ফাইল চিত্র।
রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী নেই দেখে হয়তো হেলমেট ছাড়াই ঘুরে বেড়ালেন বাইকচালক। কিছু ক্ষণ পরে দেখলেন, তাঁর মোবাইলে মেসেজ এসেছে, যেখানে হেলমেট না পরার জন্য মোটা টাকা জরিমানা করা হয়েছে পুলিশের তরফে।
আবার গভীর রাতে রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশকর্মী থাকেন না জেনে হয়তো একটি বাইকেই তিন জন উঠে বিভিন্ন দিকে ঘুরে বেড়ালেন। বাড়ি পৌঁছনোর আগেই চালকের মোবাইলে চলে এল মেসেজ। যার মূল প্রতিপাদ্য, আইন ভেঙে একটি বাইকে তিন জন চাপার জন্য চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপরের দু’টি উদাহরণ মাত্র। কিন্তু পরিকল্পনামাফিক সব কিছু চললে আগামী দিনে এমন ব্যবস্থাই বাস্তবায়িত হতে চলেছে কলকাতা পুলিশ এলাকায়। হেলমেট না পরে বাইক চালালে অথবা এক বাইকে তিন জন সওয়ারি উঠলে তা ক্যামেরাবন্দি হয়ে যাবে। বাইকের নম্বর দেখে মালিকের কাছে চলে যাবে মেসেজ।
লালবাজার সূত্রের খবর, বেপরোয়া মোটরবাইক ধরতে এই নতুন পদ্ধতির সাহায্য নিতে চাইছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। পদ্ধতিটি কী ভাবে কাজ করবে, ইতিমধ্যেই কলকাতায় এসে তা দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছে দু’টি বহুজাতিক সংস্থা। ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, বেপরোয়া বাইকচালকদের আইন মানাতে এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চাইছেন পুলিশ কমিশনার। সেই মতোই ‘ট্র্যাফিক ভায়োলেশন ডিটেকশন অ্যান্ড রিপোর্টিং’ নামে এই প্রযুক্তি শহরের রাস্তায় চালু করার চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে।
কী ভাবে কাজ করবে এই প্রযুক্তি?
লালবাজার জানাচ্ছে, বর্তমানে শহরের বিভিন্ন রাস্তা মিলিয়ে ১৩৫টি অটোম্যাটিক নম্বর প্লেট রেকর্ডিং ক্যামেরা (এএনপিআর) রয়েছে। সিগন্যাল বা লেন ভাঙার মতো ট্র্যাফিক আইন অমান্য করা গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় সেগুলির সাহায্যে। নতুন ব্যবস্থায় আরও ১১৫টি এমন ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। তার সঙ্গেই থাকছে একটি ট্র্যাফিক ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফর্ম বা সফটওয়্যার। যার কাজ হবে ভিড়ের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ভাবে হেলমেটহীন বাইকচালককে চিহ্নিত করা। আবার কোনও বাইকচালক যদি নিয়ম না মেনে দু’জন আরোহীকে নিয়ে যাতায়াত করেন, তা-ও ধরা পড়বে এই প্রযুক্তিতে। এর পরে স্বয়ংক্রিয় ভাবে ওই ক্যামেরার মাধ্যমে অভিযুক্ত মোটরবাইকটির নম্বর চলে যাবে ট্র্যাফিক কন্ট্রোল রুমের সার্ভারে। সেখান থেকে ট্র্যাফিক আইনভঙ্গকারী ব্যক্তির মোবাইলে চলে আসবে জরিমানার মেসেজ।
সূত্রের খবর, এত দিন ক্যামেরার রেকর্ডিং দেখে পুলিশর্মীরা ট্র্যাফিক আইন অমান্যকারীকে চিহ্নিত করতেন অথবা এএনপিআর ক্যামেরা সরাসরি ব্যবস্থা নিত বেপরোয়া গতির এবং সিগন্যাল অমান্যকারী গাড়ির বিরুদ্ধে। কিন্তু হেলমেটহীন চালকদের সে ভাবে চিহ্নিত করা যেত না। নতুন এই প্রযুক্তির সাহায্যে এমন বাইকচালককে শায়েস্তা করতে পারবে পুলিশ।
এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘আপাতত পুরোটাই পরিকল্পনার স্তরে আছে। তবে এই প্রযুক্তি চালু হলে পার্ক সার্কাস, মেটিয়াবুরুজ, খিদিরপুরের মতো এলাকায় যেখানে হেলমেট ছাড়া বাইক চালানোর অভিযোগ ওঠে, সেই সব চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে।’’