kishore kumar

ফেলে আসা সেই সব দিন

তখন ষাটের দশক শেষ হয়ে আসছে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে তরুণবাবু রাজি হয়েছেন পলাতক-এর হিন্দি রাহগির

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২১ ০৭:৩৮
Share:

বাঁ দিক থেকে কিশোরকুমার, তরুণবাবু, গুলজার, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, আশা ভোঁসলে

দরকার নেই তরুণদা। আপনি বাংলাতেই বলুন বরং। বাংলা আমি বুঝি।” বললেন গুলজার। বিস্মিত তরুণ মজুমদার জানতে চাইলেন, “কী করে?” উত্তর এল, “আমি কাজ করি বিমলদার ইউনিটে। বিমলদা মানে বিমল রায়। যে ওখানে এক বার ঢুকবে বাংলা সে আপনাআপনি শিখবে।” তরুণবাবু হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন, তাঁর স্বীকারোক্তি: “আমার হিন্দি বলা আর গুলজারের পক্ষে সে হিন্দি শোনা— একই সঙ্গে দু’জনের পক্ষে সমান কষ্টকর বলে আমার বিশ্বাস।”

Advertisement

তখন ষাটের দশক শেষ হয়ে আসছে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের প্রস্তাবে তরুণবাবু রাজি হয়েছেন পলাতক-এর হিন্দি রাহগির (সঙ্গের স্থিরচিত্রে সেই ছবিরই গানের রেকর্ডিংয়ে করতে, সে কাজেই বম্বে পৌঁছেছেন, তার পর বিমানবন্দর থেকে হেমন্তের সঙ্গে একেবারে তাঁর বাড়িতে, সেখানে অপেক্ষারত কয়েকজনের মধ্যে এক জনকে দেখিয়ে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় তরুণবাবুকে বললেন, “এর লেখার হাত খুব ভাল। তবে নতুন। সংলাপ, গান দুটোই লেখে...” দেখতে দেখতে তরুণবাবুর সঙ্গে গুলজারের বন্ধুত্ব বেশ জমে গেল, তরুণবাবু তাঁকে রবীন্দ্রনাথ আর জীবনানন্দ পড়ে শোনান, “খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলা হরফ পড়া এমনকী লেখাতেও সড়গড় হয়ে উঠল সে,” লিখেছেন তরুণবাবু। তাঁর ফেলে-আসা দিনগুলির স্মৃতির ঝাঁপিটি প্রকাশ পেতে চলেছে এই বসন্তেই। সিনেমাপাড়া দিয়ে (দে’জ), দু’টি খণ্ড, একই সঙ্গে বেরোচ্ছে। বাঙালির মতো আত্মবিস্মৃত জাতির পক্ষে এ যেন দখিনা বাতাস, কেননা ইতিউতি চেষ্টা সত্ত্বেও আজও বাংলা ছবির পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্য ইতিহাস তৈরি হয়নি, তরুণবাবুর আত্মস্মৃতি হয়তো বাংলা সিনেমার স্বর্ণখনির খোঁজ এনে দিতে পারবে আমাদের।

এই আত্মজীবনের সঙ্গে অবশ্য জড়িয়ে সারা ভারতেরই চলচ্চিত্রের প্রবাদপ্রতিম মানুষজন, স্বাধীনতার পূর্ববর্তী থেকে পরবর্তী চলচ্চিত্র শিল্পীরা। “নিজেকে আড়ালে রেখেই লিখতে চেয়েছি, এই দীর্ঘ পথ যেতে যেতে যে সব মানুষকে দেখেছি তাঁদের কথাই লিখেছি, লিখতে গিয়ে যেখানে নিজেকে না-জড়িয়ে পারিনি, সেখানেই শুধু আমার প্রবেশ। তবে পরিকল্পনা মেনে মোটেও লিখিনি, লিখেছি একেবারেই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে। আর লেখার ধরনটাও পুরোপুরি তরতরিয়ে গল্পবলার ঢঙে, যাতে পাঠকের যেন কোথাও হোঁচট না লাগে।” তাঁর আত্মভ্রমণ পঞ্চাশের দশক থেকে আরম্ভ হয়ে থেমেছে আশির দশকের শুরুতে, যে দিন উত্তমকুমার মারা গেলেন সেই দিনটিতে। এর ক’দিন আগেই উত্তম এসেছিলেন স্টুডিয়োতে তাঁর ঘরে, তাঁর নতুন ছবিতে অভিনয় করবেন বলে চুক্তিপত্রে সই করতে। প্রোডাকশন-অ্যাসিস্ট্যান্টকে চা আনতে পাঠিয়ে, তরুণবাবুর উল্টো দিকের চেয়ারে বসে টেবিলের উপর সামান্য ঝুঁকে তাঁকে বলেছিলেন, “নায়ক-টায়ক অনেক হল জীবনে। এবার টোট্যালি অন্যরকম... যতরকম উল্টোপাল্টা ক্যারেক্টার আছে— সব করব... প্রুভ করব— আমি পারি। ইয়েস। আমি পারি।” ছবি সৌজন্য: তরুণ মজুমদার

Advertisement

জীবনের কথাকার

তাঁর লেখকজীবন পেরিয়েছে ৭০ বছরের মাইলফলক। শংকর (ছবিতে) বলছিলেন, ১৯৫০-এ তাঁর প্রথম লেখা ছাপা হয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকা-র রবিবাসরীয়-তে। গল্প, উপন্যাস নয়, সাহিত্য নিয়ে নিবন্ধ। সম্মানমূল্য লাভ দশ টাকা। ক্রমে তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কথাকার হয়ে উঠবেন, কত অজানারে, চৌরঙ্গী থেকে সীমাবদ্ধ, একের পর এক উপন্যাস বাঙালির মনে ঠাঁই করে নেবে, সে অনেক পরের কথা। সেই লেখক এ বার তাঁর স্মৃতিকথা পায়ে পায়ে একাশি-র জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কারে সম্মানিত। একাশি অতীত, সাতাশিতেও তাঁর কলম অক্লান্ত। বললেন, “পুরস্কার পেলে ভালই লাগে। কিন্তু তিরস্কার-পুরস্কারে আর কিছু যায় আসে না।” দেরির জন্য দুঃখ হয় না? মনে হয় না, ক’বছর পরে জন্মালে রাজনীতিকরা আপনাকে নিয়ে টানাটানি করতেন? হাসলেন, “সত্তর দশক থেকে শুনে আসছি, আমার লেখায় সমাজ-বাস্তবতা নেই। তখনও বলতাম, আমার কাজ একটাই। লেখাকে সযত্নে গর্ভে লালন করে তাকে ভূমিষ্ঠ করা।” গোপন বাক্স খুলতে নেই বইয়ের জন্য শিশুসাহিত্যে অকাদেমি পেলেন প্রচেত গুপ্তও।

বঙ্গপ্রেমিক

এ বছর ১২ জানুয়ারি ছিল তাঁর ৫০তম মৃত্যুদিন। মাত্র ৪২ বছরের জীবনে ডেভিড জন ম্যাককাচ্চন (১৯৩০-১৯৭২) বাংলার মন্দির ও পটচিত্র-সহ লোকশিল্প-সংস্কৃতির পরিসরে যে কীর্তি স্থাপন করে গেছেন, তার তুলনা মেলা ভার। আদ্যন্ত শিল্পসমন্বয়বাদী মানুষটি বাংলা, ভারত তথা প্রাচ্যের স্থাপত্যশিল্পে মজে থেকেও আসলে গেঁথেছিলেন প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের শিল্প-সম্প্রীতির মালা। প্রয়াণের অর্ধশতাব্দীতে এই বঙ্গপ্রেমিকের স্মরণে আগামী কাল ১৬ মার্চ বিকেল ৫টায় কলেজ স্ট্রিটে কফি হাউস বইচিত্র সভাঘরে একটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে দক্ষিণ কলকাতার ‘সম্প্রীতি আকাদেমি’। ডেভিডের ‘জীবন ও সৃজন’ নিয়ে আলোচনা ছাড়াও মূল আকর্ষণ ‘একুশ শতক’ প্রকাশিত ডেভিড ম্যাককাচন চর্চা গ্রন্থপ্রকাশ (সম্পাদনা: সুরঞ্জন মিদ্দে)। তারাপদ সাঁতরা, সুহৃদকুমার ভৌমিক, হিতেশরঞ্জন সান্যাল, শিবনারায়ণ রায়, সত্যজিৎ রায়, স্বপন মজুমদার, অমিয় দেব-সহ বিশিষ্ট লেখক-গবেষকদের চোখে ডেভিডের জীবন ও গবেষণার সন্ধানী মূল্যায়ন।

মহামারি নিয়ে

কলেরা, ম্যালেরিয়া ও গুটিবসন্ত— ঔপনিবেশিক বাংলাকে বার বার তছনছ করেছে তিন মহামারি। তার বহু অনুষঙ্গ আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিতে, লোকমুখেও। তবু, কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সহজ নয়। কেমন ছিল মৃত্যুর হার, কিংবা সামাজিক ও অর্থনৈতিক অভিঘাত? ঔপনিবেশিক চিকিৎসা ব্যবস্থা তা কত দূর প্রতিরোধ করতে পেরেছিল? ড্রেডফুল ডিজ়িজ়েস ইন কলোনিয়াল বেঙ্গল: কলেরা, ম্যালেরিয়া অ্যান্ড স্মলপক্স গ্রন্থে উত্তর খুঁজেছেন দুই সম্পাদক, সুরঞ্জন দাস ও অচিন্ত্যকুমার দত্ত। অতিমারি নিয়ে বহুমুখী গবেষণা যে কত জরুরি, বুঝিয়ে দিচ্ছে কোভিড। গ্রন্থে নির্বাচিত সরকারি রিপোর্টগুলি গবেষকদের কাছে হয়ে উঠতে পারে আকর। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জালে প্রকাশিত হল বইটি, উদ্বোধন করলেন ব্রিটেন ও ভারতের চার বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ।

শতবর্ষের আলো

এ বছর শতবর্ষ শিল্পী সোমনাথ হোরের। ১৯২১-এ চট্টগ্রামে জন্ম, কৈশোরে পিতৃবিয়োগ তাঁর জীবনে প্রথম ক্ষত। আত্মজীবনীর অন্যদিক রচনায় লিখেছিলেন, ‘মাতৃগর্ভে যেদিন আশ্রয় নিয়েছিলাম সেই ভ্রূণাবস্থা থেকে আজ পর্যন্ত, মৃত্যু আমাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছে।’ দেখেছেন দুর্ভিক্ষ, মন্বন্তর, দেশভাগ। দেশভাগ-উত্তর কলকাতায় কমিউনিস্ট রাজনীতিতে প্রবেশ; হরেন দাস, চিত্তপ্রসাদ, জয়নুল আবেদিনের সান্নিধ্যে খুলে যায় শিল্পদুয়ার। শান্তিনিকেতনে রামকিঙ্কর-বিনোদবিহারীর সঙ্গ প্রসারিত করেছিল তাঁর চিন্তাজগৎকেও। কলাভবনে যোগ দেন শিক্ষকতায়। ছাপাইচিত্রের বিশ্বে সোমনাথ হোর এক উদ্ভাবন, খুলে দিয়েছেন ভাস্কর্য, ম্যুরাল, চিত্রশিল্পের দিগন্তও। শিল্পীর এচিং, ড্রয়িং, লিথোগ্রাফ, প্যাস্টেল, জলরং, পেনসিল স্কেচ-সহ অগণিত কাজ (ছবিতে তারই একটি) নিয়ে শতবর্ষের আলোয় সোমনাথ হোর (১৯২১-২০২১) প্রদর্শনী চলছে দেবভাষা বই ও শিল্পের আবাসে। শুরু হয়েছে ১১ মার্চে, চলবে ২৫ অবধি, রোজ আড়াইটে থেকে রাত সাড়ে ৮টা। প্রকাশিত হবে শিল্পীর চিত্রিত ছবির অ্যালবাম, শিল্পরসিকদের সংগ্রহের জন্য থাকছে নানান কাজও।

বই ছুঁয়ে

অতিমারিতে বইয়ের প্রকাশ, প্রচার ও বিপণন, ঘা খেয়েছিল সবই। কী করে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু করল প্রকাশনা সংস্থাগুলি, তা নিয়েই আলোচনা হল এশিয়াটিক সোসাইটি, কলকাতা-র বিদ্যাসাগর হল-এ, গত ৮ মার্চ। ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় তুলে ধরলেন সঙ্কটকালে ই-বুক’এর আশ্চর্য উড়ান-কথা, রামকুমার মুখোপাধ্যায় জানালেন বিশ্বের প্রকাশনা সংস্থাগুলি কী করে জ্ঞান চর্চা ও তথ্যের প্রসারে হয়ে উঠেছে সনিষ্ঠ। অনিল আচার্য তুললেন মৌলিক প্রশ্নটি: অন্তর্লোকের বিচ্ছিন্নতায় ভরা এ কালে প্রকাশকদের ভূমিকা কী হতে পারত। এ দিনই ছিল সোসাইটি আয়োজিত ‘বই বাজার’-এর শেষ দিন, বিপুল ছাড়ে সোসাইটি প্রকাশিত বই কেনায় পাঠক-ক্রেতাদের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।

দুই ছবি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষ দিক। এক তরুণ জার্মান সেনা পালানোর সময় এক নাৎসি ক্যাপ্টেনের ইউনিফর্ম হাতে পেয়ে, বনে যায় ক্যাপ্টেন হেরল্ড। ভুয়ো ক্যাপ্টেনের জুটে যায় ক’জন সৈন্য, আর এক কল্পিত ‘কাজ’ও, খোদ হিটলারের দেওয়া! বহু পুরস্কারে ভূষিত জার্মান ছবি দ্য ক্যাপ্টেন (২০১৭) দেখানো হবে নন্দন-৩’এ, সিনে সেন্ট্রাল-এর আয়োজনে, ১৮ মার্চ বিকেল ৫টায়। আগের দিন, বুধবার একই সময়ে আছে আর একটি জার্মান ছবি— আই ওয়াজ়, আই অ্যাম, আই উইল বি (২০১৯)। দুই জার্মান ছবির প্রদর্শন সহযোগিতায় কলকাতার ম্যাক্সমুলার ভবন।

সুরসফর

এক সুরেলা সফরের অবসান হল। সম্প্রতি প্রয়াত হলেন বিদুষী শিশিরকণা ধর চৌধুরী (ছবিতে)। বয়স হয়েছিল ৮৩। ভারতীয় রাগসঙ্গীত জগতে মহিলা বেহালাবাদকদের মধ্যে শিশিরকণা ছিলেন অগ্রজপ্রতিম। ১৯৩৭ সালে শিলংয়ে জন্ম, বাদ্যযন্ত্রের শিক্ষা আলি আকবর খান এবং ভি জি যোগের কাছে। আমেরিকায় আলি আকবর স্কুল অব মিউজিক-এ শিক্ষকতাও করেছেন। পরে নিজেই বাদ্যযন্ত্রের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়েছিলেন সে দেশে। বেহালা ছাড়াও দক্ষতা ছিল ‘ভিয়োলা’ বাজানোয়, অনেক আসরে তাতে আলাপ বাজিয়ে বেহালায় গৎ ও বিস্তার পরিবেশন করতেন। এক সময় থাকতেন দক্ষিণ কলকাতার ডোভার লেনে, তবে ইদানীং শহরে খুব বেশি আসতেন না। কলকাতায় শেষ বাজিয়েছেন ২০১৭ সালের ডোভার লেন সঙ্গীত সম্মেলনে।

শিল্পকথা

এমামি আর্ট ও কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি-র সহযোগিতায়, সেন্টারের শিল্প সংরক্ষণ বিভাগ ‘কলকাতা ইনস্টিটিউট অব আর্ট কনজ়ার্ভেশন’ আয়োজন করেছে তিন দিনব্যাপী মাস্টারক্লাস— পূর্ব ভারতের ‘বিল্ট হেরিটেজ’ নিয়ে। অনুষ্ঠান ১৭-১৯ মার্চ, রোজ দুপুর সাড়ে ৩টে থেকে, আন্তর্জালে। প্রথম দিন ঐতিহ্যের শহর কলকাতার ইতিহাসের খুঁটিনাটি, তথ্য ও না-জানা গল্প বলবেন দেবদত্ত গুপ্ত, পর দিন উত্তর-পূর্ব ভারতের অসমের স্থাপত্যের বিবর্তন নিয়ে বলবেন অরিজিৎ চৌধুরী। ১৯ মার্চ সমাপ্তি দিনে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের বাড়িগুলির অন্দর-অন্তরকথা, সাধারণ গৃহ থেকে শিল্পীর আবাস ও সময়ের যাত্রাপথে ক্রমশ তাদের ঐতিহ্য হয়ে ওঠার ইতিহাস কথায় ও ছবিতে তুলে ধরবেন সুশোভন অধিকারী।

পুতুলের দিন

শুরু ১৯৯০-এ। ত্রিশ বছর পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে অব্যাহত কলকাতার পুতুল নাট্য দল ‘ডলস থিয়েটার’-এর আনন্দযাত্রা। নির্দেশক সুদীপ গুপ্ত পেয়েছেন সঙ্গীত নাটক অকাদেমি পুরস্কারও। করোনার অনিশ্চয়তা পেরিয়ে মহলায় ফিরেছে দল, নতুন পুতুল নাটক চি চি ল্যান্ড (ছবিতে) তৈরি। আগামী ২১ মার্চ রবিবার বিশ্ব পুতুল নাট্য দিবসে, নতুন এই নাটকের অভিনয় ডলস থিয়েটার-এর আয়োজনে দু’দিন ব্যাপী ‘সূত্রধার’ উৎসবে, মধুসূদন মঞ্চে। সহযোগিতায় সেন্টার ফর নলেজ আইডিয়াস অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ়। ‘সূত্রধার সম্মান’ অর্পণ করা হবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী তারের পুতুল নাচ শিল্পী হরিদাস রায় ও পুতুল নাট্যশিল্পী-গবেষক শম্পা দাসকে। আছে নানা স্বাদের পুতুল নাটক— ‘রং-বেরং পাপেট থিয়েটার’-এর তাঁতিয়ান, ‘বর্ধমান দ্য পাপেটিয়ার্স’-এর মি অ্যান্ড মাই ফ্রেন্ড, গণেশ ঘোড়ইয়ের বেণীপুতুল নাচ, নিরাপদ মণ্ডলের ডাংপুতুল নাচ-ভিত্তিক নাটক মুগলী।

পরম্পরা

লকডাউনের মধ্যে, গত বছর পেরিয়ে গিয়েছে অখিলবন্ধু ঘোষের জন্মশতবর্ষ। বাঙালির অন্যতম প্রিয় গায়ক প্রয়াত হয়েছেন ১৯৮৮ সালে, সে বছরেই প্রিয় শিক্ষকের নামে ‘অখিলবন্ধু ঘোষ স্মৃতি সংসদ’ প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর ছাত্র-শিষ্যেরা। ‘গুরু’র গাওয়া গানের প্রচার, প্রসার ও পরম্পরা রক্ষার দায়িত্ব ওঁরা পালন করছেন তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। অখিলবন্ধু ঘোষের গান আর শোনা যায় না বলেন যাঁরা, তাঁরা হয়তো জানেনই না, তাঁর নামাঙ্কিত প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর শিল্পীর প্রয়াণদিনে অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে এ শহরে। করোনাকালে গত বছর করা যায়নি, এ বছরে ২০ মার্চ শনিবার আশুতোষ মেমোরিয়াল হল-এ সন্ধে ৬টা থেকে সঙ্গীতার্ঘ্য ‘সারাটি জীবন কী যে পেলাম’। শুধু অখিলবন্ধুর গানই সে দিন শোনাবেন বিশিষ্ট শিল্পীরা। স্মৃতি সংসদের তরফে মাধবেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জানালেন, আজকের প্রজন্মের সঙ্গীত-শিক্ষার্থীরা শিখছেন, মন দিয়ে গাইছেনও অখিলবন্ধু ঘোষের গান। সব এখনও ফুরিয়ে যায়নি।

জীর্ণ পুরাতন

উনিশ শতকের কলকাতায় শিবরাত্রি ছিল অন্যতম বড় উৎসব। ১৮২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি সমাচার দর্পণ-এ বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়, শিবরাত্রি উপলক্ষে কোম্পানির খাজনা ঘর পর পর দু’দিন বন্ধ থাকবে। ১৮৩৮-এর কলকাতায় সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট হিসেবে কাজে যোগ দেওয়া জর্জ উইলিয়াম জনসন তাঁর স্মৃতিকথা থ্রি ইয়ার্স ইন ক্যলকাটা গ্রন্থে শহরে দোল দুর্গোৎসব মহরমের পাশে শিবরাত্রির উদ্দীপনার কথা লিখেছেন সবিস্তারে। কলকাতা জুড়ে ছড়িয়ে বহু প্রাচীন শিবমন্দির, আজও শিবরাত্রিতে সেখানে ভক্তসমাগম। উৎসব এও মনে পড়ায়, অনেক মন্দিরের সংস্কার জরুরি। যেমন কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ-সহ বাগবাজারের বিষ্ণুরাম চক্রবর্তীর শিবমন্দিরগুচ্ছ, যা শহরের প্রাচীন দেবস্থানগুলির অন্যতম। ১৭৭৬ সালে স্থাপিত এই মন্দিরগুলির চুন-সুরকির পলেস্তারা খসে পড়েছে (উপরে ডান দিকের ছবিতে), মাথায় গজিয়েছে বট-অশ্বত্থ গাছ। লোকচক্ষুর খানিক আড়ালে থাকা এই মন্দির-স্থাপত্যের উপযুক্ত যত্ন ও সংরক্ষণ হলে ধ্বংসের হাত থেকে শুধু দেবস্থানই নয়, বেঁচে থাকবে শহর কলকাতার এক টুকরো প্রাচীন ইতিহাসও।

সময়চিত্র

গত বসন্তে থেমে গিয়েছিল সব। করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছিল জীবনের ছন্দ। শিল্প থেমে থাকেনি। ঘরবন্দি ধূসর দিনেও ছবি এঁকেছেন, মূর্তি গড়েছেন শিল্পীরা— আগামীর আশ্বাসে। সেই শিল্পসৃষ্টির ধারাভাষ্যে লকডাউনের মধ্যেই কলকাতার ‘মায়া আর্ট স্পেস’ তৈরি করেছিল এক ডিজিটাল প্রদর্শনী— ফিরে আসুক জোনাকিরা। কথা ছিল, লকডাউন পেরিয়ে প্রদর্শনীটি ভাল ভাবে হবে মায়া-র ঠিকানায়। আগামী ২০-২৮ মার্চ সেই প্রদর্শনী ফিরছে ইন দ্য মেকিং নামে, গণেশ হালুই, যোগেন চৌধুরী, বিমল কুন্ডু, সুধীরঞ্জন মুখোপাধ্যায়, ভবতোষ সুতার, প্রদীপ ঘোষ, শিপ্রা ভট্টাচার্য, পার্থ দাশগুপ্ত-সহ বাইশ জন শিল্পীর লকডাউনে আঁকা কাজ নিয়ে। এও এক ইতিহাসের দলিল, বিবর্ণ সময়ের চিত্রিত কথকতা। মায়া আর্ট স্পেসে প্রদর্শনী রোজ ৩টে থেকে ৮টা।

ফুলে ফুলে

বসন্ত আসুক না আসুক, ফুলেরা ফুটছে। শহরের দেওয়ালে। জোর কদমে হাত চলছে ঘাসফুল আর পদ্ম ফোটানোয়। কোনটা আঁকা কঠিন, সহজ কোনটা? “ঘাসফুল সোজা। তিনটে পাপড়ি এক টানে আঁকা যায়, তলার ঘাসও কঠিন না। তার চেয়ে কঠিন কাস্তে-হাতুড়ি... কাস্তের আধগোল্লা সুন্দর হতে হবে, হাতুড়ি গিয়ে মিশবে ঠিক জায়গায়।” আর পদ্ম? “সময় লাগে বেশি, খাটনিও। তাও ভাগ্য ওরা গ্যাঁদাফুল বাছেনি!”

এক অনন্য জীবনকে ফিরে দেখা

এই সেই বিখ্যাত উঠোন! এই আঙিনাই সাক্ষী তাঁর সযত্ন আয়োজিত চা-চক্রে বিবেকানন্দ-রবীন্দ্রনাথের সাগ্রহ উপস্থিতির, এখানেই বিবেকানন্দ-ব্রহ্মানন্দ-শিবানন্দ’সহ গুরুভাইদের সেই পরিচিত ছবিটি তোলা! এখানেই তাঁর ‘গুরু’ ও ‘বন্ধু’র সঙ্গে কালী নিয়ে কত কথা, এখানেই ছোটদের সামনে সারদানন্দের কথকতা! বাগবাজারের ১৬ নং বোসপাড়া লেনের বাড়ি স্রেফ বাড়ি নয়, উনিশ ও বিশ শতকের কলকাতা তথা ভারতের নারীশিক্ষা, জাতীয়তাবোধ, শিল্প, বিজ্ঞান, ইতিহাসভাবনারও পীঠস্থান। এই বাড়ি সিস্টার নিবেদিতার ঠিকানা।

এখন তার নাম ‘রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সিস্টার নিবেদিতা হেরিটেজ মিউজ়িয়াম অ্যান্ড নলেজ সেন্টার’। রামকৃষ্ণ সারদা মিশন কর্তৃপক্ষের যত্নে-আদরে, বহু ঐতিহাসিক ছবি, নথি, সিস্টার ও তাঁর পরিমণ্ডলের নানা সামগ্রী ও অনুষঙ্গের উপস্থিতিতে এই সংগ্রহশালা এখন এ শহরের অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল। বাগবাজারের পথচলতি মানুষ দেখে দাঁড়িয়ে পড়ছেন, খোঁজ নিচ্ছেন সাগ্রহে, তেমনই আসছেন গবেষক, শিক্ষক, পড়ুয়ারা। উত্তর কলকাতার পুরনো এই বাড়ির উদ্ধার ও সংরক্ষণ পর্বও রীতিমতো রোমাঞ্চকর। কালযাত্রায় ঠাকুরদালানটি ছোট ছোট ঘরে পর্যবসিত হয়েছিল, সংরক্ষণের সময় অচেনা বাড়ির মধ্য থেকেই বেরিয়ে এসেছে অপূর্ব, শৈল্পিক ঠাকুরদালান। তার দেওয়ালে এখন সুন্দর চিত্রভাবনায় নিবেদিতার জীবনের ঘটনাবলি ধরে রাখা। নীচের ছোট্ট ঘরটি দেখলে শিহরন জাগে, নিবেদিতার লেখালিখি, শহর ও দেশ নিয়ে ভাবনা-পরিকল্পনা, এই ঘর থেকে! সেখানেই রাখা তাঁর কাজের টেবিল, চেয়ারে বসে যেন কাজ করছেন আজও (ডান দিকের ছবি)। এই বাড়িতে থেকেছেন সারদা দেবীও, সযত্নে রক্ষিত তাঁর যাতায়াতের সিঁড়ি, রেলিংও সেই সময়ের।

ব্যবহার করা হয়েছে ‘অগমেন্টেড রিয়েলিটি’ প্রযুক্তি। স্ক্রিন জায়গামতো ঘুরিয়ে দর্শকেরা দেখতে পারবেন সেই সময় এ বাড়িতে ঘটা ঐতিহাসিক ঘটনাগুলি। সুন্দর ভাষ্যে ধরা আছে সেই সময়। ঘরগুলি এখন গ্যালারি, কোনওটিতে নিবেদিতার জীবন ও কীর্তির বিশদ পরিচিতি, বেশ কয়েকটি অত্যাধুনিক ‘কিয়স্ক’-এ ফুটে উঠেছে শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্য-বিজ্ঞানের পরিসরে নিবেদিতার প্রত্যক্ষ ও মনন-অবদান। আছে রবীন্দ্রনাথ ও বিবেকানন্দের চিঠি, জগদীশচন্দ্র বসুর দেওয়া পেপারওয়েট, নিবেদিতার হাতে লেখা অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টার (তার মধ্যে একটি নাম ‘পারুল’, উত্তরকালে সারদা মঠের প্রথম প্রেসিডেন্ট, প্রব্রাজিকা ভারতীপ্রাণা) এমনকি ছাত্রীরা পড়াশোনায় ও প্রতিভায় কে কেমন তার রিপোর্ট। বজ্র তাঁর প্রিয় ছিল, ভারতের জাতীয় পতাকার কেন্দ্রে তা স্থাপন করেছিলেন তিনি, দু’পাশে ‘বন্দে মাতরম্‌’ সেলাই করেছিলেন স্কুলের মেয়েরা। সেই পতাকা বাঁধিয়ে রাখা আছে (বাঁ দিকের ছবি)। প্রদর্শের ঐতিহাসিকতায়, ভাবতরঙ্গের প্রগাঢ়তায় এই মিউজ়িয়াম এই সময়ের কলকাতার এক অনন্য অভিজ্ঞতা। খোলা থাকছে প্রতি শনি ও রবিবার, বুকিং করতে হবে সিস্টারনিবেদিতাহাউস ডট ওআরজি ওয়েবসাইট মারফত।

ছবি: তথাগত সিকদার

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement