Bagri Market Fire

এক এক করে ছ’তলা, নন্দরামের স্মৃতি ফিরিয়ে আনল বাগরি মার্কেট

বাগরি মার্কেটে রবিবার দিনভর কার্যত আগুনে-দমকলে লুকোচুরি খেলা চলল। এক, দুই, তিন করে ছ’তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল আগুন। অসম লড়াইয়ে কার্যত হার মানতে হল দমকলকর্মীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১৭:৪৬
Share:

আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দমকল কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র

প্রায় এক দশকের ফারাক। কিন্তু ছবিটা প্রায় কমবেশি এক। ঘিঞ্জি এলাকায় মার্কেট। দোকানে তো বটেই, সিঁড়ি বা ঘরের সামনে যেখানে যেটুকু জায়গা, তাতেই ঠেসে সাজানো বিক্রির জিনিসপত্র। গোটা বাড়িতে তারের জঙ্গল। মধ্যরাতে সেই দাহ্য পদার্থে ঠাসা মার্কেটে আগুন। গোটা মার্কেট পুড়িয়ে ছাই করে তারপর থামল লেলিহান শিখা। ১০ বছর আগের নন্দরাম মার্কেট এবং রবিবারের বাগরি মার্কেট। জতুগৃহ দাহের ছবিতে যদিও বা সামান্য ফারাক খুঁজে পাওয়া যাবে, পরিণতি কার্যত এক।

Advertisement

জানালা দিয়ে দাউ দাউ করে বেরিয়ে আসছে আগুনের শিখা। দমকল কর্মীরা সেই দিকে হোস পাইপ তাক করে জল ছিটিয়ে চলেছেন। সেই আগুনের শিখা একটু কমে আসতে না আসতেই পাশের জানালা দিয়ে আগুনের হলকা। হোস পাইপ ঘুরে যাচ্ছে সেই দিকে। সেটা নিভতে না নিভতেই অন্য জানালায়। বাগরি মার্কেটে রবিবার দিনভর কার্যত এভাবেই আগুনে-দমকলে লুকোচুরি খেলা চলল। এক, দুই, তিন করে ছ’তলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল আগুন। অসম লড়াইয়ে কার্যত হার মানতে হল দমকলকর্মীদের। টানা চেষ্টার পরও নেভানো গেল না বাগরি মার্কেটের আগুন। নীচের তলা থেকে ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ল উপরে। দিনের শেষেও অগ্নিগ্রাস থেকে মুক্ত হল না বাগরি মার্কেট।

ছ’তলা ভবন। মাঝখানে প্রবেশ পথ। ভিতরে ছোট ছোট প্রচুর দোকানে। ভর্তি বিক্রির সামগ্রীতে। ক্যানিং স্ট্রিটের গা ঘেঁষে এই ভবনই বাগরি মার্কেটের মূল অংশ। বছরভর ব্যবসায়ীদের আনাগোনা, বেচা-কেনায় গমগম করে এই বাগরি মার্কেট। পুজোর মুখে সেই ভিড় আরও বেড়েছিল সম্প্রতি। সেই মার্কেটেই ভয়াবহ আগুন। কার্যত ভস্মীভূত পুরো মার্কেট এবং ভিতরের দোকানপাটের সামগ্রী।

Advertisement

বাগরি মার্কেটে দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। রবিবার দুপুরে। দেখুন ভিডিও।

শুরু হয়েছিল শনিবার রাত থেকে। রবিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ব্রেবোর্ন রোডের মুখ থেকেই ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছে। তারপর থেকে আর দমকল, পুলিশ বা জরুরি পরিষেবা ছাড়া কোনও গাড়ি ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। পুরো চত্বর পুলিশের দখলে। ক্যানিং স্ট্রিটে সার দিয়ে দাঁড় করানো একের পর এক দমকলের গাড়ি।

ছ’তলা ভবনের প্রবেশ পথের মাথার উপর একটি ঝুল বারান্দার মতো অংশের উপরে দাঁড়িয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন দমকলকর্মীরা। গ্যাস কাটার দিয়ে কেটে চেষ্টা চলছে ভিতরে ঢোকার। তাঁদের দু’পাশে দমকল কর্মীদের দু’টি দল জানালা দিয়ে জল ছিটিয়ে চলেছেন লাগাতার। আর এই জানালাগুলিতেই কার্যত চলছে লুকোচুরি খেলা। কখনও এক জানালা দিয়ে আগুনের শিখা বেরিয়ে আসছে, পরের মুহূর্তে অন্য জানালা দিয়ে। আধঘণ্টার মধ্যেই সব কিছু পুড়িয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ল উপরে তিন তলায়। এবার শুরু হল সেখানে জল ঢালার পালা। সেখানেও একইভাবে সব পুড়িয়ে আবার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই উঠে গেল উপরের চার তলায়। এভাবেই সন্ধ্যায় চলে এল সবচেয়ে উপরের ছ’তলায়।

আগুনের মধ্যেই জিনিসপত্র বের করে আনছেন ব্যবসায়ীরা। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: দিনভর লড়াই, এখনও জ্বলছে বাগরি মার্কেট

আর ব্যবসায়ীরা? তাঁরা কার্যত সর্বস্বান্ত, দিশেহারা। মার্কেটের সামনে ঘুরছেন। কেউ উপরের দিকে জলন্ত মার্কেটে ঠায় তাকিয়ে। দমকল কর্মীদের সামনে হাত জোর করে কারও অনুরোধ, ‘‘তাড়াতাড়ি আগুন নেভান, সেনা ডাকুন, কিছু একটা করুন স্যার, আমরা শেষ হয়ে গেলাম।’’ এই হুলস্থূলের মধ্যেই নীচের তলায় এবং পাশের ভবনগুলি থেকে জিনিসপত্র সরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ী থেকে দমকলকর্মী, সবার মুখেই ঘুরে ফিরে এসেছে বছর দশেক আগের নন্দরাম মার্কেটের স্মৃতি। নন্দরামে আগুন জ্বলেছিল প্রায় এক সপ্তাহ। তখন কার্যত একে একে সব কটি তলার সব দোকান পুড়িয়ে ছাই করে তারপর নিভেছিল আগুন। নীচে থেকে একে একে ছড়িয়ে পড়েছিল উপরের তলাগুলিতে। বাগরি মার্কেটও সেই পরিণতির দিকেই এগোচ্ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। প্রাণপণ লড়াইয়ের মাঝে দমকলকর্মীরাও সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না।

আগুন নেভানোর ফাঁকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা সেরে নিচ্ছেন দমকল কর্মীরা। —নিজস্ব চিত্র

আরও পড়ুন: নন্দরাম থেকে বাগরি, জ্বলেই চলেছে বাজার, শহরে ১০ বছরের খতিয়ান

কেন বারবার ঘিঞ্জি বাজারে আগুন লাগে, এই সব বাজারে নিজস্ব অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কেন ঠিকঠাক থাকে না, বড় আগুন নেভানোর মতো পরিকাঠামো দমকলের আছে কিনা, সেসব প্রশ্নের উত্তর আপাতত দমকলের কর্তা বা মন্ত্রী কাউকেই করার উপায় নেই। কারণ, সবারই প্রথম লক্ষ্য আগুন নেভানো। আর মুখ ফসকে কেউ বলে ফেললেও উত্তর সেই একটাই, আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসুক। কিন্তু কতক্ষণে আগুন নিভবে, সেই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement