রাত প্রায় দেড়টা। চার দিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। তার মধ্যেই টহলরত পুলিশকর্মীরা শুনতে পান শিশু-মহিলাদের কান্নার আওয়াজ। দ্রুত টর্চ জ্বেলে পুলিশকর্মীরা চিৎকার করে জিজ্ঞাসা করেন, ‘‘আপনারা কোথায়?’’ মরিয়া চিৎকার ভেসে আসে, ‘‘আমাদের বাঁচান। সন্ধ্যায় ঝড়়ের পর থেকে আমরা ট্রেনের মধ্যে আটকে রয়েছি।’’
ঘণ্টা ছয়েক আগে মাত্র এক মিনিটের ঝড় লন্ডভন্ড করে দিয়েছে গোটা শহর। ঝড়় থামতেই মঙ্গলবার রাতে গার্ডেনরিচ রোডের বিদ্যাসাগর ট্র্যাফিক গার্ড সংলগ্ন লোহাব্রিজ এলাকায় টহল দিতে বেরিয়েছিল ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশ। তখনই আদিগঙ্গার উপরে আটকে পড়া চক্ররেলের কামরা থেকে যাত্রীদের কান্নার আওয়াজ কানে আসে। টর্চ জ্বালতেই পুলিশ দেখতে পায়, দমদমগামী একটি চক্ররেল ঠায় দাঁড়িয়ে। ট্রেনের দু’প্রান্ত মাটি ছুঁয়ে থাকলেও মাঝের কয়েকটি কামরা আদিগঙ্গার উপরে আটকে। সেখান থেকে নামতে গেলেই যাত্রীদের আদিগঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঝড়ে বহু জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। চক্ররেল লাইনের উপরেও গাছ ভেঙে পড়ে সন্ধ্যা থেকেই ট্রেন চলাচল বিঘ্নিত হয়। আটকে পড়া ট্রেনের সামনের আর পিছনের কামরার যাত্রীরা যে যাঁর মতো নেমে চলে গেলেও মাঝের চারটি কামরার প্রায় শ’খানেক যাত্রী আটকে পড়েন।
বিষয়টি প্রথম নজরে আসে, ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশ আধিকারিক সোমনাথ বিশ্বাসের। আটকে পড়া ট্রেন এবং টহলরত পুলিশের মধ্যে তখন প্রায় একশো মিটারের ব্যবধান। মাঝে আদিগঙ্গার জন্য যাত্রীদের কাছে পৌঁছতে পারছিল না পুলিশ। এলাকাটি দক্ষিণ বন্দর থানা এলাকার আওতাধীন হওয়ায় সোমনাথবাবু দ্রুত সংশ্লিষ্ট থানায় জানান। খবর পৌঁছয় লালবাজার কন্ট্রোল রুম ও আরপিএফে।
দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। প্রথমে বাহিনীর সদস্যেরা ট্রেনের দরজা, জানালা বেয়ে আটকে পড়়া যাত্রীদের কাছে বিস্কুট, জল পৌঁছে দেন। যাত্রীদের আশ্বস্ত করা হয়, রেললাইন মেরামতির কাজ চলছে। শীঘ্রই ট্রেন ছাড়বে। ইতিমধ্যে আরপিএফ পৌঁছে চক্ররেলের লাইন মেরামতি শুরু করে। রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ একশো জন যাত্রী নিয়ে ট্রেন দমদমের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
টানা ছ’ঘণ্টা আটকে পড়া এক যাত্রী, নৈহাটির বাসিন্দা কলহর বাগচীর কথায়, ‘‘প্রবল ঝড়ের পরে অন্য কামরার যাত্রীরা আমাদের ফেলে চলে গেলেন। ওঁদের কেউ তখনই পুলিশে জানালে আমাদের এই হাল হত না।’’
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, চালক ও গার্ডও যাত্রীদের সঙ্গেই ট্রেনে আটকে ছিলেন। চালক কন্ট্রোল রুমে বিষয়টি জানিয়েছিলেন। কিন্তু মঙ্গলবারের দুর্যোগে বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে আরও নানা ভাবে বিভিন্ন শাখায় রেল চলাচল বিপর্যস্ত হয়। ফলে রেলের আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারদের কার্যত এক জায়গা থেকে অন্যত্র ছুটে বেড়াতে হয়েছে। তাই তাঁদের পক্ষে দ্রুত পৌঁছনো সম্ভব হয়নি।