অভিযুক্ত: সোমা বর্মণ (উপরে) ও মৌটুসি মণ্ডল। ভিডিয়ো-চিত্র
দিন ছয়েক পরে ওঁরা হস্টেলে ফিরেছেন। ক্লাস করতেও আপাতত ওঁদের কোনও সমস্যা নেই। তবে নার্সিং কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত কী হবে, তা নিয়ে ওঁদের দুশ্চিন্তা রয়েছে।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কুকুরছানা খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত দু’জন নার্সিং পড়ুয়া শনিবার হস্টেলে ফিরেছেন। সোমবার তাঁরা ক্লাসেও গিয়েছিলেন। তার প্রতিবাদে সরব হয়েছেন পশুপ্রেমীদের একাংশ।
১৩ জানুয়ারি এনআরএস-চত্বরে ১৬টি কুকুরছানার মৃতদেহ পাওয়া যায়। অভিযোগ ওঠে, তাদের পিটিয়ে মারার ঘটনায় নার্সিং পড়ুয়াদের একাংশ যুক্ত। পুলিশের পাশাপাশি হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ কমিটিও ঘটনার তদন্তে নামে। নার্সিংয়ের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া সোমা বর্মণ এবং দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া মৌটুসি মণ্ডলকে পুলিশ গ্রেফতার করে। প্রাথমিক ভাবে কলেজ ও হস্টেলে তাঁদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারিরও পরিকল্পনা হয়।
হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কেন্দ্রের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী মেনকা গাঁধী। অভিযুক্তদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল না-করলে নার্সিং কলেজের রেজিস্ট্রেশন বাতিল হতে পারে বলে হাসপাতালের কর্তাদের জানান তিনি। অভিযুক্ত পড়ুয়ারা জামিন পেলে কলেজ ও হস্টেলে ঢোকার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা তৈরি করা যাবে না, এই দাবিতে সরব হন এনআরএসের অধিকাংশ নার্সিং পড়ুয়া। শুক্রবার জামিনের শর্ত পূরণ করার পরে সোমা ও মৌসুমি আলিপুর মহিলা জেল থেকে ছাড়া পান। পরিবারের সঙ্গে তাঁরা বাড়ি ফিরে যান। শনিবার দুপুরে তাঁরা হস্টেলে যান। হস্টেল সূত্রের খবর, সেখানে তাঁদের থাকার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হয়নি। সোমবার তাঁরা কলেজেও ফের পড়াশোনার কাজ শুরু করেছেন স্বাভাবিক ভাবে।
স্বাস্থ্য দফতরের একাংশ জানান, কুকুরছানা খুনে অভিযুক্তদের হস্টেলে থাকা বা পড়াশোনার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা না-হলেও নার্সিং কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত কী হবে, তার উপরেই তাঁদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানান, কোনও পড়ুয়ার রেজিস্ট্রেশন বাতিল হবে কি না, সেই বিষয়ে কলেজ কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি তাদের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট নার্সিং কাউন্সিলে পাঠিয়েছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেবে কাউন্সিল।
তবে হাসপাতালের ভিতরে কুকুরের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পড়ুয়াদের যে সমস্যা হচ্ছে, সেটা হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ মেনে নিয়েছেন। নার্সিং পড়ুয়াদের অভিযোগ, গত তিন বছরে অন্তত ৩৫ জন পড়ুয়াকে কুকুরে কামড়েছে। আক্রান্তদের চিকিৎসার ন্যূনতম দায়িত্বও নেননি হস্টেল-কর্তৃপক্ষ। তার জেরেই পরিস্থিতি জটিল হয়েছে। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ জানান, কুকুর বেড়ে যাওয়া এবং কুকুরের কামড়ে নাজেহাল হওয়ার কোনও অভিযোগ নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছয়নি। তাই কোনও পদক্ষেপও করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে পড়ুয়াদের যাতে কোনও সমস্যা না-হয়, কর্তৃপক্ষ সে-দিকে নজর রাখবেন।