—প্রতীকী ছবি।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে চলত ক্লাস নেওয়া। শেয়ার বাজারের খুঁটিনাটি জানানো হত। কোন সংস্থার শেয়ার কিনলে মোটা টাকা রিটার্ন মিলতে পারে, দেওয়া হত তার আভাসও। আদতে এ সবের আড়ালে চলত প্রতারণার কারবার। ২৫ লক্ষ টাকার প্রতারণার অভিযোগের তদন্তে নেমে এমনই চক্রের হদিস পেল লালবাজার। বুধবার রাতে এই চক্রের সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের নাম ইন্দ্রনীল সাহা, ইমরান হোসেন, জোবিন ফ্রান্সিস থমাস, সুরজিৎ ঘোষ, আমরোজ আলম, অভিজিৎ মাঝি ও শৌভিক সাহা। ধৃতদের সঙ্গে চিন, দুবাই-সহ একাধিক দেশের যোগ মিলেছে বলে লালবাজার জানিয়েছে।
মূলত, ভাড়ার একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে প্রতারণার টাকা লেনদেন করত অভিযুক্তেরা। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ৫৯টি এটিএম, ২৯টি চেকবুক, ১০টি মোবাইল ফোন। উদ্ধার হয়েছে দুবাইয়ের এটিএম কার্ড এবং সিম। ধৃত সাত জনকে বৃহস্পতিবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে বিচারক ২৬ মে পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ২২ এপ্রিল রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা এক যুবক লালবাজারের সাইবার শাখায় অভিযোগ দায়ের করেন। আন্তর্জাতিক স্টকগুলিতে বিনিয়োগ করে মোটা রিটার্নের ফাঁদে পড়ে তাঁর ২৫ লক্ষ টাকা গায়েব হয়েছে বলে অভিযোগ। তদন্তে নেমে গায়েব হওয়া টাকা একাধিক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর বিষয়টি নজরে আসে।
পুলিশ সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে একটি অ্যাকাউন্টের খোঁজ মিলেছিল। সেই সূত্র ধরে কয়েক দিন আগে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। যদিও এর পিছনে যে বড় চক্র রয়েছে, আরও অ্যাকাউন্টের তথ্য খতিয়ে দেখতেই তা নজরে আসে পুলিশের। ঢাকুরিয়া, টবিন রোড-সহ একাধিক ব্যাঙ্কের শাখায় কখনও আট লক্ষ, কখনও সাড়ে এগারো লক্ষ প্রতারণার টাকা পাঠানো হয়েছিল। অ্যাকাউন্টগুলি খতিয়ে দেখা যায়, একটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে একটি সংস্থার যোগ রয়েছে। সেই সূত্র ধরে ইন্দ্রনীল সাহা নামে যাদবপুরের এক বাসিন্দার খোঁজ মেলে।
বুধবার সন্ধ্যায় ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, মূলত সাধারণ মানুষের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে এই প্রতারণার টাকা লেনদেন করত অভিযুক্তেরা। ইন্দ্রনীলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং লেনদেনের তথ্যের সূত্র ধরে শহর এবং শহরতলি থেকে একে একে গ্রেফতার করা হয় মহম্মদ ইমরান হোসেন, জোবিন ফ্রান্সিস থমাসকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে আসে বাকি চার অভিযুক্ত আমরোজ আলম, সুরজিৎ ঘোষ, অভিজিৎ মাঝি এবং শৌভিক সাহার নাম।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কেরলের বাসিন্দা ফ্রান্সিস থমাস পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভাড়ার অ্যাকাউন্ট জোগাড় করত। তার পরে সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রতারণার টাকা পাঠিয়ে দিত চিন, দুবাই-সহ নানা দেশে। ধৃতদের সঙ্গে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেনের যোগ মিলেছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে। এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক ভাবে এই চক্রের জাল অনেক গভীরে বলেই মনে করা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া নথি পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। ভিন্ দেশে বসে কেউ এই চক্র নিয়ন্ত্রণ করত কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’