‘অতিথি’র হুলে অতিষ্ঠ শহর

নামটা বেশ গালভরা। ‘কিউলেক্স কুইনকুইফেসিয়াস’। মশার জগতে নতুন আমদানি। সুযোগ পেলেই সূচের মতো হুল ঢুকিয়ে দিচ্ছে শরীরে। আর সেই হুল ফুটতেই জ্বলে যাচ্ছে চামড়া। শিশুদের ক্ষেত্রে লাল হয়ে ফুলেও যাচ্ছে।

Advertisement

দেবদূত ঘোষঠাকুর

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৮ ০৩:২৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ফুল ফুটুক বা না ফুটুক, কোকিলের কুহু শোনা যাক বা না-ই যাক, বসন্তের শহরে কানের পাশে পোঁ পোঁ থেকে কিন্তু নিস্তার নেই! ভরা ফাল্গুনের অতিথি হয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে পড়েছে ওরা। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহর জুড়ে। দু’-একটা দাপুটে কালবৈশাখী না এলে ওদের বিদেয় হওয়ারও কোনও সম্ভাবনা নেই।

Advertisement

নামটা বেশ গালভরা। ‘কিউলেক্স কুইনকুইফেসিয়াস’। মশার জগতে নতুন আমদানি। সুযোগ পেলেই সূচের মতো হুল ঢুকিয়ে দিচ্ছে শরীরে। আর সেই হুল ফুটতেই জ্বলে যাচ্ছে চামড়া। শিশুদের ক্ষেত্রে লাল হয়ে ফুলেও যাচ্ছে।

এ দিকে, মশা রুখতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ায় ভোগা কলকাতাবাসী কখনও জানলা তো কখনও নর্দমার মুখে জাল বসাচ্ছেন। কেউ আবার মশা মারার ধূপ মজুত করছেন বাড়িতে। এ বারের শীতে তাপমাত্রা বেশ কয়েক দিন ঘোরাফেরা করেছে ১০-১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে। কিন্তু মশার উপদ্রব তাতেও কমেনি। আর ঠান্ডা কমে গিয়ে গরম পড়তেই মশার তাণ্ডবে বিকেলের পর থেকে জানলা-দরজা বন্ধ করে ঘরবন্দি হয়ে থাকছেন দমদম, সল্টলেক, নিউ টাউন, তপসিয়া-তিলজলা, কসবা, যাদবপুর, বেহালা ও টালিগঞ্জের বাসিন্দারা।

Advertisement

তবে শুধু এই মশাই নয়। ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ার মশারা চুপ করে আছে ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। পরজীবী বিশেষজ্ঞেরা অবশ্য বলছেন, তাদের দাপট শুরু হয়নি এখনও। আপাতত এই নতুন অতিথিই চিন্তার কারণ।

পতঙ্গবিদেরা জানাচ্ছেন, যে মশার দাপটে মানুষ এখন তটস্থ, বসন্তকালেই তার বংশবিস্তার সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছয়। তাই এই মশাকে বলা হয়ে থাকে ‘মার্চ মসকিটো’ বা বসন্তের মশা। খোলা নর্দমা বা পচা বদ্ধ জলাশয়ে ওই মশা লাখে লাখে ডিম পাড়ে এ সময়ে। আর পিউপা-র খোলস ছেড়ে সেই মশাই ঝাঁকে ঝাঁকে ধেয়ে আসে গৃহস্থ বাড়িতে।

যে হারে মশার উপদ্রব বেড়েছে, সেই তুলনায় ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার প্রকোপ এখনও বাড়েনি। তাই অন্য কোনও রোগের জীবাণু ওই মশার মাধ্যমে শরীরে ঢুকছে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় মানুষ। তবে পতঙ্গবিদদের আশ্বাস, এখন চার দিকে যে মশাগুলি ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেগুলির কামড়েই যা জ্বালা। বৈজ্ঞানিক তথ্য বলছে, অন্তত এ দেশে তাদের কোনও রোগ ছড়ানোর ক্ষমতা নেই। কলকাতা পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাসের ব্যাখ্যা, যে মশাগুলি এখন মানুষকে বিব্রত করছে, সেগুলি এই উপমহাদেশে অন্তত কোনও রোগের জীবাণু বহন করে না।

দেবাশিসবাবু জানাচ্ছেন, বছরের এই সময়ে কোনও এলাকা থেকে ১০০টা মশা ধরা হলে দেখা যাবে তার মধ্যে ৯৫টি মশাই ওই প্রজাতির।

বসন্তকালে ওই মশার বংশবৃদ্ধির হার এতটা বাড়ে কেন?

পুরসভার মুখ্য পতঙ্গবিদ বলেন, ‘‘বর্ষার পরে যখন ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমতে থাকে, তখন নর্দমা এবং বদ্ধ জলাশয়ের জল পচতে শুরু করে। আর সেই জলই কিউলেক্স কুইনকুইফেসিয়াস মশার ডিম পাড়ার আদর্শ পরিবেশ। জল যত পচবে, ততই বেশি করে সেখানে ডিম পাড়বে ওই মশা।’’ অক্টোবরের শেষ থেকে গোটা শীতকাল যে মশা বাড়ির মধ্যে ঘুরে বেড়ায়, সেগুলি প্রায় সবই ওই প্রজাতির। মার্চ মাসে ওই মশার বংশবিস্তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছয়।

কালবৈশাখীর বৃষ্টিতে খোলা নর্দমা আর বদ্ধ জলাশয়ের পচা জল পরিষ্কার হয়ে যায় অনেকটা। তাই তখন কমতে থাকে বসন্তের এই মশা। আর তাদের জায়গা নেয় পরিষ্কার জলে জন্মানো ডেঙ্গি আর ম্যালেরিয়ার জীবাণুবাহী দুই প্রজাতি— এডিস ইজিপ্টাই এবং অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই।

বসন্তের মশায় রোগ ছড়ায় না ঠিকই। কিন্তু ওই মশার উপদ্রব বৃদ্ধি একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে। তা হল, শহরের খোলা নর্দমা আর বদ্ধ জলাশয়গুলি নিয়ে এখনও নির্বিকার পুরসভা। শহরের যে সব অঞ্চলে খোলা নর্দমা ও বদ্ধ জলাশয়ের সংখ্যা বেশি, সেখানেই বসন্তের মশা মানুষের ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement