘর থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। তিনি বলেন,‘‘পুলিশ দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকে। দরজার কাছেই মেঝেতে অচৈতন্য হয়ে পড়ে ছিলেন গৌতমী। তবে তখনও তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল।”
ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গৌতমী বিবাহিত হলেও স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। সোমবার তাঁর মায়ের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী ছিল। ঘরে রাতে ধূপও জ্বালিয়েছিলেন তিনি। রাতে শোওয়ার সময় মশার ধূপ জ্বালাতেন বলেও জানা গিয়েছে ওই পরিবার সূত্রে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের ধারণা, সিগারেট বা ধূপ থেকে কোনও ভাবে আগুন লেগে যায় গৌতমীর বিছানায়। কিন্তু মদ্যপানের কারণে তিনি প্রথমে বুঝতে পারেননি। ঘুমের মধ্যেই বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড তাঁর শরীরে ঢোকে এবং সমস্ত পেশী শিথিল করে দেয়। যখন তিনি আগুনের বিষয়টি বুঝতে পারেন, তখন তাঁর শরীরে শক্তি ছিল না। তিনি কোনও মতে বিছানা থেকে উঠে দরজা পর্যন্ত আসতে পারলেও তা খুলে বাইরে যেতে পারেননি।
তদন্তকারীরা প্রাথমিকভাবে গোটা ঘটনাটি দুর্ঘটনা মনে করলেও, অন্যান্য দিকও খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।