বাসে উঠে গন্তব্যের পথে। মঙ্গলবার, আর জি কর রোডে। নিজস্ব চিত্র
টালা সেতুর যান নিয়ন্ত্রণে প্রাথমিক সাফল্যের পরে দাপুটে পুলিশকর্তা বাহিনীকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, ‘‘এটা কিন্তু টেস্ট ম্যাচ! যত দিন না নতুন টালা সেতু তৈরি হচ্ছে, ছোট ছোট পর্বে সময় ভাগ করে নিয়ে এগোতে হবে।’’
পুলিশকর্মীদের একাংশের ব্যাখ্যা ছিল, সমস্যা রাতারাতি মেটার নয়। তাই এ নিয়ে এককালীন পরিকল্পনাও করা যায় না। টেস্ট ম্যাচে যেমন এক-একটি ‘সেশন’-এর পরিস্থিতি অনুযায়ী এক-এক রকম পরিকল্পনা করতে হয়, এ ক্ষেত্রেও সেই একই নীতি মেনে চলতে বলা হয়েছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া মাধ্যমিক পরীক্ষার সপ্তাহকে পুলিশ ধরেছিল টেস্ট ম্যাচে লাঞ্চের আগের ‘সেশন’ হিসেবে। পথচারী থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, এখনও পর্যন্ত সেখানে ম্যাচ জেতার মতোই খেলেছে কলকাতা পুলিশ। এ বার সামনে ১২ মার্চ শুরু হতে চলা উচ্চ মাধ্যমিক। ওই সময়টিকে চা-বিরতির আগের সেশন ধরে এগোতে চায় তারা।
কিন্তু উত্তর কলকাতার পথের ধাঁধা কী করে সমাধান করা গেল?
ট্র্যাফিক-কর্তারা জানাচ্ছেন, আসলে কাজ করে গিয়েছে চার দফা দাওয়াই। যার মধ্যে ‘মাস্টার স্ট্রোক’ হল খগেন চ্যাটার্জি রোড হয়ে কাশীপুর রোড এবং চিৎপুর লকগেটের ব্যবহার। দাওয়াইয়ের তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাস্তায় সুস্পষ্ট পথ-নির্দেশিকার ব্যবস্থা রাখা এবং লেন ভেঙে গাড়ি চালানো বন্ধ করা। চতুর্থ দাওয়াই হল, ১০০ জন বাড়তি পুলিশকর্মী মোতায়েন এবং বিকল গাড়ি দ্রুত সরিয়ে ফেলা।
মঙ্গলবার মাধ্যমিক পরীক্ষার দিনও বেলা ১১টায় পৌঁছে দেখা গেল, ওই এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, টালা সেতুর আশপাশে গোটা কুড়ি পরীক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। পরীক্ষা শুরুর পরে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ওই সমস্ত কেন্দ্র সংলগ্ন ট্র্যাফিক সিগন্যালে গাড়ির জট দেখা যায়নি। গত এক সপ্তাহের মতো এ দিনও উত্তর শহরতলি থেকে ছোট গাড়ি খগেন চ্যাটার্জি রোড, কাশীপুর রোড, রাজবল্লভপাড়া হয়ে শ্যামবাজারের দিকে এসেছে। বাস এবং অন্য কিছু ছোট গাড়িকে ওই অংশে আনা হয়েছে চিড়িয়ামোড়, পাইকপাড়া, বেলগাছিয়া ঘুরিয়ে। কলকাতা থেকে ডানলপের দিকে গাড়ি গিয়েছে লকগেট উড়ালপুল হয়ে।
ভূপেন বসু অ্যাভিনিউয়ে বাস থেকে নেমে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ডানলপের সবেদাবাগানের বাসিন্দা ঋতম দে নামে এক পরীক্ষার্থী বলল, ‘‘প্রতিদিন মা আমাকে নিয়ে অনেক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। আজও এক ঘণ্টা আগে এসেছি।’’ মায়ের বক্তব্য, ‘‘পুলিশ দারুণ সামলেছে। কিন্তু বলা তো যায় না! আগে এলে ক্ষতি নেই।’’ শ্যামপুকুর স্ট্রিটে ছেলেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে দিয়ে বরাহনগরের বাসিন্দা সাবিত্রী বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘প্রথম দিন তিন ঘণ্টা আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তা এত ভাল ছিল যে, দু’ঘণ্টা আগে পৌঁছে যাই। এখন আর অত আগে বেরোই না।’’
কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার বললেন, ‘‘চারটে ব্যবস্থার মধ্যে সব চেয়ে কাজে লেগেছে খগেন চ্যাটার্জি রোড হয়ে কাশীপুর রোডের ব্যবহার। এর জন্য পাইকপাড়া, বেলগাছিয়া রোডের চাপ অর্ধেক কমে গিয়েছে।’’
দীর্ঘদিন এই পথের ব্যবহারেও নিমরাজি ছিল পুলিশ। যেমন এখনও নিমরাজি লকগেট উড়ালপুলের দ্বিমুখী ব্যবহারে। পুলিশ অবশ্য জানাচ্ছে, টেস্টে কোনও সেশনে বেকায়দায় পড়লে নিশ্চয় বিকল্প ভেবে দেখা হবে। দুঁদে অধিনায়কেরা যেমন করেন আর কী!