গত শনিবার নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফরের বিরোধিতায় মুখ্যমন্ত্রীকে ঘেরাও।—ছবি এএফপি।
নয়া নাগরিকত্ব আইন ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফরের বিরোধিতায় গত শনিবার মুখ্যমন্ত্রীকে ঘেরাও এবং ধর্মতলা অবরোধ করে রাখার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করল কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের খবর, সোমবার হেয়ার স্ট্রিট থানায় শ’দেড়েক অজ্ঞাতপরিচয় আন্দোলনকারীর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। তাতে সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা দেওয়া, হাঙ্গামা বাধানো-সহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই দিনের ঘটনার নানা ফুটেজ দেখে আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে।
নয়া নাগরিকত্ব আইন-বিরোধী আন্দোলনকারীদের উপরে পুলিশি দমন-পীড়ন নিষিদ্ধ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু একাধিক ঘটনায় দেখা গিয়েছে, এই আন্দোলনের উপরে পুলিশ ‘খড়্গহস্ত’। যাদবপুরে পড়ুয়াদের উপরে লাঠি চালিয়েছিল পুলিশ। ধর্মতলার ঘটনায় এ বার জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হল। তাই আন্দোলন সম্পর্কে সরকারের মনোভাব ঠিক কী, তা নিয়েই ধন্দে অনেকে।
পুলিশ অবশ্য বলছে, আন্দোলনকারীদের শিক্ষা দিতে নয়, বরং নিজেদের পিঠ বাঁচাতেই এই মামলা রুজু করা হয়েছে। আদালতে মামলা হলে লালবাজারের কর্তারা পরে এটা অন্তত বলতে পারবেন যে, পুলিশ পুরো নিষ্ক্রিয় ছিল না। পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘আপাতত কাউকেই গ্রেফতার করা হবে না।’’ কিন্তু অনেকেই বলছেন, জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করে কার্যত ভয় দেখিয়ে রাখল পুলিশ। যাতে ভবিষ্যতে আন্দোলন করলে জেলে যাওয়ার ভয়টা মানুষের মধ্যে কাজ করে। সূত্রের খবর, পার্ক সার্কাসে যে অবস্থান-বিক্ষোভ চলছে, সেখানেও বহু গোয়েন্দা সাদা পোশাকে নজরদারি চালাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: ক্ষতিপূরণের মামলায় হলফনামা পেশের নির্দেশ
গ্রেফতার করা হবে না বললেও অভিযোগ, নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী মহম্মদ আকিল নামে এক যুবককে মঙ্গলবার রিপন স্ট্রিট থেকে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে। লালবাজার অবশ্য জানিয়েছে, তাঁকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি। শুধু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে খোদ মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্যে ওই আইনের বিরোধিতা করছেন, সেখানে পুলিশের এই মনোভাব কেন? যাদবপুরের ঘটনার পরে প্রশাসনের শীর্ষ স্তর থেকে লালবাজারে ফোন গিয়েছিল। প্রকাশ্যে ক্ষমা চান লাঠি চালাতে নির্দেশ দেওয়া ডিসি (এসএসডি) সুদীপ সরকার। অনেকেই বলেছিলেন, এই আন্দোলনে প্রচুর বাম ছাত্র-যুব নেতা রয়েছেন। ক্ষমা না চাইলে পড়ুয়ারা রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও আন্দোলন শুরু করতেন।
আরও পড়ুন: ‘দক্ষিণপন্থী’ ভিড় কমাতে প্ল্যাকার্ড, বিতর্কে চিকিৎসক
মমতা-মোদী সাক্ষাতের পরে শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন আন্দোলনকারীদের একাংশ। তার পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় আর্জি জানিয়েছেন, মমতার নেতৃত্বে যাতে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হয়। কাজেই সে দিক থেকেও আন্দোলনের রাশ নিজেদের হাতে রাখতে এই পুলিশি মামলা কি না, সে প্রশ্ন উঠছে।