পুজোর শোভাযাত্রায় কুমোরটুলির প্রতিমা। বৃহস্পতিবার, ধর্মতলায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
দুর্গাপুজোর হেরিটেজ-স্বীকৃতি বাড়তি মনোবল জুগিয়েছে এ শহরের কুমোরপাড়াকে। বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের আয়োজিত পুজোর বিশেষ পদযাত্রায় নজর কেড়েছে কুমোরটুলির তৈরি ১০টি প্রতিমা। হেঁটেছেন কুমোরটুলির শিল্পীরাও। সেই সঙ্গে এ বছর বেড়েছে প্রতিমার বায়নার সংখ্যাও। মৃৎশিল্পীরা জানাচ্ছেন, গত দু’বছরের কোভিড-আতঙ্ক কাটিয়ে এ বার বায়না এতটাই বেশি এসেছে যে, হাতে আর সময় না থাকায় অনেককেই কাজ ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। ফলে পুজোর এক মাস আগেই রীতিমতো খুশির হাওয়া কুমোরপাড়ায়।
গত দু’বছরে কোভিড-আতঙ্ক থাবা বসিয়েছিল কুমোরটুলিতে। কিন্তু এ বারের ছবিটা সম্পূর্ণ উল্টো। শিল্পী মিন্টু পাল জানাচ্ছেন, গত বছর ৩০টি প্রতিমা তৈরি করেছিলেন। এ বারে প্রতিমা তৈরির সংখ্যা ৪০। সেই সঙ্গে বিদেশে পাঠানো প্রতিমার সংখ্যাও বেড়েছে। মিন্টুর কথায়, ‘‘গত বছর আমার দু’টি প্রতিমা বিদেশে গিয়েছিল। এ বার সেখানে গিয়েছে ১৪টি।’’
পুজোর এক মাস আগে কুমোরটুলিতে এখন সাজো সাজো রব। করোনার প্রকোপ কম থাকায় রোজই সেখানে বাড়ছে ভিড়। শেষ লগ্নে অনেকে কম উচ্চতার প্রতিমা তৈরির বরাত দিতে আসছেন সেখানে। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কার্তিক পালের কথায়, ‘‘কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়ায় শিল্পীদের ভাগ্য ফিরেছে। আমরা এ বার অনেক বায়না পাচ্ছি। পুজো শুরুর এক মাস আগেই কুমোরটুলি থেকে তৈরি ১০টি প্রতিমা মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রায় জায়গা পেল। এটাও শিল্পীদের কাছে বড় পাওনা।’’
রাতদিন এক করে এখন কুমোরটুলিতে কাজ করে চলেছেন শিল্পী ও কারিগরেরা। সেই সঙ্গে ব্যস্ততা বেড়েছে কুমোরটুলির প্রতিমার সাজসজ্জার দোকানগুলিতেও। প্রতি বছর সেখান থেকেই ভিন্ রাজ্যের পুজো উদ্যোক্তাদের কাছে প্রতিমার সাজসজ্জার সরঞ্জাম পাঠানো হয়ে থাকে। কিন্তু গত দু’বছর তাঁরাও লোকসানের মুখ দেখেছেন। তবে এ বছর সংক্রমণের দাপট কম থাকায় ফের ঘুরে দাঁড়িয়েছে ওই সমস্ত দোকানের ব্যবসা। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু পালের কথায়, ‘‘সেপ্টেম্বর মাসের আবহাওয়া কেমন থাকে, সে দিকেই এখন আমাদের তাকিয়ে থাকতে হবে। চলতি বর্ষায় এখনও পর্যন্ত সেই রকম বৃষ্টি হয়নি। তাই সেপ্টেম্বরে আবহাওয়া কতটা খামখেয়ালিপনা করবে, সেটা বোঝা দায়। ওই সময়েই প্রতিমা তৈরি শেষ পর্যায়ে থাকবে। তাই তখন বৃষ্টি হওয়া মানেই আমাদের সমস্যা।’’