—প্রতীকী চিত্র।
বন্দি-পিছু খাবারের খরচের দৈনিক বরাদ্দ বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিল কলকাতা পুলিশ। দৈনিক খরচ ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৩ টাকা ৫০ পয়সা করার কথা জানানো হয়েছিল। এর ফলে পুলিশি হেফাজতে থাকা বন্দিদের খাবারের গুণমান বৃদ্ধি পাবে বলেও দাবি করা হয়। গত নভেম্বরে সেই ঘোষণা হয়েছিল। কিন্তু নতুন বছরে এক মাস কেটে গেলেও বাস্তবে কিছুই বদলায়নি বলে অভিযোগ। এমনকি, এই দৈনিক বরাদ্দ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে কি না, তা-ও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না থানার ওসি থেকে লালবাজারের কর্তারা। স্পষ্ট উত্তর নেই খোদ কারামন্ত্রীর কাছেও।
মঙ্গলবারই বন্দিদের খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খাস বিধানসভায়। আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকী প্রশ্ন তুলেছেন, বন্দি-পিছু খাবারের জন্য কত টাকা বরাদ্দ করা হয়? উত্তরে রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি জানিয়েছেন, এক দিনে এক জন বন্দির খাবারের খরচ বাবদ বরাদ্দ ৫২ টাকা ৫৪ পয়সা। প্রত্যেক বন্দিকে প্রতিদিন দেওয়া হয় ২৫০ গ্রাম চালের ভাত। সঙ্গে থাকে ১০০ গ্রাম ডাল, ২৫ গ্রাম সয়াবিন, ৩০০ গ্রাম আনাজ, যার মধ্যে ১০০ গ্রাম আলু। এ ছাড়া, সপ্তাহে এক দিন করে ৭৫ গ্রাম ওজনের মাছ বা মাংস থাকে। একটি করে ডিমও দেওয়া হয় সপ্তাহে এক দিন। সকালে ও বিকেলে বিস্কুট এবং চা দেওয়া হয়। আর বিকেলের জলখাবার হিসাবে মুড়ির সঙ্গে বাদাম ও ডাল ভাজা দেওয়া হয় বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু নওশাদের অভিযোগ, গত বছর কলকাতা পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করার পরে ৪২ দিন পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন তিনি দেখেছেন, এই খাবারের গুণমান অত্যন্ত খারাপ। এমনকি, যে ওজনের মাছ বা মাংস দেওয়া হয় বলে মন্ত্রীর দাবি, বাস্তবের সঙ্গে তার মিল নেই বলেই নওশাদের অভিযোগ।
কিছু দিন আগে কলকাতা পুলিশও বন্দিদের খাবারের গুণমান বাড়ানোর কথা ভেবেছিল। এ ব্যাপারে সমীক্ষা শুরু করেন কলকাতা পুলিশের ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ দলের সদস্যেরা। তাঁরা দেখেন, বেশ কয়েক বছর ধরেই বন্দি-পিছু খাবারের দৈনিক বরাদ্দ ছিল ৪৭ টাকা। কলকাতা পুলিশ এলাকার এক-একটি ডিভিশনে দরপত্র ডেকে এক-একটি সংস্থাকে খাবার তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হত। বন্দি-পিছু ৪৫ টাকায় ওই সব সংস্থা খাবার তৈরি করে দিত। লালবাজারের জন্য দরপত্র পেত একটি পৃথক সংস্থা। কিন্তু দেখা যায়, ৪৫ টাকায় খাবার দেওয়ার নাম করে বরাতপ্রাপ্ত সংস্থাগুলি আরও কম দামের খাবার বাজার থেকে বন্দিদের জন্য পাঠাচ্ছে। এতেই বন্দিদের খাবার নিয়ে খারাপ ধারণা বদলানো যাচ্ছে না। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম নগরপালের (অর্গানাইজ়েশন) কাছে জমা পড়া সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই এর পরে নবান্নে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠান নগরপাল বিনীত গোয়েল। তাতেই দৈনিক বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭৩ টাকা ৫০ পয়সা করার প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেই সঙ্গেই প্রস্তাবে জানানো হয়, লালবাজারের জন্য একটি আলাদা সংস্থাকে দরপত্র ডেকে খাবার তৈরির বরাত দেওয়া হলেও থানার জন্য স্থানীয় হোটেল থেকে ওসিদের মাধ্যমে খাবার আনিয়ে দেওয়ার কথা। এতে প্রশ্ন ওঠে, দরপত্র ডেকে কোনও সংস্থাকে দায়িত্ব না দিলে পুরোটাই তো সংশ্লিষ্ট থানার কর্তাদের সদিচ্ছার উপরে নির্ভর করবে। সে ক্ষেত্রে ভাল খাবার বন্দিরা আদৌ পাবেন তো? অনেকের আবার প্রশ্ন, এতে বন্দিদের নিরাপত্তা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে না তো? দরপত্র ডাকার বদলে যে কোনও জায়গা থেকে খাবার আনাতে গিয়ে যদি খাবারে বিষক্রিয়ায় বন্দিদের প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটে, তখন কাকে ধরা হবে? পুলিশকর্তারা যদিও সদিচ্ছার উপরেই সবটা ছাড়ার কথা বলেন সেই সময়ে।
কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও দেখা যাচ্ছে, কার্যক্ষেত্রে কিছুই হয়নি। থানার কোনও ওসি-রই এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা নেই। বন্দিদের খাবারের গুণমান বাড়ানোর উদ্দেশ্য সার্থক হয়েছে কি না, এ ব্যাপারে উত্তর নেই পুলিশকর্তাদেরও। এক পুলিশকর্তা শুধু জানিয়েছেন, সব হয়ে গিয়েছে। আগামী অর্থবর্ষ থেকেই নতুন পরিকল্পনা কার্যকর হয়ে যাবে। যদিও কারামন্ত্রী অখিল এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘বরাদ্দ বাড়ানোর ভাবনা রয়েছে। তবে, এখনও কোনও ফাইলে আমি অন্তত সই করিনি।’’