গাছ-ট্রেন-পাখি, বৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত মহানগর

শিকড় আলগা হয়েই বাড়ছে গাছের বিপদ

মঙ্গলবার রাতের ঝড়ে শহরে প্রায় শতাধিক গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনার ‘ময়না-তদন্তে’ বসে এমন কারণই খুঁজে পাচ্ছেন উদ্ভিদবিদদের একাংশ।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:১৪
Share:

শিকড়সুদ্ধ গাছ ভেঙে পড়েছে একটি বাড়ির গায়ে। বুধবার, প্রতাপাদিত্য রোডে। নিজস্ব চিত্র

পাইপলাইন বসানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থার কেব্‌ল সারাই বা বসানো, নানা প্রয়োজনে যখন তখন রাস্তা খোঁড়া চলছে। চলছে ফুটপাত খোঁড়াখুঁড়িও। আর তাতেই রাস্তার ধারে বসানো গাছের গোড়া ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। কারণ, রাস্তা কাটার যন্ত্র কেটে ফেলছে গাছের শিকড়ও। ফলে সেই শিকড় পর্যাপ্ত মাটি পাচ্ছে না, যাতে ঝড়-ঝাপ্টা সামলে দাঁড়িয়ে থাকা যায়।

Advertisement

মঙ্গলবার রাতের ঝড়ে শহরে প্রায় শতাধিক গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনার ‘ময়না-তদন্তে’ বসে এমন কারণই খুঁজে পাচ্ছেন উদ্ভিদবিদদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, গাছ উপড়ে পড়ার জন্য প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগের ঝড় অন্যতম কারণ তো বটেই। কিন্তু এমনও অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে বড় গাছ উপড়ে পড়েনি। কারণ, সেখানে গাছের শিকড় ভাল ভাবে মাটিতে প্রোথিত। যে গাছগুলি উপড়েছে, সেগুলির বেশিরভাগই রাস্তার ধারে বা ফুটপাতে বসানো, যেখানে মাটির মধ্যে ভাল ভাবে শিকড় প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে আবারও প্রশ্ন উঠেছে কলকাতা পুরসভার গাছ রোপণের নীতি নিয়ে!

বন দফতর জানিয়েছে, রাস্তা বা ফুটপাত খোঁড়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করার জন্য পুরসভার সঙ্গে কথা বলা হবে। বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ বলেন, ‘‘রাস্তা যে ভাবে কাটা হচ্ছে, তাতে গাছের শিকড়ও কেটে যাচ্ছে। ক্রমাগত ঢালাইয়ের কাজও হচ্ছে রাস্তা বা ফুটপাতে। এর ফলে গাছের গোড়া দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। রাস্তা, ফুটপাত খোঁড়ার ক্ষেত্রে যাতে সাবধানতা অবলম্বন করা যায়, তা নিয়ে পুরসভার সঙ্গে আলোচনা করব।’’

Advertisement

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ রণজিৎ সামন্ত বলেন, ‘‘শহরের অনেক জায়গায় বড় বড় গাছ রয়েছে। সেগুলো তো পড়েনি। সেই গাছগুলিই বেশি পড়েছে যেখানে গাছের শিকড় মাটিতে প্রবেশ করতে পারেনি।’’ পরিবেশকর্মী বনানী কক্কর বলেন, ‘‘অনেক সময়েই দেখি পুরকর্মীরা আসেন, তার পরে ফুটপাতের উপরে বা ইট-পাথর রয়েছে এমন জায়গাতেই গাছের চারা বসিয়ে চ‌লে যান। যাঁরা গাছ বসাচ্ছেন, তাঁদের এ কাজে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ রয়েছে কি না, সে ব্যাপারেও সংশয় রয়েছে।’’

যদিও গাছ রোপণের নীতিতে সমস্যা রয়েছে, এমন তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছেন পুর কর্তাদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, ঝড়ের যা গতিবেগ ছিল, তাতে গাছ উপড়ানো এড়ানো যেত না। এমন অনেক গাছও পড়েছে, যেগুলি মাটিতেই বসানো ছিল। পড়ে যাওয়া গাছ সরাতে মঙ্গলবার রাত থেকেই হিমশিম খাচ্ছেন পুরকর্মীরা। বুধবারও সারা দিন গাছ সরানোর অভিযান চলেছে। প্রসঙ্গত বছর দুই আগে শহরে বিপজ্জনক গাছ কত, বন দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে পরিদর্শন করে তার একটি তালিকা তৈরি করেছিল পুরসভা। কিন্তু মঙ্গলবার রাতের ঝড়ে বিপজ্জনক গাছ বা এমনি গাছ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ।

এমনিতে কালবৈশাখীর বিপর্যয় সামলানোর জন্য চলতি বছরে বিশেষ দল তৈরি রেখেছে পুরসভা। শুধু ঝড়ে গাছ পড়ার মতো বিপর্যয় সামলাতেই প্রায় ১০০ কর্মী নিযুক্ত করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মঙ্গলবার রাতের ঝড় সে হিসেবকেও গুলিয়ে দিয়েছে। মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘কর্মীরা সমানে কাজ করছেন। কিন্তু যা পরিস্থিতি, তাতে সব গাছ সরাতে আরও কিছু দিন লাগবে। তবু আমরা চেষ্টা করছি, মূল রাস্তার উপরে যেন গাছ পড়ে না থাকে।’’ তবে গাছের শিকড় যে মাটিতে ভাল ভাবে ঢুকতে পারছে না, তা মেনে নিয়েছেন দেবাশিসবাবু। তিনি আরও বলেন, ‘‘গাছের শিকড় গভীরে না থাকলে জোরে ঝড় হলেই পড়ে যাওয়ার
ভয় থাকে। নতুন গাছ বসানোর সময়ে তাই নজর দেওয়া হয়, কোন গাছের শিকড়় শক্ত করে মাটি ধরে রাখতে পারে তার উপরে।’’

শতাধিক গাছ পড়া নিয়ে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি বৃক্ষ বিশারদ নই। তবে এটুকু জানি, এলোপাথাড়ি ঝড়ে গাছ পড়ার কোনও নিয়ম থাকে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement