—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পুজোয় কোন মণ্ডপের প্রতিমা দর্শনে কতটা সময় লাগতে পারে— চলতি বছরে সরাসরি এই তথ্য জানাবে কলকাতা পুলিশ। এ জন্য শহরের নামী ১২টি পুজো কমিটির মণ্ডপের বাইরে ‘জায়ান্ট স্ক্রিন’ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। সুবিধামতো প্রতিমা দর্শনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ বলে শনিবার পুজো উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠকে জানান কলকাতা পুলিশের নগরপাল বিনীত গোয়েল। তিনি আরও জানান, বিসর্জনের সুবিধার্থে প্রয়োজনে জোয়ার-ভাটার সময়ও জানাবে পুলিশ। বাড়তি নজর দেওয়া হবে রাতের শহরের নিরাপত্তায়। আলাদা পদক্ষেপের পরিকল্পনা রয়েছে হেলমেটহীন বাইকচালকদের বিরুদ্ধেও।
এ দিন ধনধান্য অডিটোরিয়ামে ওই সমন্বয় বৈঠকে পুলিশের কর্তা, বিদ্যুৎ সংস্থা সিইএসসি এবং দমকল দফতরের আধিকারিকদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকেরাও। ছিলেন প্রায় ১৫০০ পুজো উদ্যোক্তা। প্রথমে কলকাতা পুলিশের প্রতিটি ডিভিশনের এক জন করে পুজো
উদ্যোক্তাকে বলার সুযোগ দেওয়া হয়। কলেজ স্কোয়ারের উদ্যোক্তা বিকাশ মজুমদার মহালয়ার আগেই রাস্তা সারাইয়ের অনুরোধ করেন। মহম্মদ আলি পার্কের পুজো উদ্যোক্তারা কবে তাঁদের পুরনো জায়গায়, অর্থাৎ মহম্মদ আলি পার্কের ভিতরে পুজো মণ্ডপ করতে পারবেন, সেই প্রশ্ন তোলেন। সুরুচি সঙ্ঘের পুজো কর্তা স্বরূপ বিশ্বাস এবং চেতলা অগ্রণীর আদিত্য দাস দুর্গাপুর সেতুতে বাড়তি নজর দেওয়ার অনুরোধ জানান। লকগেট ব্যবহার নিয়েও তাঁরা পরামর্শ দেন পুলিশকে।
তবে স্বরূপের দাবি, ‘‘মণ্ডপের বাইরে স্ক্রিন লাগিয়ে প্রতিমা দর্শনের সময় কত লাগবে, তা জানানো মনে হয় ভাল হবে না। তাতে ভিড়ের ভয়ে দর্শনার্থীরা ফিরে যেতে পারেন।’’ একই আশঙ্কা কামডহরি সুভাষপল্লির পুজো উদ্যোক্তারও। নগরপাল যদিও বলেন, ‘‘ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পরে বাইরে থেকেও অনেকে পুজো দেখতে আসছেন। ক্রিকেট বিশ্বকাপ এ দেশে হওয়ায় ভিড় বাড়তে পারে। সেখানে স্ক্রিন লাগানোর ভাবনাটি দারুণ। পরীক্ষামূলক ভাবে এ বার করা হোক। ভাল হলে পরেও ব্যবহার করা হবে।’’
আলোচনায় রামনগর পুলিশ ক্যাম্প দুর্গোৎসব কমিটি বিচালি ঘাটে বিসর্জন-সমস্যার প্রসঙ্গ তোলে। সেখানকার পুজো কর্তা রমেশ রজক বলেন, ‘‘গার্ডেনরিচের এই পুজোর প্রতিমা বিচালি ঘাটে বিসর্জন হয়। কিন্তু এই ঘাটে ভাটার সময়ে বিসর্জন করা যায় না।’’ তখনই
নগরপাল জানান, উদ্যোক্তাদের জোয়ার-ভাটার সময় জানানো হবে পুলিশের তরফেই। দমকল আধিকারিক রতন হালদার বলেন, ‘‘আগুন নিয়ে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। ডিস্ট্রিবিউশন বক্স মণ্ডপ থেকে দূরে রাখুন। মণ্ডপে জলের ব্যবস্থা রাখুন। অগ্নি নির্বাপণে জলের জুড়ি মেলা ভার।’’ সিইএসসি-র তরফে জানানো হয়েছে, বিদ্যুৎ সংযোগের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। ১১ অক্টোবর বেলা ৪টে থেকে সেই কর্মসূচি হওয়ার কথা। মণ্ডপে কাজ করা বিদ্যুৎ কর্মীদের সেখানে অংশ নিতে বলা হচ্ছে।
তবে এর মধ্যেও সবচেয়ে বেশি উঠে এসেছে পুজোর রাতে বাইক-দৌরাত্ম্যের প্রসঙ্গ। নগরপাল জানান, কয়েকদিনের মধ্যেই রাতে রাস্তায় নাকা তল্লাশি শুরু হবে। পুজোর রাতেও শহরে বাড়তি নজরদারি থাকবে। প্রচুর পুলিশকর্মী মোতায়েনের পাশাপাশি, উইনার্স দলকেও বিশেষ ভাবে ব্যবহার করা হবে। নগরপালে কথায়, ‘‘বাইকের দৌরাত্ম্য নিয়ে গত বছরর মতো এ বারেও কড়াকড়ি করা হবে। পুজোর মধ্যেও নিরাপদতম শহর হয়ে থাকবে কলকাতা।’’