পুরসভাতেই ‘নিগৃহীত’ উপ-প্রধান

নাজিমুদ্দিনের নিজের ওয়ার্ড ফতুল্লাপুর মিলনগড়ে একটি পার্ক তৈরি হচ্ছে। আট মাস আগে কাজ শুরু হলেও তা এখনও শেষ হয়নি। এ দিন গোলমালের সূত্রপাত বেলা ১২টা নাগাদ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০৩:৩৬
Share:

পাহারা: গোলমালের পরে উত্তর দমদম পুরসভার সামনে পুলিশবাহিনী। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

পুরসভা চত্বরে পুরসভারই ঠিকাদারদের হাতে মার খাওয়ার অভিযোগ তুললেন উপ-পুরপ্রধান। যার জেরে বুধবার ধুন্ধুমার বাধল উত্তর দমদম পুরসভায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি, গাড়ি ভাঙচুর, অবরোধের পাশাপাশি এক সাংসদের গাড়ি আটকে চলল বিক্ষোভও। সব মিলিয়ে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে রইল নিমতার একাংশ। শেষ পর্যন্ত র‌্যাফ ডেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। পুলিশ অভিযুক্ত দুই ঠিকাদারকে গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

পুরসভা সূত্রে খবর, শাসক দলের অন্দরে যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব রয়েছে, এই ঘটনায় সেটাই আবার বেআব্রু হয়ে পড়েছে। তৃণমূল নেতাদের একাংশের মতে, পুরপ্রধান এবং উপ-পুরপ্রধানের দ্বন্দ্বের জন্যই এত বড় কাণ্ড ঘটে গেল। এই ঘটনায় পুরপ্রধান কল্যাণ কর এবং উপ-পুরপ্রধান শেখ নাজিমুদ্দিন নাম না-করেও পরস্পরের দিকে গোলমালে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন দু’জনেই।

নাজিমুদ্দিনের নিজের ওয়ার্ড ফতুল্লাপুর মিলনগড়ে একটি পার্ক তৈরি হচ্ছে। আট মাস আগে কাজ শুরু হলেও তা এখনও শেষ হয়নি। এ দিন গোলমালের সূত্রপাত বেলা ১২টা নাগাদ। কেন কাজ শেষ হয়নি, তা জানতে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারের ঘরে যাচ্ছিলেন নাজিমুদ্দিন।

Advertisement

তাঁর অভিযোগ, নৃপেন মণ্ডল, দীনেন মণ্ডল এবং তাপস মণ্ডল নামে তিন ঠিকাদার ভাই তাঁকে জানিয়ে দেন, ওই পার্ক তৈরিতে সমস্যা
হচ্ছে। তাই তাঁরা কাজ করতে পারবেন না। নাজিমুদ্দিন তাঁদের তা লিখিত দিতে বলেন। নাজিমুদ্দিনের অভিযোগ, ওই সময়ে তিন ভাইয়ের কেউ তাঁকে পিছন থেকে ধাক্কা দেন। আর এক ভাই তাঁর কলার ধরে মারধর করেন। অপর জন তাঁকে বাইরে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন।

উত্তর দমদম পুরসভার বাইরে বেরোতেই ফের নাজিমুদ্দিনকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে উপ-পুরপ্রধানের অনুগামীরা সেখানে পৌঁছে তিন ঠিকাদারকে পাল্টা মারধর করেন বলেও অভিযোগ। ঘটনার প্রতিবাদে তাঁরা বণিক মোড়ে এম বি রোড অবরোধ করেন। এর পরে নাজিমুদ্দিন থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে সেখানে গিয়েও বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁর অনুগামীরা। পুলিশ বিক্ষোভ থামাতে গেলে দু’পক্ষের ধস্তাধস্তি হয়।

এরই মধ্যে রটে যায়, বাবুলাল নামে এক সমাজবিরোধী পুরপ্রধানের ঘরে বসে রয়েছে। নাজিমুদ্দিনের সমর্থকেরা তা শুনে পুরসভা চত্বরে ফের বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। তাঁরা পৌঁছে যান কল্যাণবাবুর ঘরের সামনেও। পুলিশ পুরপ্রধানের ঘরে গেলেও সেখানে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে উত্তেজিত জনতা পুরসভার পিছন দিকের একটি ঘর থেকে বাবুলালকে বার করে মারধর শুরু করলে পুলিশ সেখানে পৌঁছয়। বাবুলালকে উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটবৃষ্টি শুরু হয়। রাস্তায় রাখা পুলিশের তিনটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়।

খবর পেয়ে এলাকার সাংসদ সৌগত রায় সেখানে পৌঁছলে তাঁকে ঘিরেও বিক্ষোভ দেখান দলের সমর্থকেরা। সৌগতবাবু পুরসভায় বৈঠক করেন। পরে তিনি বলেন, ‘‘উপ-পুরপ্রধানকে মারধর করার ঘটনা খুবই নিন্দনীয়। পুরসভা যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’’ কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘এলাকায় একটি পুকুর ভরাট হচ্ছিল। আমি সেটিকে ফের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনছি বলে কেউ কেউ আমার উপরে বিরক্ত। বুধবারের ঘটনা তারই জেরে ঘটেছে।’’ কল্যাণবাবু জানান, ওই তিন ঠিকাদারকে বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

অন্য দিকে, নাজিমুদ্দিনের সমর্থকদের অভিযোগ, অভিযুক্ত তিন ঠিকাদারই কল্যাণবাবুর ঘনিষ্ঠ। সেই অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করেছেন কল্যাণ। উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘রবিবার পুরসভায় বৈঠক ডেকেছি। গোটা ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement