শহর কলকাতার নজরদারির ছবিটা ফের বেআব্রু করে দিল একটি শপিং মলে এক অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এই ঘটনায় স্রেফ শহরই নয়, শহরতলির ক্ষেত্রেও নজরদারিতে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার রাতে দক্ষিণ কলকাতার ওই মলের পার্কিং এলাকায় এক যুবকের রক্তাক্ত দেহ মেলে। প্রাথমিক তদন্তে উঁচু থেকে পড়ে মৃত্যুর কথা বলা হলেও কত উচ্চতা থেকে ওই যুবক পড়ে যান, তা নিয়ে ধন্দ কাটেনি। পুলিশের দাবি, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে স্পষ্ট ভাবে তা বোঝা যাচ্ছে না। রক্ষীদের নজর এড়িয়ে কী ভাবে এমন ঘটল, ধোঁয়াশা রয়েছে তা নিয়েও।
নানা অপরাধ বা দুর্ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ তদন্তের একটি বড় মাধ্যম। শপিং মল-সহ শহরের নানা জায়গায় সিসিটিভি বেড়েছে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই তার ফুটেজ স্পষ্ট নয়। সিসিটিভির কারিগরি ত্রুটি, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবের পাশাপাশি বিভিন্ন ঘটনায় নিরাপত্তা রক্ষীদের গাফিলতির অভিযোগও উঠছে। বুধবারের ঘটনার পরে তাই ফের প্রশ্নের মুখে শহরের অন্য শপিং মলগুলির নজরদারি।
শহরবাসীর প্রশ্ন, নজরদারি নিয়ে পুলিশ-প্রশাসন বা বিভিন্ন মল যা দাবি করে, তার পরেও এমন ঘটছে কী করে? তাঁদের আশঙ্কা, এর সুযোগে দুষ্কৃতীরা বড় হামলাও ঘটাতে পারে। পুলিশের একাংশেরও বক্তব্য, সিসিটিভিতে নজরদারির উপরে নজর রাখা হলেও কার্যত তা নিয়ম রক্ষারই সামিল।
কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন মলের কর্তৃপক্ষ অবশ্য নজরদারিতে গাফিলতির কথা মানতে চাননি। যদিও তাঁরাও অনেকে মনে করছেন, নজরদারি ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করা জরুরি। সিসি ক্যামেরার পরিষেবাদানকারী এক বেসরকারি সংস্থার কর্ণধার অনির্বাণ মিশ্রও জানান, বর্তমানে শহর ও শহরতলির সিসিটিভির প্রযুক্তি পুরনো। বহু ক্ষেত্রেই তার ফুটেজ কাজে লাগে না। কিন্তু তাঁর বক্তব্য, আধুনিক প্রযুক্তির খরচ অনেক গুণ বেশি। ফলে ইচ্ছে থাকলেও উপায় থাকছে না।
হাওড়ার অবনী মলের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সুবীর দাসের অবশ্য দাবি, তাঁদের আধুনিক প্রযুক্তির ক্যামেরায় ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চলে। উপরন্তু নজরদারদেরও নজরে রাখা হয়। এ ছাড়া, রক্ষীদের সঙ্গে সাদা পোশাকেও মলে নজরদারি চলে বলে জানান তিনি। সল্টলেক সিটি সেন্টারের অন্যতম কর্মকর্তা বি কে সিংহও বলেন, ‘‘আমাদের সিসিটিভিতে আধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে। সাধারণ নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও নজরদারি চলছে।’’
তবে সর্বত্র সিসিটিভি ঠিক রয়েছে কি না, ফুটেজ স্পষ্ট কি না-সহ নজরদারি ব্যবস্থার যাবতীয় তথ্য পুলিশের কাছে কতটা আছে, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েও। কারণ, সতর্কবার্তা এবং জাতীয় উৎসবের সময় ছাড়া তেমন নজরদারি হয় না বলেই অভিযোগ। বিধাননগর, হাওড়া এবং কলকাতা পুলিশের কর্তাদের একাংশের যদিও দাবি, নিয়মিত নজরদারি চলে। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে তা বেড়েছে। তবে পুলিশকর্তাদের দাবি, নিশ্চিত ভাবেই সিসিটিভির নজরদারি থেকে সাধারণ নজরদারি ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করা দরকার। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (সদর) রাজীব মিশ্র জানান, এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।