ফাইল চিত্র।
বেআইনি নির্মাণের অভিযোগ নিয়ে অনেক দিন ধরেই নানা ক্ষোভ রয়েছে বিধাননগরে। লোকবল ও দুর্বল পরিকাঠামোর কারণে যত অভিযোগ জমা পড়ে, সেই তুলনায় অনেক কম ব্যবস্থা নেওয়া যায়। এ সব নিয়ে অনেক দিন ধরেই ঘনিষ্ঠ মহলে ক্ষোভ প্রকাশ করছিলেন স্বয়ং বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী। সোমবার পুরসভার বোর্ডের বৈঠকে সেই ক্ষোভ ব্যক্ত করে তিনি নিজেকে ‘ঢাল-তলোয়ারহীন’ বলে দাবি করে ফেলেন বলেই খবর।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবারের বৈঠকে জাল নকশায় নির্মাণ ও সরকারি জমির উপরে বেআইনি নির্মাণ নিয়ে সরব হয়েছিলেন ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়দেব নস্কর ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ নাগ। জয়দেব সরাসরি পুর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েও উদাসীন থাকার অভিযোগ করেন বলেও খবর। এমনকি, একটি বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে পুলিশ ও পুরসভার কাছে তাঁর দায়ের করা অভিযোগের কাগজও বোর্ডের বৈঠকে জয়দেব দেখান বলে জানা গিয়েছে।
সম্প্রতি বিধাননগর পুরসভার বাগুইআটি-সাহাপাড়া এলাকায় একটি বহুতলের চারতলা থেকে পড়ে গিয়ে এক শ্রমিকের হাত বাদ যায়। ছ’তলার দু’টি টাওয়ার-বিশিষ্ট ওই নির্মাণের ছাড়পত্র নিয়ে সন্দেহ রয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদেরই। সূত্রের খবর, বিধাননগর পুর এলাকার রাজারহাটে এমন অনেক বহুতলের নকশার বৈধতা নিয়ে অনেক দিন ধরেই অভিযোগ উঠছে। এমনকি, এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে।
বোর্ডের বৈঠকে তাঁর ক্ষোভ প্রকাশের কথা স্বীকার করে জয়দেব মঙ্গলবার জানান, তাঁর ওয়ার্ডে সরকারি জমির উপরেই বেআইনি ভাবে নির্মাণ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পার্কের জমির উপরে নির্মাণের কাজ হচ্ছে প্রায় দু’বছর ধরে। পুলিশ ও পুরসভা, দু’জায়গাতেই জানিয়েছিলাম। বোর্ডের বৈঠকে সেই কাগজও দেখিয়েছি। কিন্তু নির্মাণ বন্ধ হয়নি।’’
একই ভাবে প্রসেনজিৎ নাগ এ দিন বলেন, ‘‘জাল নকশায় তৈরি বহুতলে রাজারহাট ছেয়ে গিয়েছে। ক্রেতারা ফ্ল্যাট কিনে রেজিস্ট্রি করলেও মিউটেশন করাতে পারছেন না। পুরসভার কোনও আয় হচ্ছে না। আগামী দিনে এর ফল পুরসভাকেই ভুগতে হবে। বোর্ডের বৈঠকে সব দিকটাই তুলে ধরেছি।’’ জাল নকশার মাধ্যমে হওয়া বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে তদন্ত দাবি করে তিনি পুলিশি হস্তক্ষেপও চেয়েছেন বলে খবর।
পুরসভা সূত্রের খবর, চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত বৈঠকে দাবি করেন, তিনি মেয়র থাকার সময়ে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড-সহ অনেকগুলি জায়গায় বেআইনি নির্মাণ ভাঙা হয়েছে। নির্মাণকারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করার কথাও জানান তিনি। সব্যসাচী অবশ্য এ দিন শুধু বলেন, ‘‘দুই কাউন্সিলর জাল নকশা, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে তাঁদের বক্তব্য পেশ করে পুরসভার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। মেয়রও অভিযোগ খতিয়ে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’’
উল্লেখ্য, বিধাননগর ২০১৫ সালে কর্পোরেশনে উন্নীত হলেও পরিকাঠামো ও লোকবলের অভাবে ঝড়ে গাছ পড়া, রাস্তায় জল জমা কিংবা বেআইনি নির্মাণের মতো বহু সমস্যার মোকাবিলার কাজে পুরসভাকে নির্ভর করতে হয় নির্দিষ্ট কয়েক জন আধিকারিক, নয়তো এলাকার কাউন্সিলরদের উপরে। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে কাউন্সিলরদের অনুগামীরাই বেআইনি নির্মাণকারীদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেন।
সূত্রের খবর, সোমবারের বৈঠকে সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তীও বলে ফেলেন, ‘‘আমি মেয়র, কিন্তু ঢাল-তলোয়ার নেই। লোকবল নেই। আপনারাই বলুন কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।’’ যদিও কৃষ্ণা এ দিন তাঁর ওই বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি শুধু বলেন, ‘‘কাউন্সিলরেরা না বললেও কোনও অভিযোগ পেলে সব সময়েই পুরসভা ব্যবস্থা নেয়।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।