ইছাপুর-কাণ্ডে নজরে বিহারের দালাল

বিহারের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশিও শুরু হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৮ ১২:১২
Share:

ইছাপুর রাইফেল কারখানার এই গ্রিল ভাঙা জানলা দিয়েই চলত যন্ত্রাংশ পাচার। (ইনসেটে) উমেশ রায়। মঙ্গলবার।— নিজস্ব চিত্র।

অস্ত্র পাচারের ঘটনায় এ বার এক দালালের খোঁজ করছেন তদন্তকারীরা। বিহারের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির খোঁজে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশিও শুরু হয়েছে।

Advertisement

লালবাজার সূত্রের খবর, অস্ত্র পাচার চক্রের মূল পাণ্ডা অজয়কুমার পাণ্ডে ওরফে গুড্ডু পণ্ডিতের সঙ্গে ইছাপুর রাইফেল কারখানার অফিসার এবং এ রাজ্যের বাকি ধৃতদের মধ্যে যোগাযোগ করিয়েছিল বিহারের বাসিন্দা ওই ব্যক্তিই। এ রাজ্যে তার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। ওই সন্দেহভাজনকে অনুসরণ করেই রবিবার বাবুঘাট থেকে গুড্ডু পণ্ডিত, জয়শঙ্কর পাণ্ডে, উমেশ রায়, কার্তিক সাউকে গ্রেফতার করেন লালবাজারের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর গোয়েন্দারা। পরে তাদের জেরা করে ধরা হয় সুখদা মুর্মু এবং সুশান্ত বসুকে। ওই দু’জন অস্ত্র কারখানার জুনিয়র ওয়ার্কাস ম্যানেজার। উমেশ ও কার্তিক জঞ্জাল সাফাইয়ের ঠিকাদার। গুড্ডু এবং জয়শঙ্কর বিহারের বাসিন্দা। যারা ইছাপুর রাইফেল কারখানা থেকে বাতিল অস্ত্র কিনে বিহারের মাওবাদী এবং বাহুবলীদের বিক্রি করত। নেপালের মাওবাদীদের হাতেও ওই অস্ত্র গিয়েছে বলে

অনুমান গোয়েন্দাদের।

Advertisement

এলাকায় চোর ভোলা নামে পরিচিত উমেশকে নিয়ে মঙ্গলবার এসটিএফ-এর তদন্তকারী দল ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরিতে যায়। ফ্যাক্টরির পাঁচিলের যে জায়গা দিয়ে যন্ত্রাংশ পাচার হত, তদন্তকারীদের সেই জায়গা দেখায় সে। কী করে ফ্যাক্টরির ভিতর থেকে যন্ত্রাংশ পাচার করত ধৃতেরা, পুরোটাই পুনর্নির্মাণ করে দেখায়। সেই সময়ে একটি গ্রিল ভাঙা জানলার সন্ধান মিলেছে। ফ্যাক্টরির এই জায়গা থেকে দু’টি রিভলভার এবং একটি কার্বাইন উদ্ধার করেছেন তদন্তকারীরা। এ দিনের পুরো পুনর্নির্মাণ পর্বটাই ভিডিয়ো করা হয়। এ দিন কারখানায় ঢোকার সময়ে ভোলা সাংবাদিকদের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘‘আমি নিরপরাধ। কিছু লোক ফাঁসিয়েছে।’’ এর পরে আর তাকে কথা বলতে দেয়নি পুলিশ।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ধৃতদের জেরা করে ইছাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরির আরও কয়েক জন কর্মীর নাম উঠে এসেছে। মিলেছে বিহারেরও কিছু লোকের নাম, যাদের সঙ্গে গুড্ডুর যোগ মিলছে। এক তদন্তকারী কর্তা জানিয়েছেন, যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের জেরা করে সন্দেহজনক মনে হলে গ্রেফতার

করা হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, গত বছর পুজোর আগে ইছাপুর থেকে অস্ত্রের যন্ত্রাংশ পাচারের অভিযোগে ওয়ার্কস ম্যানেজার শম্ভু ভট্টাচার্য ও ঠিকাদার দীপক সাউ নামে দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল এসটিএফ। শম্ভু ইনস্যাস রাইফেলের যন্ত্রাংশ লুকিয়ে বাইরে আনত। দীপকের মাধ্যমে তা পাচার হত। সেই ঘটনার তদন্তে বিহারের ওই বাসিন্দার নাম প্রথম জানতে পারেন গোয়েন্দারা। ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই শম্ভুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল দীপকের। পরে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ধৃত গুড্ডুর থেকে অস্ত্রের বরাত নিয়ে এসে বিহারের ওই সন্দেহভাজন ব্যক্তি তা জানিয়ে দিত উমেশ এবং কার্তিককে। সেই মতো উমেশ ও কার্তিক ওই অস্ত্র কারখানার জুনিয়র ওয়ার্কাস ম্যানেজার সুখদা এবং সুশান্তের মাধ্যমে বাতিল অস্ত্র বাইরে এনে তা পৌঁছে দিত বিহারের ওই ব্যক্তিকে।

এ দিকে ঘটনার পরে দু’দিন কেটে গেলেও রাইফেল কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া মেলেনি। কারখানার জনসংযোগ আধিকারিক প্রদীপকুমার অগ্রবাল বলেন, ‘‘জেনারেল ম্যানেজার বুধবার ফিরলে এ বিষয়ে কথা বলা যাবে।’’

লালবাজারের এক কর্তা জানান, বিহারের ওই বাসিন্দাকে নাগালে পেলে স্পষ্ট হবে, কত অস্ত্র এবং তার যন্ত্রাংশ কারখানা থেকে বাইরে এসেছে। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ জেনেছে, গত কয়েক বছরে ওই কারখানা থেকে প্রায় দু’শো অস্ত্র বাইরে এসে দুষ্কৃতীদের হাতে পৌঁছেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement