পুলিশ হাসপাতাল এখন।
পুলিশ হাসপাতাল এখন।
কলকাতার খাস ভবানীপুরে ৩০০ শয্যার এক সরকারি হাসপাতাল। পুরো সময়ের চিকিৎসক এক ডজনের বেশি। তাঁদের মধ্যে অন্তত দু’জনকে সারাক্ষণ পাওয়া যায়। ছ’টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে দু’জন নার্স সব সময়ের জন্য। সোম-শনি বহির্বিভাগ খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো। এক্স রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফির মেশিন, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি মজুত। সচল অপারেশন থিয়েটার। গলব্লাডার স্টোন, অ্যাপেন্ডিসাইটিসের মতো অপারেশন তো হচ্ছেই।
অথচ শনিবার দেখা গেল, সেখানে ৩০০ শয্যার মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন মাত্র ৪৮টিতে। বাকি ২৫২টি শয্যা খালি। যেখানে শহরের অন্য সরকারি হাসপাতালগুলিতে শয্যার অভাবে রোগী ভর্তি করাই যাচ্ছে না।
আসলে ২ নম্বর বেণীনন্দন স্ট্রিটে অবস্থিত এটি কলকাতা পুলিশ হাসপাতাল। ১৮৯৭-এ এই হাসপাতালের সূচনা আমহার্স্ট স্ট্রিটে। ১৯২১-এ সেটি সরে আসে বেণীনন্দন স্ট্রিটের ঠিকানায়। ঝাঁ-চকচকে চেহারা দিয়ে, এমআরআই ও সিটি স্ক্যানের মেশিন বসিয়ে ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এনে ‘জেলা হাসপাতাল’ থেকে ‘সুপার স্পেশ্যালিটি’ হাসপাতালের পর্যায়ে পুলিশ হাসপাতালকে উন্নীত করার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এ মাসেই প্রকল্পের প্রস্তাব চূড়ান্ত হয়ে জমা পড়ার কথা লালবাজারে। প্রস্তাবে নতুন ভবন তৈরির প্রয়োজনীয়তার কথা থাকছে। কার্ডিওলজিস্ট, কার্ডিওথোরাসিক সার্জন, নেফ্রোলজিস্ট, নিউরোলজিস্ট, নিউরো সার্জনদের স্থায়ী ভাবে নিয়োগ সম্ভব না হলে আংশিক সময়ের জন্য নেওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে।
এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘এমনটা হলে বাহিনীর লাভ। আলিপুরে কম্যান্ড হাসপাতালে সেনার ব্রিগেডিয়ার চিকিৎসা করাতে যান। আর আমাদের হাসপাতালে এএসআই-এর উপরে কেউ যান না। তা-ও অধিকাংশ ভর্তি হন ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, ডায়েরিয়ার জন্য।’’ কনস্টেবল থেকে ইনস্পেক্টর পর্যন্ত পদমর্যাদার পুলিশরা তিন দিনের বেশি ‘সিক লিভ’ নিলে ফিট সার্টিফিকেট নিতে ওখানে যেতে বাধ্য হন। কারণ, ওটাই নিয়ম। আর ওইটুকুতেই যেন থেমে পুলিশ হাসপাতালের উপযোগিতা। বাহিনীর অন্দরেই অনেকে ওই হাসপাতালের রিপোর্টে ভরসা করেন না।
অথচ গোটা রাজ্যে পুলিশদের একমাত্র ‘রেফারাল হাসপাতাল’ এটি। রাজ্য পুলিশ, দমকল এবং কলকাতায় থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যেরাও এর চিকিৎসা পেতে পারেন। জানুয়ারিতে ভাঙড়ে পাওয়ার গ্রিডের বিরুদ্ধে আন্দোলনে জনতার আক্রমণে জখম, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের ১২ জনের চিকিৎসা হয় ওই হাসপাতালে।
লালবাজারের এক কর্তার বক্তব্য, গ্রুপ মেডিক্লেম, স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের সুবিধা থাকায় এখন পুলিশ বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবা পাচ্ছেন। সেটাও পুলিশ হাসপাতালে ভিড় না হওয়ার অন্যতম কারণ। তাঁর কথায়, ‘‘যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহিরঙ্গ পাল্টে দিলে এখানে ভিড় হতে বাধ্য।’’