সেই বহুতল। নিজস্ব চিত্র
প্রথমে দাবি ছিল, নির্মীয়মাণ বহুতলে শাসক দলের পার্টি অফিস তৈরির জন্য একটি ঘর দিতে হবে। সেই ঘর পাওয়ার পরে দাবি ওঠে, পাঁচ লক্ষ টাকাও দিতে হবে। কিন্তু সেই দাবি না মানায় ঠিকা সংস্থার ম্যানেজারের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল কিছু দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, ওই দুষ্কৃতীরা নির্মাণকর্মীদের মারধরের পাশাপাশি নির্মীয়মাণ ওই পাঁচতলা বাড়ি জুড়ে ভাঙচুর চালায় বলেও অভিযোগ। এই ঘটনায় যে চার দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে, তাদের মধ্যে এক জন এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবেই পরিচিত।
বুধবার বিকেলে লিলুয়ার চকপাড়া রামকৃষ্ণপল্লির ঘটনা। এলাকায় তৈরি হয়েছে আতঙ্কের পরিবেশ। কাজ বন্ধ করে চলে গিয়েছেন নির্মাণকর্মীরা। অথচ, এত বড় ঘটনার পরেও শাসক দল তৃণমূলের ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নারায়ণ মজুমদারের দাবি, দুষ্কৃতীদের হামলার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন, ‘‘বাড়িটি বেআইনি ভাবে তৈরি হচ্ছিল বলে এলাকার লোকজনই নির্মাণ বন্ধ করে দিয়েছেন। সেই জন্যই এ সব ঘটনা সাজানো হচ্ছে।’’ তবে অভিযুক্তদের এক জন যে তাঁর পরিচিত, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছেন নারায়ণবাবু। বাকি তিন জন সাত নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
পুলিশ জানিয়েছে, লিলুয়ার চকপাড়ায় একটি বহুতল নির্মাণের কাজ চলছে। এলাকার বাসিন্দারা সম্প্রতি পুরসভায় অভিযোগ করে জানান, ওই বহুতলটির দু’টি তলা বেআইনি ভাবে তৈরি করা হচ্ছে। এর পরেই পুরসভা এসে কাজ বন্ধ করে দেয়। স্থানীয় বাসিন্দা অরিন্দম রায় বলেন, “পুরসভা কাজ বন্ধ করলেও লুকিয়ে-চুরিয়ে কাজ চলছিল। আমরা গিয়ে আপত্তি করলেও ঠিকাদারের লোকজন আমল দেননি।’’ যে ঠিকাদার সংস্থা ওখানে কাজ করছে, তাদের ম্যানেজার সন্দীপ পালের দাবি, ‘‘নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনও রকম আইন ভাঙা হয়নি। স্থানীয় কিছু লোকজন এটা রটিয়েছেন। এই সব রটিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নির্মাণকর্মীদের ভয় দেখিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা চলছিল। বুধবার দুষ্কৃতীরা একেবারে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আমাদের উপরে চড়াও হয়।’’
সন্দীপবাবু বলেন, “কাজ দেখভালের জন্য তখন আমি উপরেই ছিলাম। হঠাৎ চারটে ছেলে পিস্তল নিয়ে উঠে আসে। প্রথমে ভাঙচুর করে। তার পরে আমার মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে বলে, ‘পাঁচ লক্ষ টাকা গুন্ডা-ট্যাক্স না দিলে কাজ বন্ধ রাখতে হবে। থানা-পুলিশও কিছু করতে পারবে না।’ কারণ ওরা ‘দাদার’ লোক।’’
সন্দীপবাবু জানান, স্থানীয় ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কার্যালয়ের জন্য ওই বহুতলে নীচের তলার একটি ঘর আগেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও বারবার হামলা হওয়ায় এবং প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ায় তিনি ঘটনাটি স্থানীয় কাউন্সিলরকে জানান। কিন্তু অভিযোগ, কাউন্সিলর তাঁকে কোনও সাহায্য না করে ঘর থেকে বার করে দেন।
যদিও নারায়ণবাবুর দাবি, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। ওই বাড়িতে দলীয় কার্যালয় আগে থেকেই ছিল। তবে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পুলিশকে বলেছি, তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে।’’ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। আমরা অভিযোগকারীর সঙ্গে কথা বলেছি। সব দিকই ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’