একশো বছর আগে উলটোডাঙার ভাড়াবাড়িতে ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গড়ে তুলেছিলেন প্রথম গৌড়ীয় মঠ। উদ্দেশ্য ছিল শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভাবনাকে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনমানসে ছড়িয়ে দেওয়া। ১৯৩০ সালে বাগবাজারের গঙ্গাতীরবর্তী চল্লিশ কাঠা জমির উপর ব্যবসায়ী জগবন্ধু দত্তের আর্থিক সহায়তায় গড়ে ওঠে গৌড়ীয় মঠের নিজস্ব কেন্দ্র। এখান থেকেই প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ৬৪টি শাখা-মঠের কাজ পরিচালনা করতেন। বাগবাজারের ১৬এ কালীপ্রসাদ চক্রবর্তী স্ট্রিটে গৌড়ীয় মিশন প্রাঙ্গণেই দশ কাঠা জমির উপর গড়ে উঠেছে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বিষয়ক একটি আধুনিক সংগ্রহশালা, জানা গেল সম্পাদক ভক্তিসুন্দর সন্ন্যাসী মহারাজের কথায়। ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ এই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সংগ্রহশালার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। পাঁচ বছরের শ্রমে পূর্ণতা পেয়েছে সেই পরিকল্পনা। ১২ কোটি টাকা খরচের মধ্যে ৫ কোটি টাকা কেন্দ্রীয় সরকারি অনুদান, বাকি ভক্ত ও অনুরাগীদের সাহায্য। চার তলা ভবনের প্রবেশপথেই শ্রীচৈতন্যদেবের বিশাল পাথরের মূর্তি, বিভিন্ন তলে মডেল, আলোকচিত্র, মুরাল ও চিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে তাঁর জীবনবৃত্তান্ত। ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চৈতন্য-পরিকরদের কাজকর্ম। আছে ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের জীবন ও দর্শন, সঙ্গে প্রতিষ্ঠাতা ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীর জীবনচর্যা ও গৌড়ীয় মঠ স্থাপনের কালানুক্রমিক ইতিবৃত্ত। থাকছে শ্রীচৈতন্যদেবের হস্তাক্ষর, প্রাচীন পুঁথি, চৈতন্য-বিষয়ক বইপত্র, মনীষীদের নানা ব্যক্তিগত সামগ্রী। মিউজিয়ামের ভারপ্রাপ্ত মধুসূদন মহারাজের মতে, মহাপ্রভুর কর্মকাণ্ড ও গৌড়ীয় বৈষ্ণব আন্দোলনের সম্যক ছবি এই প্রথম কলকাতায় কোনও সংগ্রহশালার মাধ্যমে তুলে ধরা হল। সাধারণের জন্য এর দরজা খুলে যেতে আর খুব বেশি দেরি নেই।
ছবি: শুভেন্দু দাস
প্রয়াণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা নিয়ে স্নাতক স্তরে বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নজরে পড়েছিলেন তিনি। ছিন্নমূল হয়ে এ-পারে চলে আসার পর সত্যেন্দ্রনাথই প্লেন ভাড়া দিয়ে তাঁকে জার্মানি পাঠান উচ্চ শিক্ষার জন্য। দেশে ফিরলে প্রশান্ত মহলানবিশ নিয়োগ করলেন আইএসআই-এর গবেষক হিসাবে। শুরু হল বিজ্ঞানী রতনলাল ব্রহ্মচারীর ছয় দশকের বেশি সময় জুড়ে নিরন্তর বিজ্ঞান সাধনা। ছোটবেলা থেকেই তিনি তন্নিষ্ঠ প্রকৃতি পর্যবেক্ষক, ড. বীরেশ গুহ-র সান্নিধ্যে জীব রসায়নের দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। গো়ড়ায় মলিকিউলার এমব্রায়োলজি এবং পরে ফেরোমন নিয়ে গবেষণাপত্রগুলি তাঁকে বিজ্ঞানের উচ্চাসনে প্রতিষ্ঠিত করেছিল সারা বিশ্বে। বন্যপ্রাণ নিয়ে গবেষণার টানে বারবার ছুটে গিয়েছেন আফ্রিকা। বন্ধুত্ব ছিল ডিয়ান ফসি, জর্জ অ্যাডামসন-দের সঙ্গে। ছোট ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞানের নেশা ধরাতে তাঁর উৎসাহ ছিল অফুরান। ১৩ ফেব্রুয়ারি চলে গেলেন ছিয়াশি বছরের বিজ্ঞান সাধক।
ছবি: শুভব্রত ঘোষ
পরভা নাচ
ধলভূমগড় ও চিলকিগড় রাজঐতিহ্যে মুখোশ নাচের ছিল স্বতন্ত্র ধারা। ঝাড়গ্রামের চিলকিগড়ে চালার কাঠামোসহ কাঠের দেহকাণ্ডের ‘পরভা’ মুখোশ-নাচে ধবলদেব রাজপরিবারের সদস্যরাও অংশ নিতেন। বাবু-ছো, হটনাগর, মাছি-পিটকা, গণেশঠাকুর ইত্যাদি ছিল জনপ্রিয় পালা। এ-সব অবলুপ্ত হয়েছে তাও প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল। এই নাচের পুনরুজ্জীবন ঘটল রাজ্য তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের উদ্যোগে। মুখোশের উপাদান এখন পুরুলিয়ার ছো-মুখোশের কৃৎকৌশলে হলেও প্রবীণ শিল্পী চিলকিগড়ের ভুবন খামরুই ও দুবড়ার নাড়ু মল্লিকের অভিজ্ঞতায় সেই পুরনো নৃত্যধারা পরিচালনা করলেন পরিমল দোলই। নবরূপায়ণে প্রথম প্রকাশ ঘটল বিশ্ববাংলা লোকসংস্কৃতি উৎসবে।
ছবি: দীপঙ্কর ঘোষ
বসন্ত উৎসব
প্রকৃতির রঙের খেলায় শামিল হতেই রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসবের প্রবর্তন করেন। মনোজ মুরলী নায়ারের পরিচালনায় ‘ডাকঘর’ গোষ্ঠী শান্তিনিকেতনের আদলে ‘ওরে গৃহবাসী, খোল দ্বার খোল লাগল যে দোল’ গানের সঙ্গে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সুসজ্জিত ‘বসন্ত উৎসব এবং বসন্ত মেলা’ প্রতি বছর আয়োজন করে থাকে। এ বছর অনুষ্ঠান ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টেয় গোল্ডেন একর, পি সি চন্দ্র গার্ডেন-এ। প্রথমার্ধে রবীন্দ্রনাথের বসন্ত পর্যায়ের গানের সঙ্গে নৃত্য ও দ্বিতীয়ার্ধে নৃত্যনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’। থাকবেন মনোজ মুরলী ও মনীষা মুরলী নায়ার, স্বাগতালক্ষ্মী, অলকানন্দা রায়, লোপামুদ্রা, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ।
দিকচিহ্ন
পূর্ব কলকাতার জলাজমিতে প্রকৃতিদেবী যে-পরম আশীর্বাদের ডালি সাজিয়ে রেখে দিয়েছিলেন তার প্রতি অন্ধ ছিলাম আমরা, যত দিন না বিজ্ঞানী ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ এসে আমাদের চোখ খুলে দিলেন। বর্জ্য-শোধনের পরিবেশসম্মত নিখুঁত পদ্ধতি হিসাবে ইস্ট ক্যালকাটা ওয়েটল্যান্ডস আজ বিশ্বের পরিবেশবিদদের কাছে এক দিকচিহ্ন। খেটে-খাওয়া মানুষ তাঁদের জলমাটি-মাখা কাণ্ডজ্ঞান আর হাড়ভাঙা মেহনতে যে-বিজ্ঞানকে বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন বাঁচার তাগিদে, ধ্রুবজ্যোতি তাকেই আরও পরিশোধিত করে তোলেন তাঁর বৈজ্ঞানিক অন্তর্দৃষ্টির প্রয়োগে। উন্নয়নের নামাবলি গায়ে-দেওয়া ‘ল্যান্ড মাফিয়া’ আর রাজনীতিবিদরা এই প্রয়াসকে কোনও কালেই বন্ধু-চোখে দেখেনি। প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানী মহল থেকেও মেলেনি খুব উষ্ণ সাড়া। সুতরাং প্রায় একা হাতে লড়ে গিয়েছিলেন ধ্রুবজ্যোতি। দেশে-বিদেশে তাঁর কাজ নিয়ে ধন্য ধন্য পড়ে গেলেও আমরা নির্বিকার। তাই খুব চুপচাপ চলে গেলেন তিনি। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টায় কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের তিন তলায় বই-চিত্র সভাঘরে তাঁর স্মরণসভা।
নাট্য-বক্তৃতা
শুরু করেছিলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে শঙ্খ ঘোষ, অশোক মিত্র, রামেন্দু মজুমদার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, অমল পালেকর এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায়। প্রয়াত কুমার রায়ের স্মরণে তাঁরই জন্মদিনে নাট্য বক্তৃতামালার এ-বার অষ্টম বর্ষ। আয়োজনে বহুরূপী ও কুমার রায় স্মৃতিরক্ষা সমিতি। এ-বারের বক্তা সদানন্দ মেনন। ২ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায় গোর্কি সদনে সদানন্দ বলবেন ‘সন্ত্রাসের সময় নাটক’ নিয়ে। চেন্নাইয়ের এশিয়ান কলেজ অব জার্নালিজমের শিক্ষক সদানন্দের সঙ্গে থাকবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দিনই আগের বছরের বক্তৃতার পুস্তিকা প্রকাশ করবেন শঙ্খবাবু। ‘ক্রান্তিকাল’ নাট্য সংস্থা পাবে কুমার রায় স্মৃতি স্মারক সম্মান। সেই সঙ্গেই স্মরণ করা হবে ম্যাক্সিম গোর্কির জন্মের সার্ধশতবর্ষ।
শতবর্ষে
১৯১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি লেডি অবলা বসু ‘নারীশিক্ষা সমিতি’ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বামী জগদীশচন্দ্র বসুর সঙ্গে বিদেশ সফরে গিয়ে বিভিন্ন দেশের বিশেষত জাপানের শিক্ষাপ্রণালী দেখে বাংলার মেয়েদের জন্য প্রাথমিক শিক্ষার প্রসারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন অবলা বসু। কিছুটা সরকারি সাহায্যে আর অনেকখানি সাধারণ মানুষের বদান্যতায় কাজ শুরু হয়। ১৯১৯ সালের এপ্রিল মাসে প্রতিষ্ঠিত হল বালিগঞ্জ গার্লস স্কুল, যা বর্তমানে মুরলীধর গার্লস স্কুল ও কলেজ। একে একে শ্যামবাজার বালিকা বিদ্যালয়, নারকেলডাঙা গার্লস স্কুল, বেলতলা গার্লস স্কুল। ১৯২১ সাল থেকে গ্রামে-গ্রামে শুরু হল এই কাজ। বিধবা মহিলাদের আশ্রয়, কর্মসংস্থান ও গ্রামে শিক্ষিকার অভাব পূরণ এই সব কিছু মাথায় রেখে লেডি বসু প্রতিষ্ঠা করলেন বিদ্যাসাগর বাণীভবন ও সেখানে ট্রেনিং স্কুল যথাক্রমে ১৯২২ ও ১৯৩৫ সালে। মাত্র চল্লিশ বছরেই সমিতি প্রতিষ্ঠিত স্কুলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৯টি। স্বাধীনতার পর এই বাংলার স্কুলগুলি ধীরে ধীরে সরকারের অধীনে চলে যায়। কিছু বন্ধও হয়ে যায়। এখন শুধুমাত্র সমিতির কলকাতার মূল কেন্দ্র ও বিদ্যাসাগর বাণীভবন ঝাড়গ্রাম শাখার অস্তিত্ব আছে। ট্রেনিং কলেজ চালু রয়েছে দুই জায়গাতেই। খুব ক্ষুদ্রাকারে হলেও এখনও সমিতিতে দুঃস্থ মহিলাদের হাতেকলমে অবৈতনিক ভাবে নানা হস্তশিল্প শেখানো হচ্ছে। আর্থিক সহায়তার অভাবে বর্তমানে নারীশিক্ষা সমিতির অনেক পরিকল্পনার বাস্তব রূপায়ণ সম্ভব হচ্ছে না। সঙ্গে ট্রেনিং স্কুলে সে-কালের পাঠদানের ছবি।
উত্তরণ
রবীন্দ্রনাথের আধুনিকতা যে কতখানি সত্য এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর মধ্যে কতটা সংবেদনশীলতা এসেছিল বা তিনি কতটা নিজেকে পরিবর্তন করতে পারতেন, সেটা তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ‘সোনারপুরনাদম’-এর প্রয়াস ‘কথা ও কাহিনী’-র ‘পরিশোধ’ কবিতা, গীতিনাট্য ‘পরিশোধ’ এবং নৃত্যনাট্য ‘শ্যামা’ অবলম্বনে গ্রথিত ‘পরিশোধ থেকে শ্যামা/একটি উত্তরণের কাহিনী’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠান। শুরু সাশা ঘোষালের একক রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে— আইসিসিআর-এ, ২ মার্চ সন্ধ্যা ৬টায়। পাঠে সুজয়প্রসাদ চট্টোপাধ্যায়, নৃত্যে এণাক্ষী সিংহ ও সন্দীপ মল্লিক। কণ্ঠসংগীতে কৃষ্ণকলি সেনগুপ্ত ও অনিরুদ্ধ সিংহ। পরিকল্পনা, প্রযোজনায় মৈত্রেয়ী সেনগুপ্ত।
প্রেম-পাগলামি
দুটি মেয়ে, কাজল আর অতসী। এক জন মানসিক হাসপাতালের আবাসিক। বিবাহিত জীবনে প্রবঞ্চনার শিকার হয়েও ভালবাসার পথ চেয়ে বসে আছে। অন্য জনকে তার মা-ভাই মানসিক অত্যাচার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল। আজ সে ভালবাসার মানুষের সঙ্গে ঘর বেঁধেছে। এঁদের গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে পুতুল মাহমুদ নির্দেশিত একটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি, ‘লাভ ইন দ্য টাইম অব ম্যাডনেস’। সম্প্রতি দেখা গেল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিগুণা সেন প্রেক্ষাগৃহে। মনোসামাজিক ব্যাধি নিয়ে কর্মরত ‘অঞ্জলি’ সংস্থার উদ্যোগে তৈরি এই ছবির কেন্দ্রে রয়েছে ভালবাসার আকাঙ্ক্ষা। কে ‘স্বাভাবিক’ আর কে ‘মনোরোগী’, তার সমাজ-নির্মিত সংজ্ঞা নিয়ে প্রশ্ন করতে বাধ্য করে ছবিটি।
কাদম্বিনী স্মরণে
তিনি বাংলার নবজাগরণ যুগের নারী। সংসার-সন্তান সামলে পেশায় সফল। আবার সমাজ-রাজনীতিতেও সক্রিয়। প্রথম দুই মহিলা গ্র্যাজুয়েটের অন্যতম, কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রথম মহিলা ডাক্তার, আবার তিনিই প্রথম মহিলা, যিনি ভারতীয় কংগ্রেসে কথা বলেছেন। বিলাত গিয়ে ডাক্তারি ডিগ্রি এনেছেন বেথুন কলেজের প্রাক্তন ছাত্রী কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়, আবার দক্ষিণ আফ্রিকায় গাঁধীর আন্দোলনের জন্য টাকা তুলেছেন, দুঁদে ডাক্তারদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্র্যাকটিস জমিয়েছেন কলকাতায়, নেপালে। তাঁর স্মৃতিতে প্রপৌত্র রাজীব ও তাঁর স্ত্রী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায় বেথুন কলেজের প্রাক্তনীদের শিক্ষা-সংস্কৃতি-সাহিত্য-সমাজকল্যাণে অবদানের জন্য পুরস্কার প্রবর্তন করেছেন। এ বছর কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় স্মৃতি রৌপ্য পদক পেলেন মীনাক্ষী সিংহ যিনি গত ছ’দশক ধরে অধ্যয়ন-অধ্যাপনা-প্রাক্তনী সমিতির সূত্রে বেথুন কলেজের সঙ্গে নিবিড় ভাবে যুক্ত। রবীন্দ্রসাহিত্য ঘিরে তাঁর নিত্য চর্চা। অভিনয়শিল্পের জন্যও তিনি সম্মানিত হয়েছেন।
রাজরক্ত
সত্তর দশকের শুরুতেই সাড়া জাগিয়েছিল ‘রাজরক্ত’, সময়টা তখন অগ্নিগর্ভ, রক্তাক্তও বটে। মোহিত চট্টোপাধ্যায় তাঁর এই প্রকাশবাদী রচনায় নকশাল আন্দোলনকে আত্মস্থ করেছিলেন। ‘কিন্তু কখনওই মোহিতের এ-নাটক প্রথাগত রাজনৈতিক নাটক নয়, ব্যতিক্রমী। সংকেত-প্রতীক-রূপকের ব্যবহারে সেই প্রথাভাঙার চিহ্নগুলিও চেনা যায়।’ বিভাস চক্রবর্তী, অন্য থিয়েটার-এর কর্ণধার, বলতে-বলতে পুরনো সময়ে ফিরে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি থিয়েটার ওয়ার্কশপ-এ, তাঁর নির্দেশনাতেই মঞ্চস্থ হয়েছিল সুঅভিনীত সে প্রযোজনা। ছিলেন বিভাসবাবুসহ অশোক মুখোপাধ্যায় মায়া ঘোষ সত্যেন মিত্র রাম মুখোপাধ্যায়। ‘ওঁদের অভিনয় স্মৃতিধার্য। তবে নতুনদের সঙ্গে কাজ করেও অসম্ভব ভাল লাগছে, থিয়েটার করার পুরনো আনন্দটুকু ফিরে পাচ্ছি।’ বিভাসবাবু মনে করেন, ‘নাটকটি আগের চেয়ে এখন বেশি প্রাসঙ্গিক। রাষ্ট্র আমাদের আপাত ভাবে অনেকটা স্পেস দেয়, অথচ এমন ভাবে বৃত্তাবদ্ধ করে রাখে যে বুঝতে পারা যায় না। যেই রাষ্ট্রের আঁতে ঘা লাগে, সঙ্গে সঙ্গে সে আধিপত্য, নিয়ন্ত্রণ, সব কিছু কায়েম করে, তার সশরীর উপস্থিতি তখন টের পাই আমরা।’ ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা আয়োজিত ‘থিয়েটার অলিম্পিকস’-এর আমন্ত্রণে ভারতের অন্যতম নাট্যব্যক্তিত্ব হিসাবে সাড়া দিতেই তাঁর এই কাজ। গুয়াহাটি কেন্দ্রে ১১ মার্চ উদ্বোধনী নাটক এটি। প্রথম দুটি অভিনয় কলকাতায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি মধুসূদন মঞ্চে, ২৮ ফেব্রুয়ারি অ্যাকাডেমিতে। প্রতি দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়।