বছরভর সেজে থাকুক শহর

মহালয়ার সকাল থেকে এ শহর ফের মেতেছে আল্পনা-চর্চায়। তার সঙ্গেই সোশ্যাল মিডিয়া এবং মুখে মুখে ঘুরছে প্রশ্ন। ‘শুধুই শরৎ কেন? ব্রাত্য কেন বসন্ত, শীত, গ্রীষ্ম?’

Advertisement

সুচন্দ্রা ঘটক

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:২৩
Share:

এক কালে উৎসব মানেই ছিল ঘরে ঘরে আল্পনা। শুধু নামী শিল্পীরা নন, বাঙালি বাড়ির মেয়ে-বৌয়েরা পুজোর দিনে সকাল থেকে মাততেন একজোট হয়ে চালের গুঁড়ো গুলে ঘর সাজানোর আনন্দে। মহালয়ার সকাল থেকে এ শহর ফের মেতেছে আল্পনা-চর্চায়। তার সঙ্গেই সোশ্যাল মিডিয়া এবং মুখে মুখে ঘুরছে প্রশ্ন। ‘শুধুই শরৎ কেন? ব্রাত্য কেন বসন্ত, শীত, গ্রীষ্ম?’

Advertisement

এ শহরে শরৎকালটা সাজের। শিল্পের। বাঙালিয়ানা উদ্‌যাপনের। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুজোর কলকাতা এখন থিমে বিভক্ত। শহরের এক-একটা টুকরো কখনও প্রাচীন সংস্কৃতি, কখনও রকমারি সামগ্রীর প্রদর্শনী, কখনও বা কাল্পনিক দেশ। শিল্পীর সেই সব কল্পনার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে সাজ। কিন্তু সেই সাজ যেন আটকে থাকে থিমেই। থিমের জোয়ার না এলেও কি শহরবাসী স্মরণ করত বাংলার এই শৈল্পিক মুখটা?

এ বারের পুজো একটু আলাদা। ইতিমধ্যেই শহরের রাজপথ সেজেছে উৎসাহীদের হাতে আঁকা রং-বেরঙের আল্পনায়। মণ্ডপ তৈরি হোক না হোক, মহালয়া থেকে শহর এ বার আগমনীর সাজে রঙিন। দক্ষিণ কলকাতার লেক ভিউ রোডে উৎসব উদ্‌যাপনে পথে নেমেছিলেন সরকারি আর্ট কলেজের ৩২২ জন পড়ুয়া। শুরু হয়েছে দেওয়াল সাজানোও। গড়িয়াহাটে যখন শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার ভিড় বলে দিচ্ছে পুজো এসেছে, সেখান থেকে ঠিক কয়েক পা দূরে ফুটপাথের পাশে দেওয়াল-শিল্প বলছে এ সময়টা সৌন্দর্য উদ্‌যাপনের।

Advertisement

এ সব দেখেই ফেসবুক-টুইটারে পড়েছে আলোড়ন। ‘কলকাতাকে বছরভর সাজিয়ে রাখা যায় না?’ মহালয়ার সকালে সোশ্যাল মিডিয়াতেই প্রস্তাবটা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন এক কলেজপড়ুয়া। তা ঘিরে উৎসাহীদের নানা মত জমেছে কমেন্টের বাক্সে। যেমন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তনী বলেন, ‘‘আমরা তো অনেক দিন ধরেই একটু একটু করে চারকোল পেন্টিংয়ে সাজিয়ে ফেলেছি বেশ কিছু ক্লাসঘর।’’

শহর কলকাতার গতি বাড়তে শুরু করায় যেন পিছিয়ে পড়তে পড়তে হারিয়েই যাচ্ছিল ঘরোয়া সেই শিল্প। ফিরে এসেছে থিম পুজোর হাত ধরেই! দূষণ-যানজট-আবর্জনার আড়ালেই যে আরও একটা শহর আছে, দেখিয়েছে কলকাতা।

পথ জুড়ে আল্পনা দেখে ইতিমধ্যেই আনন্দে মত্ত শহর বলছে, ঢাকার মতো দেখাচ্ছে কলকাতাকে। প্রসঙ্গত, প্রতি বার পথজোড়া এমন আল্পনায় নতুন বছরকে স্বাগত জানায় ঢাকা। তারই সঙ্গে দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ানো বাঙালিরা বলছেন, যে কোনও বড় শহরের নিজস্ব চরিত্র থাকে। তা ফুটে ওঠে তার শিল্পে। সিডনির নিউ টাউনের দেওয়ালে গ্রাফিতির কথা মনে পড়ছে সদ্য অস্ট্রেলিয়া ঘুরে আসা গবেষক অনন্যা দাশগুপ্তের। কম্বোডিয়ার সিয়েম রিপ শহরে শুধু রকমারি ছাতায় রঙিন হয়ে ওঠা পাব স্ট্রিটের কথা বললেন তাঁর বন্ধু রিয়া সমাদ্দার। তাঁদের বক্তব্য, বহু শহরই সারা বছর এমন রুচিশীল নানা শিল্পে সেজে থাকে। কলকাতার শিল্প ভাবনার দেখা মেলে শুধু শরৎকালে। রোজের শহরটার এমন একটা আটপৌরে চরিত্র থাকে না কেন, প্রশ্ন তাঁদের।

শিল্পী বিমল কুণ্ডুও উৎসাহী নিজের শহরকে বছরভর সে রূপেই দেখতে চান। কিন্তু তাঁর আক্ষেপ, প্রয়োজনীয় উদ্যোগ চোখে পড়ে না প্রশাসনের তরফে। শিল্পী বলেন, ‘‘একটা কমিটি গড়ে সব শিল্পী মিলে ভাবলেই খুব সহজে বাঁচিয়ে রাখা যায় আল্পনার মতো ঘরোয়া কিছু শিল্প। তা দিয়ে যদি বছরভর সেজে থাকে শহরটা, তবে তো কথাই নেই!’’

শিল্পের উদ্‌যাপন বছরভর করতে হলে যে যথেষ্ট আঁটঘাট বেঁধে পরিকল্পনা হওয়া দরকার, সে বিষয়ে একমত শিল্পী সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ও। কিন্তু তাঁর প্রশ্ন, ‘‘সারা বছর এমন সাজগোজ চললে কি আর সেই আকর্ষণ এতটা থাকবে?’’ কিছু সাজ অল্প সময়ের জন্যই ভাল। যেমন আল্পনা। এটা তো একেবারেই উৎসবের শিল্প, বক্তব্য সুব্রতবাবুর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement