প্রতিবাদ: ফ্লেক্স ছিঁড়ে বিক্ষোভ। সোমবার, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম সংলগ্ন চত্বরে। ছবি: সুমন বল্লভ
আশ্বাস ছিল, দাবি পূরণ হবে। কিন্তু তা হয়নি। আর তাতেই সোমবার বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম এবং সংলগ্ন চত্বর। এই ঘটনার জেরে স্টেডিয়ামেই আটকে পড়েন শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক। পুলিশ তাঁকে কোনও ক্রমে উদ্ধার করে আনে। অভিযোগ, স্টেডিয়ামের ভিতরের পরিস্থিতিও যথেষ্ট উত্তপ্ত ছিল।
এ দিন সারা বাংলা সেল্ফ এমপ্লয়মেন্ট লেবার অর্গানাইজ়েশনের (এসএলও) সমাবেশ ছিল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে। ওই সংগঠনের সদস্যদের দাবি, সেখানে তাঁদের মাসিক ভাতা ও স্থায়ীকরণের বিষয়ে ঘোষণা করার কথা ছিল শ্রমমন্ত্রীর। কিন্তু তাঁদের স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় আনা ছাড়া আর কোনও কথা বলেননি তিনি। তাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সংগঠনের সদস্যেরা। যদিও শ্রমমন্ত্রীর দাবি, ‘‘কোনও সংগঠনের মঞ্চ থেকে সরকারি ঘোষণা করা যায় না। আজ এমন কোনও ঘোষণার কথাও ছিল না।’’ মন্ত্রীর দাবি, এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এসএলও-র প্রায় সাড়ে ছ’হাজার সদস্য রয়েছেন। তার মধ্যে চার হাজার জনের নিয়োগ হয়েছিল বাম আমলে। বাকি আড়াই হাজারের তৃণমূল জমানায়।
এ দিন গাঁটের কড়ি খরচ করে বিভিন্ন জায়গা থেকে নেতাজি ইন্ডোরে এসেছিলেন এসএলও-র সদস্যেরা। ‘সুখবর’ শোনার আশায়। সমাবেশে শ্রমমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ক্রেতা-সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। আগে বক্তৃতা করে চলে যান বিদ্যুৎমন্ত্রী। বিক্ষোভ শুরুর মুখে বেরিয়ে যান ক্রেতা-সুরক্ষা এবং পুরমন্ত্রী। শ্রমমন্ত্রীর বক্তৃতায় ‘আশ্বাস’ না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন সংগঠনের সদস্যেরা। মঞ্চ সংলগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সংবলিত ফ্লেক্স লক্ষ্য করে চেয়ার ছোড়া হয়। স্টেডিয়ামের প্রবেশদ্বারে থাকা তোরণও ছিঁড়ে ফেলা হয়। গেটের সামনে সমাবেশে হাজির থাকা লোকজন ভিড় জমান। অনেকে রাস্তায় বসে পড়েন। ফলে স্টেডিয়াম সংলগ্ন রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। সেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কি হয়। অভিযোগ, মহিলা পুলিশ না থাকা সত্ত্বেও মহিলা বিক্ষোভকারীদের গায়ে হাত তোলা হয়। তবে কিছু ক্ষণের মধ্যেই বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে সক্ষম হয় পুলিশ। সমাবেশে যোগ দিতে আসা অনেকেই অবশ্য নিজেদের তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বলে দাবি করেছেন।
যাঁদের মাসিক আয় সাড়ে ছ’হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম, সেই অসংগঠিত শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার বন্দোবস্ত চালু করেছিল রাজ্য সরকার। সামাজিক সুরক্ষায় থাকা উপভোক্তারা এর জন্য দিতেন মাসে ২৫ টাকা করে। সরকারের তরফে দেওয়া হত ৩০ টাকা। ৬০ বছর বয়সে পৌঁছলে ওই টাকা এবং তার সুদ পাওয়ার কথা সেই উপভোক্তাদের। ওই ২৫ টাকা শ্রমিকদের (উপভোক্তা) কাছ থেকে সংগ্রহ করলে উপভোক্তা-পিছু দু’টাকা করে কমিশন পেতেন এসএলও সদস্যেরা। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সরকার পুরো টাকা দিয়ে দেওয়ায় আর কমিশন পাওয়ার সুবিধা ছিল না তাঁদের। বিক্ষোভের পিছনে সেটাও অন্যতম কারণ বলে দাবি সংগঠনের। তাঁদের দাবি, শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কেও বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এখনও সুরাহা হয়নি।
আজ, মঙ্গলবার এ বিষয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রশাসনিক আধিকারিকেরা আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তাতে দাবি পূরণ না হলে পরশু থেকে বিভিন্ন জেলায় অবস্থান-বিক্ষোভ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এসএলও-র সদস্যেরা।