ঢিমেতাল: ঝিমিয়ে রয়েছে কুমোরটুলি। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
পুজোর আর বাকি ৬৯ দিন। অন্য বছর এই সময়ে কুমোরটুলিতে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। কিন্তু এ বার জিএসটি-র (পণ্য ও পরিষেবা কর) কোপে মাথায় হাত সেখানকার শিল্পীদের।
জিএসটি-র জন্য কাপড়, চুল, পেরেক, দ়়ড়ি, রং, টিনের তৈরি অস্ত্রের মতোই দাম বেড়েছে প্রতিমা ও আনুষঙ্গিক জিনিসের, এমনই জানাচ্ছেন শিল্পীরা। আবার প্রতিমার সাজ কেনা হয় যে সব ব্যবসায়ীদের থেকে, তাঁদের বেশিরভাগই জিএসটি আওতাভুক্ত না হওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সাংস্কৃতিক সমিতির সম্পাদক রঞ্জিত সরকারের কথায়, ‘‘ছোট ব্যবসায়ীদের জিএসটি নম্বর না থাকায় আমরা তাঁদের থেকে কেনা সামগ্রী অন্য ব্যবসায়ীদের বিক্রি করার সময়ে ছাড় (ইনপুট ক্রেডিট) পাব না। ফলে যাঁদের জিএসটি নম্বর নেই, তাঁদের থেকে সামগ্রী কিনতে চাইছেন না বেশির ভাগ শিল্পী। প্রতিমার সাজ পেতেও সমস্যা হচ্ছে।’’
একই ভাবে দূর-দূরান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা প্রতিমার সাজ কিনতে কুমোরটুলিতে আসেন। সেই ব্যবসাও হারানোর আশঙ্কায় শিল্পীরা। তাঁদের দাবি, প্রতি বছর বিহার, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা মিলে প্রায় ৩০ জন বড় ব্যবসায়ী প্রতিমার সাজ কিনে নিয়ে যান। কিন্তু জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে এখনও তাঁরা কোনও যোগাযোগ করেননি। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তথা পরোক্ষ কর বিশেষজ্ঞ সৌরভ চন্দ্র বলছেন, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসার সুবিধার্থে ছোট, বড় সব ব্যবসায়ীদের জিএসটি নম্বর নেওয়া উচিত। না হলে তাঁরা ইনপুট ক্রেডিটে ছাড়ের সুবিধা পাবেন না।’’
আরও পড়ুন: চটজলদি খবর পেতে নয়া অ্যাপ কলকাতা পুলিশের
শিল্পীদের অভিযোগ, কাঁচা মালের দাম বাড়লেও প্রতিমার দাম বেশি দিতে রাজি হচ্ছেন না ক্রেতারা। শহরের বেশিরভাগ বড় পুজোর বায়না কমপক্ষে ৬ মাস আগে হয়ে যায়। ফলে জিএসটি চালু হওয়ায় পরে হঠাৎ করে প্রতিমার দাম বাড়াতে গিয়ে সমস্যা হচ্ছে। কুমোরটুলির মৃৎশিল্প সাংস্কৃতিক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বাবু পাল জানান, পরিস্থিতির চাপে প্রতিমার দাম বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই। শিল্পীরা জানাচ্ছেন, প্রতিমার এক-একটি সেটে দুর্গা, অসুর, কার্তিক, গণেশ, সরস্বতীকে সাজাতেই প্রায় ৩০ মিটার কাপড় লাগে। জিএসটি-র জেরে অপেক্ষাকৃত বেশি দামে সেই কাপড় কিনতে হবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
হঠাৎ করে বাজেট বাড়ানো সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন শহরের ছোট-বড় সব পুজো কমিটি। কুমোরটুলি পার্কের সদস্য পবিত্র বসাকের কথায়, ‘‘আমাদের পুজোর জন্য এপ্রিলেই প্রতিমা থেকে শুরু করে মণ্ডপ তৈরি— সবেতে বায়না করেছি। কিন্তু হঠাৎ জুলাইয়ের পরে আমাদের বলা হচ্ছে, জিএসটি-র জন্য বাজেট বাড়াতে হবে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, আমরা তো আগেই চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। তা হলে বাড়তি দাম দেব কেন?’’
পাশাপাশি কুমোরটুলি সূত্রের খবর, প্রতিমার চুল আসে মূলত বজবজ, বারাসত ও জয়নগর থেকে। কিন্তু সেই চুলের জন্যও এ বার বাড়তি টাকা দিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিল্পীরা। কুমোরটুলির মৃৎশিল্পী সমিতির সম্পাদক কার্তিক পালের অভিযোগ, ‘‘প্রতিমার সাজের সব সামগ্রীরই দাম বাড়ায় সব চেয়ে বেশি সমস্যা হচ্ছে আমাদের। আমরা চড়া দামে ওই সব জিনিস কিনে প্রতিমা তৈরি করলেও যাঁরা প্রতিমার বায়না দিতে আসছেন, তাঁরা বাজেট বাড়াতে চাইছেন না।’’