ভূমিশয্যা: গাড়ি রাখার জায়গা মেলেনি। তাই এ ভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন বিধাননগরের মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) রাজেশ চিরিমার। বুধবার, বিধাননগর পুরভবনের সামনে। নিজস্ব চিত্র
পুরসভার প্রবেশপথে সাদা চাদর পেতে শুয়ে রয়েছেন মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) রাজেশ চিরিমার। পুরভবনে ঢুকতে গিয়ে ঘটনাটি জানতে পারেন আর এক মেয়র পারিষদ সুধীর
সাহা। ঘটনাটি জানাজানি হতেই সেখানে জড়ো হয়ে যান পুরকর্মী থেকে শুরু করে তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই। ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়ের কাছে খবর যেতে তিনি ফোনে রাজেশবাবুকে সেখান থেকে ওঠার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। শেষে খোদ বিধায়ক সুজিত বসুর অনুরোধে এক ঘণ্টা পরে প্রতিবাদে দাঁড়ি টানেন ওই মেয়র পারিষদ।
বুধবার দুপুরে দেড়টা নাগাদ এমন দৃশ্য দেখেই হতবাক হলেন বিধাননগর পুরভবনের কর্মী ও সেখানে যাওয়া সাধারণ মানুষ। ওই মেয়র পারিষদের অনুগামীদের কেউ কেউ আবার বললেন, এ এক ‘অভিনব প্রতিবাদ’।
কিন্তু কেন এই প্রতিবাদ?
ওই মেয়র পারিষদের অভিযোগ, এ দিন দুপুরে পুরভবনে গাড়ি রাখতে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা তাঁকে দেন। মেয়র পারিষদ জানান, ডেপুটি মেয়রের আসতে দেরি হবে, তার জায়গায় কিছু ক্ষণ গাড়ি রাখতে দেওয়া হোক। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষী তাতে রাজি হননি। এর পরে টানা আধঘণ্টা গাড়িতে বসেছিলেন ওই মেয়র পারিষদ। তার মধ্যে তিনি পুরসভার উচ্চপদস্থ দুই আধিকারিককে ফোন করেন। কিন্তু অভিযোগ, মেয়ের পারিষদের ফোন পেয়েও তাঁরা কেউ পুরভবনের নীচে নেমে আসেননি।
রাজেশবাবুর অভিযোগ, এর আগেও একাধিক বার এমন ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, ‘‘বারবার পুর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবু এই সমস্যার সমাধান হয়নি। এক জন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার গাড়ি রাখতে পারবেন, আর আমি মেয়র পারিষদ হয়েও গাড়ি রাখতে পারছি না।’’
রাজেশবাবুর আরও অভিযোগ, ‘‘আড়াই বছর ধরে অসম্মান, অপমান সহ্য করেছি। বারবার বলেও কাজ হয়নি। বাধ্য হয়ে প্রতিবাদ জানালাম। মেয়র পারিষদ হিসেবে ন্যূনতম সম্মান আশা করি।’’ পুরসভা সূত্রের দাবি, পরে সেই নিরাপত্তারক্ষী রাজেশবাবুর কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। যদিও প্রতক্ষ্যদর্শী ও স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, পুর প্রশাসনে সমন্বয়ের কী অবস্থা, তা স্পষ্ট করে দিল এ দিনের ঘটনা।
কিন্তু কেন গাড়ি রাখা নিয়ে এত সমস্যা হল? পুরসভার একাংশের কথায়, পুরভবন চত্বরে পার্কিংয়ের পরিসর বেশি নেই। তার মধ্যে মেয়র, ডেপুটি মেয়র এবং চেয়ারপার্সন ছাড়াও এক মন্ত্রী এবং এক আমলার জন্য জায়গা রাখতে হয়। এর পরে যেমন জায়গা ফাঁকা থাকে, সেই মতো গাড়ি রাখতে পারেন বাকিরা। ফলে অনেক সময়ে মেয়র পারিষদ কিংবা কাউন্সিলরেরা পুরভবন চত্বরে গাড়ি রাখার জায়গা পান না। তাঁরা ওই চত্বরের বাইরেই গাড়ি রাখেন।
পুরসভার এক অংশের দাবি, নিরাপত্তারক্ষীর ঘাড়ে এক পাক্ষিক দোষ চাপালেই হবে না। যে জায়গায় ডেপুটি মেয়রের গাড়ি থাকে, সেখানে অন্য কাউকে গাড়ি রাখতে দেওয়ার নিয়ম নেই। পুরসভায় এই নিয়ম অনেক দিন ধরেই চলে আসছে। সেই নির্দেশই পালন করেছেন নিরাপত্তারক্ষী। যদিও রাজেশবাবু ওই রক্ষীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ এনেছেন। ওই মেয়র পারিষদের দাবি, গাড়ি কোথায় রাখা যাবে, তা জানতে চেয়েও রক্ষীর থেকে সদুত্তর মেলেনি।
পুরসভার একাংশের অবশ্য বক্তব্য, এই সমস্যা পুরভবনের অন্দরে বসেও মেটানো যেত। এই ভঙ্গিতে প্রতিবাদ করায় পুরসভার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হল।
ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঘটনাটি অনভিপ্রেত। ওই নিরাপত্তরক্ষী ক্ষমা চেয়েছেন মেয়র পারিষদের কাছে। গাড়ি পার্কিং সুষ্ঠু ভাবে করতে পুর কমিশনারের সঙ্গে কথা হয়েছে। পার্কিংয়ের ভাল ব্যবস্থা নিয়ে পদক্ষেপ করা হবে।’’
বিধায়ক সুজিত বসু বলেন, ‘‘এক জন মেয়র পারিষদের গাড়ি এ ভাবে আটকানোর অধিকার নেই কোনও নিরাপত্তারক্ষীর। পুর কমিশনারকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করার কথা বলেছি।’’