তখন-এখন: মার্চ মাসে তোলা ছবিতে পরির অভিমুখ যা ছিল, (ডান দিকে) মঙ্গলবার ঝড়ের পরে তা ঘুরে গিয়েছে অনেকটাই। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
অবশেষে পরি ঘুরেছে! তা-ও বেশ জোরে।
ঝড়ের শহরে ক্ষয়ক্ষতি আর মৃত্যুর মাঝে এক অন্য ছবি। পরি ঘোরার বিরল দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের কয়েক জন কর্মী।
মঙ্গলবার ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯৮ কিলোমিটার। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের এক কর্তা নীতিশকুমার দাস বলেন, ‘‘ঘণ্টায় কুড়ি কিলোমিটার বেগে হাওয়া দিলেই ভিক্টোরিয়ার পরি ঘোরার কথা। কিন্তু এত ধীরে ঘোরে, যা নীচ থেকে প্রায় বোঝাই যায় না। কিন্তু মঙ্গলবার একশো কিলোমিটার বেগে শহরের উপর দিয়ে বয়ে চলা ঝড়ে ভিক্টোরিয়ার পরি বেশ জোরেই ঘুরেছিল। সকালে অফিসে এসে দেখি, পরির মুখ আগের দিনের থেকে অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। এটা বিরল ঘটনা বলা যায়।’’
ওই রাতে যখন ঝড় ওঠে, তখন ভিক্টোরিয়ার বাগানে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করছিলেন কয়েক জন কর্মী। তাঁদের এক জন জানান, ঝড়ে তখন ভিক্টোরিয়ার দক্ষিণের বাগানের এক একটা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। তখনই ভিক্টোরিয়ার চূড়ার দিকে তাকিয়ে তাঁরা দেখেন, পরি অনেকটাই ঘুরে গিয়েছে। এত দ্রুত পরীর অভিমুখ পাল্টাতে গত দু’দশকে দেখেননি বলে তাঁদের দাবি।
শুধু পরি ঘোরার মতো বিরল ঘটনাই নয়, ওই ঝড়ে বাগানে যে পরিমাণ গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে, তা-ও ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের ধিকারিকদের মতে বিরল। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পিছনের বাগানে একের পর এক গাছের বড় ডাল ভেঙে যে ভাবে লন্ডভন্ড হয়েছে, তা দেখে মন খারাপ বাগানে নিয়মিত বেড়াতে আসা যুগলদের। যেমন, শিবপুর মন্দিরতলা থেকে আসা এক যুগল জানালেন, দু’বছর ধরে একটা আকাশনিম গাছের তলায় বসতেন। ওই গাছের ছায়া ছিল তাঁদের এত দিনের আশ্রয়। এক মিনিটের ঝড়ে তছনছ সেই গাছ। অন্য যুগলের কথায়, ‘‘এখানে এসে মনে হল, স্বর্গের বাগানে যেন দৈত্য হানা দিয়েছে। পুরনো গাছ এমন ভাবে ভেঙেছে, মনে হচ্ছে গাছের হাত-পা ভেঙে গিয়েছে।’’
দীর্ঘ দু’দশক ধরে ওই বাগানে পরিচর্যা করেন সতীশচন্দ্র মণ্ডল। তিনি ভেঙে পড়া গাছের ডাল পরিষ্কার করতে করতে বলেন, ‘‘এত দিন ধরে গাছগুলোর দেখভাল করছি। কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, আকাশনিম— এই সব গাছগুলোর সঙ্গে এক রকম আত্মীয়তা হয়ে গিয়েছিল। ভীষণ মন খারাপ লাগছে। ক্ষতবিক্ষত গাছগুলোকে ফের চাঙ্গা করা এখন আমার চ্যালেঞ্জ।’’ এ সব গাছে ভিক্টোরিয়া চত্বরে দিনভর পাখির কলতান শোনা যায়। বাগান তছনছ হওয়ায় বহু পাখি আশ্রয়হীন হল। নিয়মিত ঘুরতে আসা এক যুবক দীপক রায় বলেন, ‘‘মূল ফটক দিয়ে ঢোকার পরেই রানি ভিক্টোরিয়ার মাথার ঠিক পিছনে ছিল একটা কাকের বাসা। মঙ্গলবার বিকেলেও ওই বাসা দেখেছি। বিধ্বংসী ঝড়ের পরে এসে দেখলাম সেই কাকের বাসাও উধাও।’’
বুধবার বাগানে ঘুরতে আসা অনেকেই বলেছেন, ওই কাকের বাসা ভেঙে যাওয়ায় রানির মুখেও যেন বিষন্নতার ছায়া!